অনলাইন ভ্যাট রিটার্ন দাখিলে কুমিল্লা ভ্যাটের ৬ বার টানা শীর্ষস্থান অর্জন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
অনলাইন ভ্যাট রিটার্ন জমায় টানা ষষ্ঠবারের মতো শীর্ষস্থান অর্জনের অনন্য এক নজির সৃষ্টি করেছে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, কুমিল্লা। দেশের ১২টি ভ্যাট কমিশনারেটের মধ্যে টানা ছয়বার প্রথম হয়ে দেশে অন্যরকম এক উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে কুমিল্লা ভ্যাট। কর্মচঞ্চল কুমিল্লা ভ্যাট যেন হয়ে উঠেছে সত্যিকার কর্মবীরদের এক মিলনমেলা। জানুয়ারি’২১ মাসে এই কমিশনারেটে অনলাইনে রিটার্ন জমা হয়েছে ৯৭.০৯%। ম্যানুয়াল ও অনলাইন সহ রিটার্ন দাখিলের হার ৯৭.৩৯%।

জানা যায়, এরকম ব্যতিক্রমী সাফল্যের পিছনে রয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপায়নের অঙ্গীকারে সক্রিয় থাকা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কুমিল্লার (সিইভিসি) কর্মবিলাসী টিম। আর এ টিমকে ক্যারিশমেটিক নেতৃত্ব দিয়ে চ্যাম্পিয়ন করার মূল কারিগর হলেন কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী। যার ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন ১২টি ভ্যাট কমিশনারেটের মধ্যে গত বছরের আগস্ট থেকে জানুয়ারি’২০২১ মাস পর্যন্ত টানা ষষ্ঠবার প্রথম স্থান ধরে রাখলো অত্র কমিশনারেট।

 

কুমিল্লা সহ চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষাীপুর জেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা কমিশনারেটের মধ্যে রিটার্ন দাখিলযোগ্য প্রতিষ্ঠান (সংখ্যায়) ৯৮৬০টি। তার মধ্যে ম্যানুয়াল মাত্র ৩০টি এবং অনলাইনে ৯৫৭৩ টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সর্বমোট রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৯৬০৩টি, অনলাইনে রিটার্ন জমার শতকরা হার ৯৭.০৯%, নিবন্ধনের তুলনায় দাখিলপত্র দাখিলের শতকরা হার ৯৭.৩৯% যা অনন্য।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মাঠ পর্যায়ে নিবন্ধন ও রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে কমিশনারেটগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুস্থ এ প্রতিযোগিতায় কুমিল্লা কমিশনারেট যেন পথ প্রদর্শক হয়ে উঠেছে। উল্লেখ্য, গত মে/২০২০ এ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একই হার ছিল ২২%। বর্তমানে এনবিআরের মোট অনলাইন রিটার্ন জমার হার প্রায় ৪১.২৫%।

বর্তমান কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী গত বছরের ১৫ জুলাই যোগদানের এক মাসের মাথায় কুমিল্লা কমিশনারেট অনলাইন রিটার্ন জমায় পঞ্চম স্থান থেকে প্রথম স্থানে উঠে আসে। পরবর্তীকালে এ কমিশনারেটের অনলাইন রিটার্ন দাখিলের চিত্র পাল্টে যায়।

গত জুলাইয়ে রিটার্ন দাখিলের হার ছিল ৫১ শতাংশ। বর্তমান কমিশনার গত ১৫ জুলাই যোগদানের পর পরই মানীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়কে বাস্তবায়নকল্পে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মানিত চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমতুল মুনিমের নির্দেশনার আলোকে কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথম জুম সভার মাধ্যমে অনলাইনে রিটার্ন জমাকে অগ্রাধিকার ঘোষণা দেন। সভার পরপরই কমিশনার নিজেই তদারকি শুরু করেন। এ কমিশনারেটের ছয়টি জেলায় করদাতাদের ফোন, মোবাইলে বাল্ক এসএমএস প্রেরণসহ প্রতিষ্ঠানে তদারকি বাড়ানো হয়। ‘রিটার্ন ওয়ানস্টপ কাউন্টার’ গঠন করা হয়। এনবিআরের চেয়ারম্যানের নির্দেশমতো মুজিববর্ষে দেশকে ডিজিটাল করার প্রত্যয়ে কমিশনারেটের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন ও রিটার্ন দাখিল ডিজিটালাইজের অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কুমিল্লা ভ্যাট টিম এ লক্ষ্যে নিরন্তর ও ক্লান্তিহীন কাজ শুরু করে।

শীর্ষস্থান ধরে রাখতে অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলে কমিশনারেটের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রমরে খন্ডচিত্র।

 

টানা ষষ্ঠবার প্রথম হওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে সহকারী কমিশনার (সদর দপ্তর, কুমিল্লা) মোহাম্মদ ছালাউদ্দিন রিপন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে কুমিল্লা কাস্টমস টিম। অনলাইন ভ্যাট রিটার্ন দাখিলে কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট এর এটি শীর্ষস্থান অর্জনের ‘ডাবল হ্যাট্রিক’। এটি আপ্লুত হওয়ার মতো একটি বিষয় বটে। একটি ভালো ‘টিমওয়ার্ক’ এর মাধ্যমে এ অর্জন সাধিত হয়েছে। এ টিমকে নেতৃত্ব দিয়ে সফলতা এনে দেওয়ার অগ্রণী নায়ক আমাদের কমিশনার মহোদয়। আর এ কৃতিত্বের দাবিদার কুমিল্লা কমিশনারেটের প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী। গত ছয় মাসের মতো ভবিষ্যতেও রিটার্ন দাখিলের শীর্ষস্থান অর্জনের এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এ বিষয়ে কুমিল্লা কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার জনাব মোঃ আবদুল হাকিম বলেন, কমিশনার মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় কুমিল্লার কর্মবিলাস প্রবণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই চ্যাম্পিয়নশিপ। রাজস্ব আদায় ও অনলাইন রিটার্ন দাখিলে সবাই একযোগে কাজ করে যাচ্ছেন। কুমিল্লা টিম এ চ্যালেঞ্জকে সফলভাবে মোকাবেলা করতে পেরেছে।

কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, সাফল্য অর্জনের চেয়ে তা ধরে রাখা কঠিন। কুমিল্লার কর্মপ্রবণতা এনবিআরের সম্মানও উচ্চকিত করেছে। করোনাকালে কুমিল্লা টিমের জন্য বিষয়টি খুবই চ্যালেঞ্জের ছিল। আগেও বলেছি দলবদ্ধ প্রচেষ্টা ও প্রতিযোগিতা এ অভূতপূর্ব সাফল্যের মূল নিয়ামক এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ কর্মকর্তাদের পরিশ্রম ও সাফল্যের পিপাসা কুমিল্লা কমিশনারেটকে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ও রিটার্ন দাখিলে উপর্যুপরি সাফল্য এনে দিয়েছে।

‘আলোকিত কাস্টমস, আলোকিত দেশ’ ও ‘অতিক্রম নয় ব্যতিক্রম’ শ্লোগানে উদ্বুদ্ধ হয়ে অর্থবছরের প্রথম থেকে কাজ করছে কুমিল্লা টিম। আলোকিত কাস্টমসের মাধ্যমে গড়ে উঠবে আলোকিত বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে। সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের উন্নত বাংলাদেশ গঠনে অহর্নিশ কাজ করছে বাংলাদেশ কাস্টমস। আর সে স্বপ্ন পূরণের পথে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, কুমিল্লা এনবিআরের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছে।

Post Under