অনলাইন রিটার্ন জমায় ১২বার দেশ সেরা কুমিল্লা ভ্যাট

নিজস্ব প্রতিবেদক:
২০২১ এর আগস্ট মাসে আবারো অনলাইন রিটার্ন জমায় শীর্ষস্থানে কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট। অনলাইন ভ্যাট রিটার্ন দাখিলে সারাদেশে ১২টি ভ্যাট কমিশনারেটের মধ্যে প্রতিযোগিতায় করে এ নিয়ে বারো বার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করলো কুমিল্লা। অক্টোবরে প্রথম হ্যাট্রিক, ২০২১ এর জানুয়ারীতে ডাবল হ্যাট্রিক, এপ্রিলে ট্রিপল হ্যাট্রিক। প্রতিনিয়ত  নিজেদের ছাড়িয়ে যাবার প্রতিযোগিতায় কুমিল্লা। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের অঙ্গীকার পূরণে ১২ বার সেরা।  একটি সমন্বিত রুদ্ধশ্বাস দৌড়ের সফল পরিণতি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যশোর ভ্যাট কমিশনারেট।

করোনা মহামারীর ভয়াল থাবার মধ্যেও অর্থবছরের শেষ মাসে ৮০% প্রবৃদ্ধি নিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয় কুমিল্লা ভ্যাট। বিশ্লেষকগণ কুমিল্লার এ নতুন জাগরণ ও সাফল্যকে আশাতীত ও নজিরবিহীন হিসেবে  দেখছে। উপর্যুপরি বারো বার অনলাইন ভ্যাট রিটার্ন জমায় সাফল্যকে ‘চমক’ হিসেবে দেখছে এনবিআর। জানা যায়, মাত্র এক তৃতীয়াাংশ জনবল নিয়ে কমিশনার এ সাফল্য অর্জন করেছে।

করোনাকে ভয় নয়, মহামারী করবো জয়, মুজিববর্ষের প্রত্যয়। কথায় নয় কাজে প্রমাণ করে দেখিয়েছে কুমিল্লা কাস্টমস ও ভ্যাট কমিশনারেট। অর্থবছরের শুরুতে ‘মুজিববর্ষে ব্যতিক্রম সেবা’র প্রাধিকার পরিকল্পনা প্রণয়ন করে কুমিল্লা কাস্টমস টিম। ধারাবাহিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সারাদেশে করোনাকালে সরকারী অফিসগুলোর অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে ওঠে কমিশনারেট! সম্প্রতি রাজস্ব সভায় চেয়ারম্যান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কুমিল্লা টিমের কর্মকান্ডের প্রশংসা করে ধন্যবাদ জানান।  আগস্ট২১ মাসের রিটার্ন জমা শেষ করতে হবে ১৫তারিখের রাত ১২টার মধ্যে। তবুও থেমে থাকেনি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কুমিল্লার (সিইভিসি) কর্মবিলাসী টিম।

কিভাবে অনলাইন রিটার্ন দাখিল সফল করা যায়! মাসের ১ম তারিখ হতে কমিশনার মহোদয়ের কক্ষে মিটিং করে কর্মকর্তাদের মধ্যে কাজ ভাগ করে দেয়া হয়। অনেক কর্মকর্তা স্বেচ্ছায় গত ১০ ও ১১ তারিখ শুক্রবার ও শনিবারের সাপ্তহিক ছুটি বাতিল করে অনলাইন রিটার্ন দাখিলের কাজ অগ্রাধিকার দেন।

লক্ষ্য, কুমিল্লা ভ্যাট টিমকে বারো বারের এর মত চ্যাম্পিয়ন করা। ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের ইমেইল হতে তথ্য পাওয়া যায়। অন্যান্য কমিশনারেটগুলোও রিটার্ন দাখিলের হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আজ সংবাদ পাবার পর টিম অধিক স্পন্দিত ও  কর্মচঞ্চল।

নানা বৈরিতার মধ্যে কাজ করতে হয় টিমকে। অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন জমাদানের সময় সার্ভারে ক্রটি, বিদ্যুৎ ভোগান্তি। এবার শেষ সময়ে সার্ভার সমস্যা করায় অনলাইন রিটার্ন দাখিল নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের হিমশিমে পড়তে হয়েছে। সার্ভার সমস্যার কারণে রিটার্ন দাখিল বিঘিœত হয়। নানান সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও বসে থাকেনি এ কমিশনারেটের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে কুমিল্লা ভ্যাট অন্যান্য মাসের মতো আগস্ট মাসেও অনলাইন ভ্যাট রিটার্ন জমা করেছে।

জুলাই ২১ মাসে ড্রাপসে ৬২টি রিটার্ন জমা থাকায় রিটার্ন দাখিলের হার ছিল ৯৫.৩৩%। জুলাই মাসে ড্রাপসের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করায় আগস্ট২১ মাসের রিটার্ন দাখিলের হার দাঁড়ায় ৯৫.৮৩%। সাফল্যের পিছনে রয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপায়নের অঙ্গীকারে সক্রিয় থাকা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কুমিল্লার (সিইভিসি) কর্মবিলাসী টিম। আর এ টিমকে ক্যারিশমেটিক নেতৃত্ব দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মূল কারিগর হলেন কুমিল্লা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার জনাব মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী।

