এমদাদুল হক সোহাগ
কুমিল্লায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিশেষ সভায় ওয়ার্ড লকডাউন না করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ি বা ফ্ল্যাট কঠোরভাবে লকডাউনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে করোনা পরিস্থিতি প্রতিরোধ ও করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভার প্রধান অতিথি কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ওই তথ্য জানান। তিনি বলেন, কুমিল্লাকে বাঁচানোর জন্য সকলকের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা লাগবে। শুধু প্রশাসন বা এমপি বাহার চেষ্টা করলে হবেনা। সবাই যদি সবার অবস্থান থেকে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে তাহলে করোনা ভাইরাস থেকে কুমিল্লাকে বাঁচানো সম্ভব।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো: আবুল ফজল মীরের সভাপতিত্বে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বিপিএম (বার),পিপিএম, কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াতুজ্জামান, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর শওকত হোসেন।
সভায় জেলা পুলিশের পক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর সালেহীন ইমন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকার ওয়ার্ড ভিত্তিক করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও সংক্রমের চিত্র উপস্থাপন করেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নগরীর ১০ নং ওয়ার্ডে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী ও ঝুঁকিপূর্ণ। ওই ওয়ার্ডে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২৭৭জন। তারমধ্যে ৮৭জন সুস্থ্য হয়েছেন। ১০নং ওয়ার্ডকে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আক্রান্তের দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে ৩নং ওয়ার্ড। ওই ওয়ার্ডে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৮৩জন। তারমধ্যে সুস্থ্য ৬৫জন। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ওয়ার্ডটিকে হলুদ জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে নগরীল ১৩নং ওয়ার্ড। ওই ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা ১০৬জন। তারমধ্যে সুস্থ্য হয়েছেন ৩৩ জন। চতুর্থ স্থানে রয়েছে ১৮নং ওয়ার্ড। ওই ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৮জন। করোনা ভাইারাসে একজনও আক্রান্ত নন এমন একটি ওয়ার্ডের মধ্যে রয়েছে ২৫নং ওয়ার্ড। তাছাড়া, ১নং ওয়ার্ডে ২০জন, ২নং ওয়ার্ডে ১৪জন, ৪নং ওয়ার্ডে ৭জন, ৫নং ওয়ার্ডে ৭২জন, ৬নং ওয়ার্ডে ৩৯জন, ৭নং ওয়ার্ডে ৩৯জন, ৮নং ওয়ার্ডে ৪৭জন, ৯নং ওয়ার্ডে ৪৩জন, ১১নং ওয়ার্ডে ৪৭জন, ১২নং ওয়ার্ডে ৩৩জন, ১৪নং ওয়ার্ডে ১৭ জন, ১৫নং ওয়ার্ডে ১৫জন, ১৬নং ওয়ার্ডে ৮জন, ১৭নং ওয়ার্ডে ১৪জন, ১৮নং ওয়ার্ডে ৭৮জন, ১৯নং ওয়ার্ডে ৩১জন, ২০নং ওয়ার্ডে ৩জন, ২১নং ওয়ার্ডে ৬১জন, ২২নং ওয়ার্ডে ৮জন, ২৩নং ওয়ার্ডে ৫জন, ২৪নং ওয়ার্ডে ৩জন, ২৬নং ওয়ার্ডে ৪ জন, ২৭নং ওয়ার্ডে ২জন।
সভায় এমপি বাহার আরো বলেন, কেউ করোনার নমুনা দিলেই তার বাড়ি বা ফ্ল্যাট লকডাউন করে দিতে হবে। বড় বড় আবাসিক ভবনের ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট লকডাউন করে দিতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকলে চলবে না, তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদেরও হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন, করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতাকর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। আমি তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, কুমিল্লায় করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। আগামি শনিবার প্লাজমা ট্রিটমেন্টের মেশিন উদ্বোধন করা হবে। তাছাড়া, আরেকটি পিসিআর মেশিনের অর্ডার করা হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই সেটি পৌছে যাবে। আমি কুমিল্লার মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। করোনা থেকে কুমিল্লাবাসীকে বাঁচাতে প্রত্যেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল সহ প্রশাসনকে সহযোহগতা করার আহবান জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক মো: আবুল ফজল মীর বলেন, কুমিল্লা যা আজকে শুরু করে, অন্যরা তা পরে শুরু করে। কুমিল্লায় অল্প সময়ে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ও আইসিইউ বেড স্থাপন করে নজির সৃষ্টি করা হয়েছে। এখন ওই সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ করছে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার বলেন, কুমিল্লাবাসী এবং আমরা অনেক ভাগ্যবান যে করোনা মোকাবেলায় হাজী আ ক ম বাহারের মতো একজন নেতা পেয়েছি। সামনে থেকে করোনা মোকাবেলায় আমাদের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, কুমিল্লায় করোনা পরিস্থিতি খুবই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিলো। গত রমজানের ঈদকে কেন্দ্র করে লকডাউন উঠে যাওয়ায় এবং মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলার কারনে করোনায় এমন চিত্র হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন বলেন, করোনায় কোন ওয়ার্ডে কতজন আক্রান্ত বা করোনা মুক্ত সেই তথ্যগুলো ইমেইলের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে অবহিত করা হবে।
তাছাড়া, সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর শওকত হোসেন জানান, প্রতিদিন কয়জন করোনার নমুনা প্রদান করেছেন তার ওয়ার্ড ভিক্তিক তথ্যও সংশ্লিষ্ট ওয়াঢ কাউন্সিলরদের ইমেইলে পাঠানো ব্যবস্থা করা হবে। যাতে সহজে ওই রোগীর বাসা বা ফ্ল্যাট লকডাউন করা যায়।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, কুমিল্লা দোকান মালিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ, কাউন্সিলর মঞ্জর কাদের মনি, সরকার মাহমুদ জাবেদ, শাহ আলম খান, ইমরান বাচ্চু প্রমুখ।