এমদাদুল হক সোহাগ
করোনয় সংক্রমিত হবেন এই ভয়ে যখন অনেক চিকিৎসকই রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন ঠিক তখনই মহামারী করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে নিয়মিত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক মো: শাহাব উদ্দীন; এমবিবিএস, এফসিপিএস, এফআরসিএস।
তিনি ১৯৯২ সাল থেকে কুমিল্লা তথা বৃহত্তর কুমিল্লার আবাল বৃদ্ধা বনিতাকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তার চিকিৎসা সেবার সুনাম রয়েছে কুমিল্লা সহ বৃহত্তর কুমিল্লার আনাচে কানাচে।
করোনা পরিস্থিতিতেও চিকিৎসা সেবা বন্ধ করেননি একদিনের জন্য। কুমিল্লা নগরীর সিডি প্যাথ এন্ড হসপিটালে তার চেম্বারে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রোগী দেখা শুরু করেন। অধ্যাপক ডাক্তার শাহাব উদ্দীন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ছিলেন দীর্ঘদিন। এর আগে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ছিলেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের মেসিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান থাকাকালীন সময়ে সরকারি চাকুরীর বয়স শেষ হওয়ার পর অবসরে আসেন। পরবর্তীতে কুমিল্লা ইস্টার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেডিসিনের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষায় ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন।
তিনি ১৯৮২ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৮৮ সালে এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি আমেরিকান কলেজ অব ফিজিশিয়ান (এসিপি) থেকে অনারারি ফেলো অর্জন করেন। তাছাড়া ইউনাটেড কিংডম (ইউকে) এডিনবার্গ ও গ্লাসগোর রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জনস থেকে এফআরসিএস ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৯২ সালে কুমিল্লায় চিকিৎসা সেবা শুরুর আগে তিনি চাঁদপুরে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। চিকিৎসা সেবার বাইরেও তিনি সামাজিক সংগঠন রোটারী ক্লাব অব কুমিল্লার সিনিয়র সদস্য। রোটারীর মাধ্যমে সমাজের অসহায় দরিদ্র মানুষের উন্নয়নেও কাজ করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে।
গতকাল ২৭ জুলাই দুপুর দেড়টায় একজন রোগীর এক্সরে রিপোর্ট নিয়ে নগরীর বাদুরতলার সিডি প্যাথ এন্ড হসপিটালের তিন তলার ওই ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে দেখা যায়, পিপিই, মাস্ক ও ফেইস শিল্ড পড়ে রোগী দেখছেন অধ্যাপক ডা: শাহাব উদ্দীন। কয়েকজন রোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, অধ্যাপক শাহাব উদ্দীন তাদের পুরনো ডাক্তার। কোন সমস্যা দেখা দিলেই তাঁর স্মরণাপন্ন হয়ে থাকেন। আজকেও এসেছেন শরীরের নানা সমস্যা নিয়ে। ডাক্তার আন্তরিকতার সাথে দেখে প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন।
সদ্য করোনা জয়ী সিডি প্যাথ এন্ড হসপিটালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও অধ্যাপক ডাক্তার শাহাব উদ্দীনের সহকারী মো: হাসান বলেন, স্যার অনেক ভালো মনের মানুষ। তিনি গরীব ও অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন। করোনায় অনেক চিকিৎসক রোগী দেখা বন্ধ করলেও স্যার রোগী দেখা বন্ধ করেননি। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করে সতর্কতার সাথে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। তিনি কুমিল্লাতে দীর্ঘদিন সুনামের সাথে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
রোটারী ক্লাব অব কুমিল্লার বর্তমান প্রেসিডেন্ট রোটা. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, অ্যধাপক ডাক্তার শাহাব উদ্দীন কুমিল্লার সিনিয়র একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। দীর্ঘদিন কুমিল্লায় তিনি চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কুমিল্লায় ভালো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের প্রসঙ্গ আসলেই ডাক্তার সাহাব উদ্দিনের নাম উঠে আসে। তিনি আমাদের ক্লাবের সিনিয়র সদস্য। রোটারীর সকল ভালো কাজে তাঁর অংশগ্রহণ থাকে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবেও তিনি নিজেকে লুকিয়ে না রেখে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রেখেছেন। আমরা তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
কুমিল্লার সুপরিচিত ইতিহাসবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট গোলাম ফারুক বলেন, ডাক্তার শাহাব উদ্দীন একজন মেধাবী মানুষ। অত্যন্ত ধীরস্থির ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেন। বিতর্কের উর্ধে থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ কুমিল্লায় চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর চিকিৎসায় যাদু আছে। সরকারী চাকুরী শেষ করেছেন অনেক আগেই। এই বয়সে এসওে নিজের ঝুঁকির কথা চিন্তা না করে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন যা কিনা প্রশংসার দাবিদার। চারিদিকে চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থা নিয়ে চিকিৎসকরা যখন মানুষের কাছে যখন প্রশ্নবিদ্ধ ঠিক তখনই ডাক্তার শাহাব উদ্দীনের চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের অনেক আশান্বিত করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, অধ্যাপক ডাক্তার শাহাব উদ্দীন বলেন, বিপদের সময় যদি রোগীদের পাশে না থাকি তাহলে তারা যাবে কোথায়? মানবিক বিষয় চিন্তা করে আমি রোগী দেখা চালিয়ে যাচ্ছি। চিকিৎসকদের উচিত অনীহা প্রকাশ না করে নিজেকে নিরাপদ রেখে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাওয়া।