করোনায় আক্রান্ত আলোচিত ছাত্রলীগ সভাপতি আবু কাউছার অনিক

এমদাদুল হক সোহাগ:
মহামারি করোনা ভাইরাসের সময় সাধারণ মানুষ ও সমাজের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা দেশব্যাপী আলোচিত কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু কাউছার অনিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি নিজ বাসায় আইসোলেশনে আছেন। কোভিড-১৯ নমুনা টেস্টে পজিটিভ আসার বিষয়টি আজ শনিবার ফেইসবুকে তাঁর নিজের টাইমলাইনে শেয়ার করে সকলের দোয়া চেয়েছেন।

মহামারী করোনায় মৃতদেহ দাফনে এলাকাবাসী ও পরিবার পরিজন যখন ভয়ে অনীহা প্রকাশ করে নিজেদের গুটিয়ে নেয় এবং সমাজে যখন অসুস্থ্য কুসংস্কার শুরু হয় তখন ছাত্রলীগ সভাপতি অনিক ওরা ৪১ জন নামের একটি টিম গঠন করেন। তাঁর ওই টিমের সদস্যরা দেবীদ্বার সহ জেলার বিভিন্ন স্থানে করোনা রোগীর লাশ দাফন করে সমাজের মানুষের ভেতরের ভয় ও কুসংস্কার দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
একে একে সংগঠনটি ১৪টি লাশ দাফন করেন। কুমিল্লায় ছাত্রলীগ সভাপতি আবু কাউছার অনিকই প্রথম করোনায় মৃত লাশ দাফনে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাঁর ওই উদ্যোগের পর কুমিল্লায় আরো অনেক সংগঠন করোনায় মৃত রোগী দাফনে এগিয়ে আসেন। করোনায় মৃতদেহ দাফনের জন্য হটলাইনে যখনই অনুরোধ এসছে তাঁর সংগঠন তখনই প্রশানকে অবহিত করে ছুটে গেছেন সেই অসহায় পরিবার ও লাশের দাফনে।

অপরদিকে, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের কালো ছায়া পড়লে সেই কালো ছায়া থেকে নিরাপদ রাখার জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয় কুমিল্লা জেলা। লকডাউন শুরু হওয়ার পর কর্মহীন হয়ে পড়েন নিম্ন আয়ের মানুষ। ঠিক তখনই নিম্ন আয়ের অসহায় পরিবারগুলোকে সহযোগিতা করার জন্য হ্যালো ছাত্রলীগ কর্মসূচি শুরু করেন আবু কাউছার অনিক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে সেই সেবার প্রচার-প্রসার করেন। একটি হটলাইন নাম্বারের মাধ্যমে অগনিত মানুষ সেবা পেয়েছেন। তাঁর ওই কর্মসূচিতে স্থানীয় সাংসদ রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের উৎসাহ অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতার পাশাপাশি উত্তর জেলা ও দেবীদ্বার উপজেলা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিলো। তাদের নিরলস পরিশ্রমে অল্পদিনেই ব্যাপক আলোচিত হয় সেবা কার্যক্রমটি।

তাছাড়া, করোনার কারনে কৃষি শ্রমিক না পেয়ে বিপাকে পড়া অসহায় কৃষকদের পাকা ধান কেটে মাড়াই করার বিষয়টিও হ্যালো ছাত্রলীগ কর্মসূচির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। মুক্তিযোদ্ধা, বিধবা কিষানীর ধান কেটে মাড়াই করার বিষয়গুলো ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়েও ব্যাপক আলোচিত ও প্রশংসা পায়। তাছাড়া, স্থানীয় ও জাতীয় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় স্থান পায় ছাত্রলীগ সভাপতির ও তাঁর সতীর্থদের কর্মকান্ড।

ত্রাণসামগ্রী বিতরণ, কৃষকের ধান কাটা, মুঠোফোনে চিকিৎসেবা, রক্তদান সহ পরিচ্ছন্নকর্মীরা করেনায় আক্রান্ত হয়ে পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে না পাড়ায় অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়া সরকারী হাসপাতালের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করার কাজ করেছেন ছাত্রলীগ সভাপতি ও তাঁর নেতৃবৃন্দ।

বিগত তিনমাস এভাবে নিরলস পরিশ্রম করা ছাত্রলীগ সভাপতি করোনায় আক্রান্তের খবরে বিষন্নতা নেমে আসে বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষের মাঝে। অগনিত মানুষ সামাজিক যোযোগমাধ্যম ফেইসবুকে সমবেদনা, উৎসাহ, অনুপ্রেরণা, রোগ মুক্তির দোয়া সহ মনোবল চাঙ্গা করার মতো কমেন্টস করতে দেখা যায়।
জানতে চাইলে আবু কাউছার অনিক বলেন, দেবীদ্বার হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতার কাজ করার সময় আমি প্রচন্ড ঘেমে ছিলাম। ওইদিন বিকালে আমার প্রচন্ড জ্বর আসে। বিগত চারদিন ধরে জ্বরে ভুগছি। হালকা কাশিও রয়েছে। আজ করোনার নমুনা টেস্টের ফলাফল পজিটিভ আসে।
তিনি বলেন, আমি আক্রান্ত হয়েছি বলে, ছাত্রলীগের সামাজিক কর্মকান্ড থেমে থাকবে না। আমাদের ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতাকর্মরা তা চলমান রাখবে। আমি কুমিল্লাবাসীর কাছে দোয়া চাই।

Post Under