কসবায় হত দরিদ্র মেডিকেল শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নিলেন উপজেলা প্রশাসন

মোহাম্মদ শাখাওয়াৎ হোসাইন
ব্রা‏হ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মেধাবী শিক্ষার্থী এ বছর ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া নুসরাত জাহানের পড়াশুনার দায়িত্ব নিলেন উপজেলা প্রশাসন। গত সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ উল আলম আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষনা দিয়েছেন এবং ওই শিক্ষার্থীকে মেডিকেল কলেজে ভর্তির টাকা পরিশোধ করেছেন।
নুসরাত জাহান কসবা উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের গোলাসার গ্রামের প্রয়াত স্কুল শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনের কন্যা। নুসরাত ২০১৮ সালে খাড়েরা মোহাম্মদীয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পরীক্ষায় জিপিএ গোল্ডেন-৫ এবং ২০২০ সালে কুমিল্লা ভিক্টরিয়া কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পরীক্ষায় জিপিএ গোল্ডেন- ৫ পেয়েছে। এ বছর মেডিকেলের ভর্তি পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেধাতালিকায় ২০৪ তম হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছেন। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারনে পড়াশুনার অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত সোমবার দুপুরে ওই কৃতি শিক্ষার্থী ও তাঁর মাকে ডেকে এনে উপজেলা প্রশাসন তাঁর পড়াশুনার দায়িত্ব নিয়েছেন। ইউএনও মাসুদ উল আলম উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে প্রাথমিক ভাবে মেডিকেল কলেজের ভর্তির টাকা দিয়েছেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কসবা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাফর আহাম্মদ, কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি মো. আবদুল হান্নান, খাড়েরা মোহাম্মদীয় উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. তারেক মাহমুদ, প্রথম আলো কসবা প্রতিনিধি মো. সোহরাব হোসেন, কৃতি শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান ও তাঁর মা মানসুরা বেগম প্রমুখ।
কৃতি শিক্ষার্থীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নুসরাত জাহানের বাবা দেলোয়ার হোসেন খাড়েরা মোহাম্মদীয়া উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ২০১৩ সনের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি মারা গেছেন। নুসরাতেরা এক ভাই ও দুই বোন। বড় ভাই মেহেদী হাসান উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলেও আর্থিক সংকটের কারনে পড়াশুনা হয়নি। আবুল খায়ের গ্রæপে তিনি চাকুরী করেন। ছোট বোন ইমরাতুল জান্নাত সপ্তম শ্রেণীতে পড়াশুনা করেন। মা মানসুরা বেগম ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গণ শিক্ষায় পাঠদান এবং টিউশনি করে সংসার চালান।
শিক্ষার্থীর মা মানসুরা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ায় চরম আর্থিক সংকটে পরলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গণ শিক্ষায় পাঠদান এবং টিউশনি করে তাদের পড়াশুনা চালিয়েছেন। বর্তমানে উচ্চ শিক্ষায় আরো বেশী টাকার প্রয়োজন। উপজেলা প্রশাসন সহযোগিতা করায় তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
কৃতি শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, আর্থিক সংকটের মধ্যেও তিনি পঞ্চম, অষ্টম, এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পরীক্ষায় গোল্ডেন ৫ পেয়েছেন। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ভর্তি হতে পেরে সৌভাগ্যবান মনে করছেন। তিনি পড়াশুনা চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করায় উপজেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ উল আলম বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান ডিএমসিতে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। আর্থিক সংকটের কারনে পড়াশুনা ব্যহৃত হচ্ছে এমন সংবাদ পেয়ে তার পড়াশুনার দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে তার ভর্তির টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক মহোদয় এবং আইনমন্ত্রী মহোদয়ের সাথে আলোচনা করে পড়াশুনার যাবতীয় খরচ বহন করা হবে।

Post Under