কসবায় সম্পত্তির ভাগ, পেনশন ও ভাতার দাবিতে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী-সন্তানের সংবাদ সম্মেলন

মোহাম্মদ শাখাওয়াৎ হোসাইন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় প্রয়াত মনির আহাম্মদ খাঁন নামের এক বীর প্রতীকের দ্বিতীয় স্ত্রী তার স্বামীর সম্পত্তির ভাগ, পেনশন, মুক্তিযোদ্ধা ও বীর প্রতীক ভাতা পাওয়ার দাবিতে শনিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় স্বামীর গ্রামের বসত ভিটায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মোছা. আখলিমা আক্তার জানান, তার প্রয়াত খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা স্বামী মনির আহাম্মদ খাঁনের প্রথম স্ত্রী বেনুয়ারা বেগম ২০০৬ সালের মার্চ মাসে মারা যান। মনির আহাম্মদ খান ঢাকা মীরপুর মোল্লাপাড়ায় ৩৫১নং নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। ওই বাড়িটি মনির আহাম্মদ ও তার প্রথম স্ত্রীর নামে যৌথ মালিকানা ছিল। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তাদের সন্তান ইমরান খান মায়ের নামে থাকা বাড়িটি বিক্রি করে বাপের নামে থাকা জমিটিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করে মনির আহাম্মদ খানকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। ছেলের নিকট নিগৃহীত হয়ে তিনি কসবা উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের দেলী গ্রামে পৈত্রিক ভিটিতে চলে আসেন।
তিনি বলেন মনির আহাম্মদ খাঁন ২০০৮ সালে আমাকে বিয়ে করেন। ২০১১ সালে মুনিয়া খানম নামে আমাদের একমাত্র সন্তানের জন্ম হয়। ২০১৩ সালে ৭ সেপ্টেম্বর আমার স্বামী মনির আহাম্মদ খাঁন মৃত্যুবরণ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করে আসছিলাম।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, তার সৎপুত্র ইমরান খান মুক্তিযোদ্ধা ট্রাস্টের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে তার মুক্তিযোদ্ধা ভাতার ফাইল গায়েব করে দেন এবং মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নিজের নামে করে নেন। তিনি কল্যান ট্রাস্টের কর্মকর্তাদের সাথে এ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করলে কল্যান ট্রাস্টের কর্মকর্তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন সময়ে ১২টি আপত্তি উত্থাপন করে। সবগুলো আপত্তি নিষ্পত্তি করা হলেও বিভিন্ন কাগজপত্রের অজুহাতে তাকে হয়রানি করছেন বলেও অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আখলিমা আক্তার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এ সময় খাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির আহাম্মদ খান, দেলী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল বাশার, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবি সমিতির সদস্য এডভোকেট মো. সালাহ উদ্দিন আহাম্মদ খান, খাড়েরা ইউপি সদস্য মো. খোকন মিয়াসহ দেলী গ্রামের অর্ধ শতাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো জানান, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমার সৎপুত্র ইমরান খান আমার নিকট থাকা স্বামীর খালাশী বইটি জোর পূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে যান এবং ভাতাগুলো উত্তোলন করে নিজেই ভোগ করছে। আখলিমা আক্তার আরো অভিযোগ করেন, স্বামীর পেনশন, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও বীর প্রতীকের ভাতা দাবি করলে ইমরান খান আমাকে ও আমার মেয়েকে প্রাণনাশের হুমকি ও নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখায়। এ বিষয়ে গতকাল কসবা থানায় আমার ও আমার মেয়ের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে কসবা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করি। কসবা থানা ডায়েরি নং- ১৫৪, তারিখ ০৩/০৯/২০২১ইং। আখলিমা আক্তার স্বামীর গ্রামের ভিটি বাড়িতে একমাত্র শিশু কন্যাকে নিয়ে প্রাণনাশের আশংকায় আতংকের মধ্যে অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আখলিমা আক্তার তার স্বামীর পেনশন, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও বীর প্রতীকের ভাতা এবং স্বামীর সম্পত্তির অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মনির আহাম্মদ খানের একমাত্র কন্যা ৫ম শ্রেণিতে পড়–য়া মুনিয়া খানম কান্নাজড়িত কন্ঠে জানায়, অর্থাভাবে তার লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম। সে তার পিতার সম্পত্তি, পেনশন, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বীর প্রতীক ভাতার ন্যায্য অধিকার দাবি করে।
সংবাদ সম্মেলনে দেলী গ্রামের যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম খান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার জানান, ছেলে কর্তৃক নিগৃহীত হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা মনির আহাম্মদ খান গ্রামের পৈত্রিক বাড়িতে চলে আসেন। ২০০৮ সালে তিনি আখলিমা আক্তারকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে মুনিয়া খানম নামে ১০ বছরের একটি শিশুকণ্যা রয়েছে। তারা আখলিমা ও তার শিশুকণ্যার ন্যায্য দাবি পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহŸান জানান।
এ বিষয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে আখলিমা আক্তারের সৎ পুত্র ইমরান খানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন আখলিমা আক্তার নামে কাউকে চিনি না। আমার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন বলে আমার জানা নেই। তিনি বলেন এটা একটা ষড়যন্ত্র।

 

Post Under