এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
মাত্র ছ’মাস আগে করেন বিয়ে। ঘরে অন্তসত্ত্বা স্ত্রী। অনাগত সন্তানের মুখটি আর দেখা হলোনা হতভাগ্য পিতার। তার আগেই বাড়ির সীমানার দ্বন্ধে আপন চাচাত ভাইদের হাতে খুন হতে হলো ওবায়দুল হক নিরবকে। বাড়ির সীমানা নিয়ে চাচাত ভাইদের সাথে বিরোধ ছিলো। সালিশ-বৈঠকে হয় একরকম নিষ্পত্তি। এতেও যেনো হয়নি অবসান। শেষতক এই সীমানার দ্বন্ধেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলা এলাকায় ঘটলো এই নারকীয়তা।
সোমবার (১০ আগস্ট) রাতে কসবা উপজেলার বাদৈর ইউনিয়নের বর্ণি গ্রামে খুন হওয়া নিরবের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে পাঠিয়েছে পুলিশ। নিহত ওবায়দুল হক নিরব (২২) বর্ণি গ্রামের মো.হারুনুর রশীদের পুত্র। পেশায় ছিলো একজন ইজিবাইক চালক। নারকীয় এ ঘটনায় নিহত নিরবের স্ত্রী বাদী হয়ে চারজনকে আসামী করে কসবা থানায় দায়ের করেছেন হত্যা মামলা। এই নিয়ে গোটা এলাকায় ছড়িয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্য।
নিহতের পরিবার, এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বর্ণি গ্রামের হারুনুর রশিদ ও তার ভাই ইউনিয়ন কৃষকলীগ সভাপতি মো.সামছু মিয়ার সাথে দীর্ঘদিন যাবত বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। প্রায় একমাস আগে স্থানীয় সালিশকারকরা বৈঠকে বসে দুই ভাইয়ের বাড়ির সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে দেন। গত সোমবার নিরব চাচাত ভাইদের সাথে রাগ করে একটি সীমানা খুঁটি তুলে ফেলে। পরে নিরবের বাবা হারুনুর রশিদ সীমানা খুটি তোলার কারণে ছেলেকে অনেক বকাঝকা করে খুঁটিটি পুনরায় বসাতে বলেন এবং এজন্য তার চাচার কাছে মাফ চাইতে বলেন। বাবার কথামতো নিরব খুঁটি তোলার অপরাধের জন্য চাচা কৃষকলীগ নেতা সামছু মিয়ার ঘরে মাফ চাইতে যায়। এসময় তার চাচা-চাচি এবংরদুই চাচাত ভাই রোমান ও সুমন মিলে নিরবকে বেধড়ক মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে ইজিবাইকের ভাঙ্গা কাচের টুকরো দিয়ে নিরবের বুকে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে। পরে ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ঘটনার পরপরই বাড়ি ছেড়ে পালায় ঘাতকরা। এই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে দায়ের করেছেন হত্যা মামলা। এদিকে মাত্র ছয় মাস আগে বিয়ে করেছিলো নিরব। তার নববিবাহিত স্ত্রী বর্তমানে পাঁচ মাসের অন্তসত্বা।স্বামীর মৃত্যুতে অন্তসত্বা স্ত্রী অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। অনাগত সন্তানের মুখ দেখার সৌভাগ্য হলোনা নিরবের। নিহত নিরবের পরিবারে চলছে মাতম।
কসবা থানার পরিদর্শক (ওসি) মোহাম্মদ লোকমান হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘সীমানা বিরোধের জেরে নিরব খুন হয়েছে। নিহতের স্ত্রী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামীরা পলাতক রয়েছেন। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’