উৎসে কর আদায় খাতে কুমিল্লা কাস্টমসের পাঁচ মাসে ২৩৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়
গত বছরের চেয়ে প্রবৃদ্ধির হার ৩১%
এমদাদুল হক সোহাগ:
উৎসে কর আদায় (ভ্যাট ডিডাকটেড এট সোর্স বা ভিডিএস) ক্ষেত্রে অসাধারণ নৈপুন্য দেখিয়েছে কুমিল্লা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ২৩৫ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। যা গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের মধ্যে তুলনা করলে ৩১% বেশি। কমিশনারেটে গত নভেম্বর মাসে ৬০ কোটি টাকা উৎসে মূসক জমা হয়েছে। গত জুলাই মাসে ৩১ কোটি; আগস্টে ৩৪ কোটি; সেপ্টেম্বরে ৫৪ কোটি এবং অক্টোবরে ৫৪ কোটি টাকা জমা হয়।
বিগত অর্থবছরের জুলাই১৯ থেকে নভেম্বর ১৯ পর্যন্ত উৎসে কর্তন খাতে রাজস্ব জমা হয়েছিল ১৭৯ কোটি টাকা। আর বর্তমান অর্থবছরের জুলাই ২০২০ থেকে নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত আদায় হয়েছে ২৩৫ কোটি টাকা।
অর্থাৎ বিগত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের তুলনায় এ বছরের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩১% বা ৫৬ কোটি টাকা বেশি। করোনা মহামারির এ সময়ে যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
কুমিল্লা এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশিনারেট কুমিল্লার বর্তমান কমশিনার মো: বেলাল হোসাইন চৌধুরী যোগদান করার পরই কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পেশাগত উৎকর্ষতা দেখাতে শুরু করেছেন। তারা পেয়েছেন নতুন গতি, কর্মস্পৃহা, উৎসাহ ও উদ্দীপনা। এরই ধারাবাহিকতায় একের পর এক অর্জন ধরা দিচ্ছে কুমিল্লা কাস্টমস ও এক্সাইজের হাতে। যা দেশের অর্থনৈতিক অঙ্গনে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সামনে।
জানা যায়, সদর দপ্তর, কুমিল্লা ও ০৬টি বিভাগে (কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্সীপুর, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া) উৎসে কর্তন খাতে রাজস্ব আদায়ের জন্য পৃথক টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। কর্মকর্তারা উৎসে কর্তনকারী প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে (যেমন: সরকার বা উহার কোনো মন্ত্রণালয়, বিভাগ, বা দপ্তর, আধা-সরকারি বা স্বায়ত্বশাসিত কোন সংস্থা, রাষ্ট্রীয় মালিকানা ধীন প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, পরিষদ বা অনুরূপ কোন সংস্থা, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো বা সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কোনো ব্যাংক, বীমা কোম্পানি বা অনুরূপ আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মাধ্যমিক বা তদুর্ধ্ব পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কোনো লিমিটেড কোম্পানী) ডোর টু ডোর গমন করে হিসাব ও আদায় নিশ্চিত করে। উৎসে কর্তনকারী সকল প্রতিষ্ঠানকে উৎসে কর্তন বিধিমালা-২০২০ এর কপি সরবরাহ করা হয়; উৎসে কর্তনকারী কর্তৃক যোগানদার সেবাসহ যাবতীয় সেবার বিপরীতে উৎসে মূসক কর্তনের পদ্ধতি, কর্তনকারীর করণীয় ও দায় সম্পর্কে অবহিত করা হয়। উৎসে মূসক যথাসময়ে জমা না করা হলে সুদ ও দন্ডসহ পরবর্তীতে আদায়যোগ্য ইত্যাদি বুঝানো হয়েছে।
