নিজস্ব প্রতিবেদক:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা পৌর এলাকায় চাচার ঘরের মধ্যে মাটির নিচে বানানো গোপন টর্চার সেল থেকে ভাতিজাকে উদ্ধার করা হয়েছে। ১০ লাখ টাকা মুক্তিপনের জন্য ওই টর্চার সেলে আটকে রেখে নির্যাতন চালায় চাচা ইমরান মিয়া।
গত রোববার গভীর রাতে চাচা ইমরান মিয়ার ঘরের ভিতরে নির্মিত ওই টর্চার সেল থেকে জিম্মি হওয়া ভাতিজা মোস্তাক মিয়াকে উদ্ধার করে কসবা থানা পুলিশ। এসময় সোহরাব খান সৌরভ (২৫) নামে এক ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনায় সোমবার বিকেলে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মোস্তাক মিয়া বাদি হয়ে কসবা থানায় ৩ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন।
গ্রামবাসী ও থানায় অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, উপজেলার বিশারাবাড়ী গ্রামের মৃত ফজুলর রহমানের ছেলে কসবা বাজারের ব্যবসায়ী মোস্তাক মিয়া রোববার (১৯জুলাই) রাত সাড়ে ১০টায় দোকান বন্ধ করে চাচা ইমরান মিয়ার সাথে বাড়ির দিকে যাত্রা করেন।
বাড়ির কাছে গেলে মৃত আবদুল মালেক মিয়ার ছেলে ইমরান মিয়া মোস্তাককে মুখে চেপে ধরে জোরপূর্বক তার ঘরে নিয়ে যায়। পরে ওই ঘরে থাকা ভাড়াটিয়া খুনি সৌরভের সহযোগিতায় মুখে স্কচটেপ পেচিয়ে ও কালো কাপড়ে চোখ বেধে ঘরের নিচে গোপন টর্চার সেলে নিয়ে যায়। সেখানে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে তাকে মারধর করা হয় এবং ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে চাচা ইমরান মিয়া। টাকা না দিলে তাকে খুন করা হবে মোস্তাককে টর্চার সেলের ভিতর হুমকি দেয় ইমরান ও ভাড়াটিয়া খুনি সৌরভ।
এরই মাঝে মোস্তাক বাড়িতে না আসায় তাকে খোঁজাখোঁজি শুরু করে বাড়ির লোকজন। এক পর্যায়ে পাশের বাড়ির চাচাতো চাচা ইমরানের ঘরেও তল্লাসী করে মোস্তাকের পরিবারের লোকজন। এসময় এক পর্যায়ে টর্চারসেলে ধস্তাধস্তি করে উপরে উঠে আসে মোস্তাক এবং চিৎকার দিলে মহল্লার মানুষ ইমরানের ঘরটিকে ঘেরাও করে। এমতাবস্তায় ইমরান পালিয়ে যায়। গ্রামের মানুষ ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে পুলিশকে অবহিত করলে রাত ১১টায় পুলিশ এসে ইমরান মিয়ার পাকা দালান ঘরের ভেতর বিশেষ কায়দায় বানানো ব্যাংকারে অভিযান চালিয়ে অপহৃত মোস্তাক মিয়াকে উদ্ধার ও সৌরভ নামে এক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে।
পরে সেখান থেকে ছুরি, চাইনিজ কুড়াল, ইলেকট্রিক্যাল টর্চার সামগ্রীসহ নানা ধরনের যন্ত্রপাতি উদ্ধার করে পুলিশ।
অপহৃত ব্যবসায়ী মোস্তাক আহাম্মদ বলেন, বাড়ির গেইটে ঢুকা মাত্র চাচা ইমরানসহ তিনজন তাকে গলা চেপে ধরে নিয়ে যায় তার ঘরে। সেখানে টর্চার সেলে নিয়ে তার গলায় ছুরি ধরে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে ইমরান। এ সময় ইমরানের ভাড়াটে সন্ত্রাসী সোহরাব খান সৌরভ আরো একটি ছুরি ধরে বলেন সে ১৮টি খুন করেছে। এ খুনটি নিয়ে ১৯টি খুন হবে। তোর ভাইকে বল তাড়াতাড়ি ১০লাখ টাকা পৌছে দিতে। নতুবা দুই মিনিটের মধ্যে তোকে খুন করে ফেলব।
কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লোকমান হোসেন বলেন, ব্যবসায়ী মোস্তাক আহাম্মদকে অপহরনের ঘটনায় ইমরান হোসেনকে প্রধান আসামী করে তিনজনের নামে অপরহরণ ও মুক্তিপণ দাবীর মামলা হয়েছে। এদের মধ্যে থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।