এমদাদুল হক সোহাগ:
করোনা নিয়ে সামাজিক লোকলজ্জার ভয় এখনো কাজ করছে মানুষের মাঝে। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুরুতেই করোনাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
করোনার উপসর্গ বা লক্ষন থাকা স্বত্বেও নমুনা পরীক্ষা করছেন না অনেকে। বাসায় থেকে গোপনে চিকিৎসা চালাচ্ছেন। আবার অনেকে করোনা পরীক্ষায় ফলাফল পজিটিভ আসলেও সেটি গোপন রাখার চেষ্টা করছেন। প্রচন্ড ঝুঁকি আছে জেনেও বাসায় থেকে নিজে নিজে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকে আবার শ্বাসকষ্টে বিপদে পড়ার শঙ্কায় অক্সিজেন সিলিন্ডার বাসায় মজুত করেছেন। সৃজনাল জ্বর, সর্দি কাশিকে আবার অনেকে করোনা মনে করে করেনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় এমন ওষুধ সেবন করছেন যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তবে, নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ এসেছে সেটি জানিয়ে দোয়া চেয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি। অনেকে আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেও পজিটিভ আসার খবর জানিয়ে দোয়া চাইতে দেখা গেছে।
কুমিল্লার বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী আলী আকবর মাসুম বলেন, করোনা মহামারির শুরুতে রোগটিকে যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখার কথা ছিলো সেটি হয়নি। স্বাস্থ্য বিভাগের যথাযথ নিয়ন্ত্রণের অভাব ছিলো। চিকিৎসা না পাওয়ার বিষয়গুলোর কারনেই হযবরল অবস্থা সৃষ্টি সহ সামাজিক জড়তা তৈরি হয়েছে। করোনা মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোতে দুর্বলতা ছিলো বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
আশিকুর রহমান (ছদ্দনাম) নামের নগরীর একজন বাসিন্দা বলেন, তার ছয়তলা বাড়ির একটি ফ্লোরে একই পরিবারের চারজন করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে। একজন করোনার নমুনা পরীক্ষা করালেও বাকীরা করেনি। যিনি করেছেন তিনিও রিপোর্ট প্রকাশ করেননি। সামান্য জ্বর হয়েছিলো, ভালো হয়েগেছেন এসব কবথা বলে, বাসার বাহিরে বাজারে গিয়েছেন। মাস্ক না পড়ে ছাদে ঘুরেছেন। পরদিনই তার সর্দি, কাশি, গলাব্যথা দেখা দেয়। অপরদিকে তার স্ত্রীরও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
র্ইসকোর্স এলাকার আরেকজন বলেন, রেইসকোর্স এলাকায় প্রচুর মানুষ করোনা উপসর্গ নিয়ে নিজে নিজে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাড়ি লকডাউন বা সামাজিক হেয় প্রতিপন্ন হেব এমন ভয়ে করোনা টেস্ট করাচ্ছেন না।
তবে, কীট সংঙ্কট সহ বিভিন্ন কারনে করোনা টেস্ট করাতেও যে বিড়ম্বনা রয়েছে সে কারনেও অনেকে টেস্ট করতে চাচ্ছেননা। রেইসকোর্স এলাকার বাসিন্দা সরকারি ব্যাংকের অফিসার সহিদুজ্জামান ছোটন করোনা উপসর্গে নিয়ে টেস্ট করাতে অনেক বিড়ম্বনার পড়তে হয়। অনেক চেষ্টা তদবিরের পর তাঁর করোনা টেস্ট হয় এবং ফলাফল পজিটিভ আসে। বর্তমানে তিনি বাসায় আইসোলেশনে আছেন।
নগরীর তালপুকুরপাড় এলাকার সিলভার জাকির প্যালেসের মোশাররফ হোসেন ইকবাল বলেন, আমার পাশের ফ্ল্যাটের একজন বীমা কোম্পানীর কর্মকর্তা সস্ত্রীক অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। আমি নিজে সিটি কর্পোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী মেবাইলে এসএমএস সহ কথা বলেও সিরিয়াল পাইনি। পাঁচ ছয়দিন অপেক্ষা করেও কোন রেসপন্স পাননি।
অপরদিকে, গ্রামের মানুষের মাঝে করোনা হবেনা বলে তাদের ভেতর যে চিন্তা চেতনা লালিত হয়েছে তাঁরও অনেকটা প্রভাব পড়েছে শহরে। করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষ করোনায় আক্রান্ত বেশি হয়েছে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান কুমিল্লায় অতি পরিচিত প্রবীন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সাহাব উদ্দিন বলেন, করোনা একটি নতুন ও ছোঁয়াছে রোগ। এই রোগের স্বীকৃত কোন ওষুধ নেই। লক্ষণ বা সিম্পটমস অনুযায়ি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। করোনার নমুনা পরীক্ষা ছাড়া ওষুধ সেবন বা বাসায় বসে থাকা চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্মত না। লক্ষণ বা উপসর্গ আছে কিন্তু বাসায় বসে থাকাটা ঝুঁকিপূর্ণ। কারন যেকোন মুহুর্তে অক্সিজেন সিচুরেশন কমে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অসাবধানতার কারনে যে কারোরই করোনা হতে পারে। করোনাকে অন্যভাবে দেখার সুযোগ নেই। সব ওষুধেরই কম বেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। অনুমানের উপর ওষুধ খাওয়া ক্ষতিকর।