দেড়শ সদস্যের টিমকে ৫৭টি জুম সভায় প্রশিক্ষিত ও নিবিড় মনিটরিং করা হয়েছে। সর্বোপরি, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ টিম সদস্যদের পরিশ্রম ও সাফল্যের পিপাসা কুমিল্লা কমিশনারেটকে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ও অনলাইন রিটার্ন জমায় উপর্যুপরি সাফল্য এনে দিয়েছে। কমিশনারেটের অধীন ১৬টি সার্কেল ও ০৬টি বিভাগের সবাই আন্তরিক ছিল। অনলাইন রিটার্ন জমায় বিশেষ নজরদারি হিসেবে নি¤œলিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা হয়: করদাতাদের বিরক্ত না করে সার্কেল অফিস থেকে টেলিফোনে যোগাযোগ, স্বল্প সংখ্যক জনবল থেকে দক্ষদেরকে বাছাই করে গভীর রাত পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল, কর্মকর্তারা মাস্ক পড়ে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মকান্ড তদারকি, রিটার্ন দেয়নি এমন করদাতাদের কাছে মোবাইলে বাল্ক এসএমএস প্রেরণ, স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় এবং স্থানীয় ক্যাবল অপারেটরের মাধ্যমে প্রচারণা, স্থানীয় মার্কেট ও লোকালয়ে মাইকিং করে প্রচারণা, ব্যবসাস্থলে/বাসায় সশরীরে গিয়ে সম্মানিত করদাতাগণকে কাউন্সেলিং,শীর্ষ করদাতাদের উদ্বুদ্ধ করতে সৌজন্য উপহার সামগ্রী প্রদান,রিটার্ন জমা ও করদাতা সচেতনতায় ফেসবুক গ্রæপে ব্যাপক প্রচারণা, করদাতাদের রিটার্ন জমার সুবিধার জন্য শুক্র ও শনিবারও অফিস খোলা রাখা, কর্মকর্তাদেরকে অনলাইন নিবন্ধন ও রিটার্ন দাখিল সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। কর্মকর্তাদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সময় সময়ে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। এতে কর্মকর্তাদের মধ্যে স্পন্দন, কর্মস্পৃহা ও সুস্থ প্রতিযোগিতা বিরাজ করছে এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সহকারী কমিশনার (সদর দপ্তর, কুমিল্লা) মোহাম্মদ ছালাউদ্দিন রিপন বলেন, সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে নান্দনিক দৃশ্যমান প্রতিযোগিতা বিরাজ করছে। একটা ভালো টিমওয়ার্ক এর মাধ্যমে এ অর্জন। কর্মকর্তারা পরিশ্রম করেছেন। মাঠ পর্যায়ে যে সকল পরিশ্রমী কর্মকর্তা এতে ভূমিকা রেখেছেন তাঁদেরকে পুরস্কৃত করেছি ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। কুমিল্লা কমিশনারেটের নেয়া ব্যতিক্রমী উদ্যোগ কুমিল্লাকে সেরার আসন ধরে রাখতে উদ্বুদ্ধ করেছে। কুমিল্লার এই স্পন্দন অন্যান্য কমিশনারেটগুলোর মধ্যে তৈরি করেছে নতুন উদ্দীপনা। ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সামগ্রিক রিটার্ন পেশের হার বাড়ছে।

এ বিষয়ে কুমিল্লা কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ আবদুল হাকিম বলেন, রিটার্ন দাখিলে প্রথম স্থান অর্জনের পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। বৈরিতা বিদ্যুৎ বিভ্রাট, শেষ সময়ে সার্ভার হ্যাঙ হওয়া, ড্রপবক্স সমস্যা, হার্ডকপি গৃহীত না হওয়া, আইডি লকড, ধীর গতির ইন্টারনেট মহামারীর বিরুপ প্রভাবের কারনে অনলাইন রিটার্ন দাখিল বিঘ্নিত হয়। কখনো কর্মকর্তাদের হিমশিম খেতে হয়। নানামাত্রিক সীমাবদ্ধতা কুমিল্লা কমিশনারেটের জয়রথ থামিয়ে রাখতে পারেনি।

এই সাফল্য নিয়ে কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, সরকারের অগ্রাধিকার অটোমেশন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে এনবিআরে অগ্রণী ভূমিকার সফল ধারা অব্যাহত রয়েছে। কুমিল্লা টিম কর্তব্য পালনে পিছিয়ে থাকেনি। দলের এই প্রচেষ্টা ও প্রতিযোগিতা অভূতপূর্ব সাফল্যের মূল নিয়ামক। তিনি আরো বলেন, সক্ষম কর্মকর্তাদের বাছাই করে জটিলতর কাজে নিয়োগ, মনিটরিং উদ্বুদ্ধকরণ এক্ষেত্রে গতি বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। সর্বোপরি কর্মস্থলে দেশাত্মবোধ ও সেবার মনোভাব থাকা জরুরি। সারা বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের এরকম কাজের ধারা অব্যাহত থাকা উচিত। দক্ষ, সক্ষম, উপযুক্ত ও রাজস্ব বৃদ্ধিতে সকল কর্মকর্তাদের ভবিষ্যতেও পুরস্কৃত করা হবে।

Post Under