‘আলোকিত কাস্টমস, আলোকিত দেশ’ গড়ার লক্ষ্যে ‘অতিক্রম নয়; ব্যতিক্রম’ নীতিতে কাজ করছে কুমিল্লা কাস্টমস। কুমিল্লা কাস্টমসের রাজস্ব বৃদ্ধিতে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেগুলোর মধ্যে উৎসে কর্তন সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালা-২০২০ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ, প্রত্যেক সপ্তাহে জুম সভা করে তথ্য-উপাত্ত তুলনা ও অসংগতি পর্যালোচনা করা, ৬টি বিভাগকে মনিটরিং করার জন্যে সদর দপ্তরে ০৬টি বিশেষ ট্রাস্কফোর্স গঠন, বিভাগ ও সার্কেল হতে একাধিক বিশেষ কমিটি গঠন, উৎসে মূসক কর্তনকারীর অনুসরণীয়,করণীয় ও দায় সম্পর্কে কমিটির কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অবহিতকরণ, প্রত্যেক উৎসে কর্তনকারী প্রতিষ্ঠানের চলমান প্রকল্পের তালিকা সংগ্রহ করা, উৎসে কর কর্তনকারী দপ্তর প্রধান ও হিসাবরক্ষকের সাথে সরসারি যোগাযোগ, নির্ধারিত কোডে রাজস্ব জমা নিশ্চিত করার জন্য উৎসে কর্তনকারীকে সহায়তা, পূর্ববর্তী অর্থবছরের সকল অনাদায়ী বকেয়া উৎসে ভ্যাটের বিশেষ অনুসন্ধান ও রাজস্ব আদায়, সকল বিভাগ ও সার্কেলের ছয়জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের গমন, উৎসে কর্তন খাতে রাজস্ব বৃদ্ধির নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করা এবং উৎসে কর্তনে সকল সেরা পারফর্মারকে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার ঘোষণা।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সদর সার্কেলের রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ আবু তাহের বলেন, প্রতিষ্ঠানের তালিকা হালনাগাদ করে উৎসে কর্তন খাতের রাজস্ব আদায়ে সার্কেল পর্যায়ে একাধিক টিম গঠন করে প্রত্যেকটি উৎসে কর্তনকারী প্রতিষ্ঠানে গমন করায় বিগত পাঁচ মাসে ৬৮ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করা সম্ভব হয়েছে।
কুমিল্লা বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছালাউদ্দিন রিপন বলেন উৎসে কর্তন রাজস্ব আদায়ের জন্য বিভাগ হতে একাধিক বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। উৎসে ভ্যাট আদায়ের জন্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সশরীরে যেতে হয়। সার্কেল পর্যায়ে গাড়ি না থাকা সত্বেও কর্মকর্তাদের আন্তরিক পরিশ্রম সফল হচ্ছে।
কুমিল্লা কমিশনারেটের যুগ্ম কমিশনার মোঃ মুশফিকুর রহমান বলেন, করোনা কালে কুমিল্লা টিমে বিশেষ তৎপরতা অব্যাহত আছে। সাহস ও উদ্যম নিয়ে কর্মকর্তা- কর্মচারীগণ রাজস্ব আদায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান হতে উৎসে কর্তন খাতে বকেয়াসহ যথাযথ রাজস্ব আদায় নিশ্চিতে উদ্যোগী হওয়ায় এ খাতে রাজস্ব আহরণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
কুমিল্লা কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, উৎসে কর খাতে বিপুল রাজস্ব সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের উৎসে কর্তন সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। ভ্যাট কর্মকর্তাগণ দরজায় দরজায় গিয়ে বুঝাতে সক্ষম হওয়াতে এই খাতে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কমিশনারেটের অধীন ১৬টি সার্কেল ও ০৬টি বিভাগের সবাই আন্তরিক পরিশ্রম করছে। ভয়কে জয় করে তাঁরা থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গিয়ে কাজ করছে। দলবদ্ধ প্রচেষ্টা ও ইতিবাচক প্রতিযোগিতা-এ অভূতপূর্ব সাফল্যের কারণ। অফিস সময় ছাড়াও বাড়তি সময় কাজ করায় কর্মকর্তাদের মনোভাব প্রশংসনীয়।