কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শালিস বৈঠক চলাকালীন সময়ে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ৯জনকে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুই পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এলাকাবাসী, পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে, কসবা উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের চান্দাইসার গ্রামের সফিক মিয়ার ছেলে সবুজ মিয়া (২০) এর সাথে একই ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামের মিন্টু মিয়ার ছেলে শরীফ মিয়া (১৯) এর সাথে সম্প্রতি একটি নারী সংক্রান্ত ঘটনায় সংঘর্ষ হয়। ওই বিরোধ মিটাতে এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং গ্রামবাসীর উদ্যোগে চান্দাইসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি শালিস বৈঠকে বসেন।
সাবেক ইউপি সদস্য মো. মতিন মিয়ার সভাপতিত্বে এং বিল্লাল হোসেনের সঞ্চালনায় বৈঠকে ইউপি সদস্য রাশেদুল ইসলাম রাসেলসহ এলাকার সাহেব সর্দারগন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের এক পর্যায়ে মজলিশপুর গ্রামের মো. হোসাইন বক্তব্য দেওয়ার সময় ক্ষিদিরপুর গ্রামের এমরান সরকার বাঁধা দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে দুই গ্রামের লোকজনদের মধ্যে সংর্ঘষ শুরু হয়।
পরে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় ঘন্টাব্যাপী চলে এ সংর্ঘষ। খবর পেয়ে কসবা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘন্টাব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনে আনেন। এ সময় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৫০জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে থেকে গুরুতর আহত হাসান মিয়া (২৫), রাইহান (২০), মো. সুজন (২৬ ), হামদু মিয়া (৭০), আনোয়ার হোসেন (৫৪), ইয়ামিন (৩৬), ফারুক হোসেন (৩৬), সুচী আক্তার (১৯), তানজিন মিয়া (২০) কে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অপর আহতদের কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ আশে-পাশের বিভিন্ন সরকারি ও বে-সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সংর্ঘষ চলাকালীন সময়ে দোকান পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি-ঘর ভাংচুর করা হয়েছে।
এ ঘটনায় মজলিশপুর গ্রামের ফারুক হোসেন বাদী হয়ে চান্দাইসার গ্রামের ৯জনের বিরুদ্ধে এবং চান্দাইসার গ্রামের সুজন মিয়া বাদী হয়ে মজলিশপুর গ্রামের ২৪জনের বিরুদ্ধে দুইটি অভিযোগ দায়ের করেছে।
চান্দাইসার গ্রামের সবুজ মিয়ার বড় ভাই সুজন মিয়া বলেন, মজলিশপুর গ্রামের শরীফ মিয়া ও তার সাথে আরো ১০/১৫জন লোক নিয়ে আমার ভাই সবুজ মিয়াকে মারধোর ও কুপিয়ে জখম করেছে।
মজলিশপুর গ্রামের হামদু মিয়া বলেন, চান্দাইসার গ্রামের লোকজন বৈঠক চলাকালীন সময়ে আমাদের গ্রামের লোকজনদের উপর সব দোষ চাপিয়ে দেয়। এ সময় তাদের সাথে কথাকাটাকাটি হলে তারা দা ও লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের উপর আক্রমন চালায়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
বিনাউটি ইউনিয়নের স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার রাশেদুল ইসলাম রাসেল বলেন, একটি নারী সংক্রান্ত ঘটনা নিয়ে সুবজ ও শরীফ মিয়ার সাথে সংঘর্ষ হয়। ওই বিরোধ মিটাতে শালিস বৈঠক চলকালীন সময় দুই পক্ষের সমর্থদের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ হয়। এ সময় দুই পক্ষই তাদের গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ে। এতে কমপক্ষে ৫০জন আহত হয়েছে।
কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. জাকিয়া সুলতানা বলেন, নয়জনকে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল।
কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাজু আহমেদ বলেন, দুই গ্রামবাসীর লোকজনদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনেছে। দুই পক্ষ দুটি অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগ দুটি প্রাথমিক তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।