নিজস্ব প্রতিবেদক:
কসবার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, টিউশন ফি ক্যাশ বহিতে লিপিবদ্ধ না করা, আয়-ব্যায়ের হিসাব গরমিল, নিয়মবহির্ভূত স্কুলের ফান্ড হতে ঋণ গ্রহণ ইত্যাদি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো: শাহগীর আলম।
গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শিক্ষা ও কল্যাণ শাখার ০৫.৪২.১২০০.০১৮.০২.০০২.৩৩-৭৩৬ এই স্মারক নম্বরে তদন্ত প্রতিবেদনের অনুলিপি অবগতি ও ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কুমিল্লার চেয়ারম্যান, ব্রাহ্মণবািাড়য়া জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া, আত্মসাৎ করা অর্থ প্রধান শিক্ষক সহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো: শাহগীর আলম। অভিযোগ ও তদন্ত প্রতিবেদনের এক কপি অনুলিপি অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো: হেলাল উদ্দিনকেও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, গত বছর বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের পক্ষে মো: খলিল মিয়া কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর প্রধান শিক্ষক মো: হেলাল উদ্দিনের আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ দায়ের করেন। কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান বিষয়টি তদন্ত করার জন্য কসবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ আলমকে দায়িত্বভার প্রদান করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ আলম উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: জাফর আহম্মদকে আহবায়ক করে তিন সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সেই তদন্তেও প্রধান শিক্ষক মো: হেলাল উদ্দিনের অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণিত হয়েছে মর্মে কসবা উপজেলা কার্যালয় থেকে ০৫.৪২.১২৬৩.০০০.১১.০০২.২২.৩৬৩ নম্বর স্মারকে প্রতিবেদন দাখিল করা হয় কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে।
জানা যায়, দীর্ঘ ১৩বছর ধরে মো: হেলাল উদ্দিন কসবা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন। তিনি শিক্ষকদের মাঝে গ্রুপিং, অভ্যন্তরীন অডিট না করা সহ তাঁর অনুগত শিক্ষকদের নিয়ে বিদ্যালয়ে নানা অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাত করে আসছিলেন। তাছাড়া, তাঁর অনুগত শিক্ষকেরা আর্থিক সুবিধা পেলেও শিক্ষকদের আরেকটি পক্ষকে বঞ্চিত করা হয়। শিক্ষক, অভিভাবক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির অন্যান্য সদস্যদের অভিযোগ ও মতামতের ভিত্তিতে ২০২০-২০২১ সালে বিদ্যালয়ের নিয়মিত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুল ইসলাম রঙ্গু কর্তৃক বিগত ২০১৯-২০২০ সালের ১৯মাসের জন্য অভ্যন্তরিন অডিট কমিটি গঠন করা হয়। ওই অডিটেই সর্বপ্রথম প্রধান শিক্ষকের অপকর্ম ফাঁস হতে শুরু করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষকের সীমাহীন দুর্নীতির কারনে প্রতিষ্ঠানটি পঙ্গু হতে চলছিল। শুধু একটি অর্থ বছরেই এত অনিয়ম! বিগত বছরে কত অনিয়ম হয়েছে সেটা সহজেই অনুমীয়। তিনি আরো বলেন, বিগত দিনের বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে আবু জাহের দশ বছর একটানা দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সাথে হাত মিলিয়ে প্রধান শিক্ষক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। সভাপতিকে প্রাধান্য দিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মতামতকে পাত্তা দেননি।
বিদ্যালয়ের অভিভাবক মো: খলিল মিয়া বলেন, এতিহ্যবাহী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়টিকে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত করেছেন প্রধান শিক্ষক মো:হেলাল উদ্দিন। প্রধান শিক্ষকের এসব অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতার কারনে বিদ্যালয়টির সুনাম নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার মান নষ্ট হয়েছে। অভিভাবক-শিক্ষকদের মনে চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম একাধিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। এখন আমরা প্রধান শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর মো: আজহারুল ইসলাম বলেন, কসবা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিভাবক মো: খলিল মিয়া অভিযোগ দাখিল করেন। আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক মো: হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি বর্তমানে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের আইন শাখায় প্রক্রিয়াধীন আছে।
কসবা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: হেলাল উদ্দিন মুঠোফোনে জানান, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শেষ হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের অনুলিপি আমি এখনো পাইনি। জেলা প্রশাসক আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত প্রতিবেদন মাউশির মহাপরিচালক বরাবর দিয়েছেন সেটাও আমার অজানা।