কসবা পুরাতন বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা পৌর শহরের পুুরাতন বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে আগুন লেগে একের পর এক দোকান পুড়ে গেছে। এতে ২০টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দমকল বাহিনীর চারটি ইউনিট প্রায় দুই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। দোকান মালিকদের দাবী তাদের কয়েক কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দমকল বাহিনীর লোকজন বলছেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এ আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে।
উপজেলা প্রশাসন, দমকল বাহিনী, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, কসবা পৌর শহরের পুরাতন বাজারের সিএনজি স্টেশন এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে আগুন ধরে যায়। মুহুর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। এতে জয় হার্ডওয়ার ও ইলেকট্রিক দোকানে রং ও কেমিক্যাল থাকায় আগুন দ্রæত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। পাশেই রয়েছে আরো একটি গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান, হোটেলে গ্যাস সিল্ডিার, রং এবং কেমিক্যালের ড্রাম একের পর এক বিষ্ফোরিত হতে থাকে। আগুনে মুতি মিয়া মার্কেট, রহমত উল্লাহ মার্কেটসহ আরো কয়েকটি মার্কেটের প্রায় ২০টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পুড়ে যাওয়া দোকানগুলির মধ্যে রয়েছে রং ও হার্ডওয়্যার, খাবার হোটেল, ষ্ট্রীলের কারখানা, কনফেকশনারী, অটো পার্টস, গ্যাস সিলিন্ডার, ইলেক্ট্রনিক্স, পাইপ ফিল্টার ও সেলুন।
খবর পেয়ে রাত সাড়ে নয়টার দিকে কসবার কুটি চৌমুহনী ফায়ার সার্ভিস থেকে দমকল বাহিনীর দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। রাত ১০টার দিকে আখাউড়া থেকে আরো একটি দমকল বাহিনী আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেন। পরে ব্রাহ্মণবাড়ি থেকে আরো একটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। তাদেরকে সহযোগীতা করছেন স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও পুরাতন বাজার ব্যবসায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ। প্রায় দুই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত সাড়ে ১১টায় আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেন।
রাতেই কসবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রাশেদুল কাউছার ভূইয়া, কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ উল আলম, কসবা পৌরসভার মেয়র মো. গোলাম হাক্কানী, কসবা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে আগুন নিয়ন্ত্রনে সহযোগীতা করেন।
ক্ষতিগ্রস্থ জয় হার্ডওয়্যার ও ইলেকট্রিক দোকানের মালিক মো. বাবরু মিয়া বলেন, রংয়ের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারনে তিন দিন আগে রং, কেমিক্যালসহ ২০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল এনেছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবারও হার্ডওয়ারের বিপুল পরিমান মালামাল এনেছেন। দোকানটিতে প্রায় এক কোটি টাকার মালামাল ছিল। আগুনে পুড়ে গেছে কোটি টাকার মালামাল। তিনি বলেন, কিভাবে আগুন লেগেছে কিছুই বলতে পারছি না।
হাসিবা ষ্ট্রীল কারখানার মালিক মো. আরাফাত বলেন, আমার কারখানায় ডেলিভারী দেওয়ার জন্য ৮টি ষ্ট্রীলের আলমারী ছিল। এ ছাড়াও অন্যান্য মালামাল ছিল। আমি আমার কারখানায় ছিলাম। হঠাৎ দেখছি পিছন থেকে আগুন ধরে আসছে। ষ্ট্রীলের আলমারীগুলি গরম হয়ে যাওয়ায় কিছুই বের করতে পারিনি। আলমারির ভিতরে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ছিল। সব পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। তিনি দাবী করছেন, এতে তাঁর কমপক্ষে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
কামরুল হোটেলের মালিক মো. কামরুল বলেন, হোটেলের মধ্যে লোকজন খাবার খাচ্ছিলেন। এ সময় জয় হার্ডওয়ারের দোকানের ভিতর থেকে আগুন আমার দোকানে ঢুকে পড়ে। মুহুর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। কিছুই বের করতে পারিনি। কয়েক লাখ টাকার পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মুতি মিয়া মার্কেটের মালিক কসবা পুরাতন বাজারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউল হুদা বলেন, তাদের ১০ শতাংশ জায়গায় বড় বড় দোকান ছিল। সব গুলি দোকানই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে কয়েক কোটি টাকার পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কসবা পুরাতন বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আগুনে কমপক্ষে ২০টি দোকান পুড়ে গেছে। এতে কয়েক কোটি টাকার পরিমান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিনি বলেন, দমকল বাহিনীর লোকজন প্রায় ৩০ মিনিট দেড়িতে এসেছে। সঠিক সময়ে আসতে পারলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আরো কমে আসত।
কসবার ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট লিডার আবদুল কাদির বলেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সাকিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট প্রায় দুই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। কি পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা তদন্ত করা হচ্ছে।
কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ উল আলম আজ শুক্রবার সকালে বলেন, আগুনে পুড়ে কি পরিমান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা সঠিক ভাবে নির্ণয়ের জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কি ভাবে আগুন লেগেছে তা খুঁজে বের করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন মহল থেকে বলছেন বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও বাজারের ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটিকে চিঠি দেওয়া হবে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সঠিক ভাবে বিদ্যুৎ লাইন দেওয়া হয়েছে কিনা বা ঝুঁকিপূর্ণ লাইন আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে। যদি ঝুঁকিপূর্ণ লাইন থাকে তা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে।