কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় গর্ভবতী নারী সহ সাত অটোরিক্সা যাত্রী নিহত

এমদাদুল হক সোহাগ, কুমিল্লা:
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কালিকাপুর এলাকায় একটি অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার সাত যাত্রী নিহত হয়েছেন, এতে আহত হয়েছেন আরো এক জন। মঙ্গলবার সকাল ১০ টার দিকে বুড়িচং উপজেলার কালিকাপুর লেভেল রেল ক্রসিংয়ে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় নিহত এক নারী আট মাসের গর্ভবতী ছিলেন।

নিহতের বিষয়ে নিশ্চিত করে বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক জানান, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা অভিমুখী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল দশটায় বুড়িচং উপজেলার কালিকাপুর এলাকা অতিক্রম করার সময় অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে উঠে পড়া যাত্রীবাহী অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এসময় কয়েকশ মিটার সামনে ধুমড়ে-মুচড়ে ছিটকে পড়ে অটোরিক্সাটি। ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশায় থাকা ৪ যাত্রী ঘটনাস্থলে নিহত হয়। এছাড়া হাসপাতালে নেয়ার পথে আরো তিন যাত্রীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় গুরতর আহত আছেন আরো একজন।

নিহতরা হলেন বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল গ্রামের মনির হোসেননে স্ত্রী শাহিনূর আক্তার (৩৩), মনসুর আলীর ছেলে আলী আহাম্মদ (৭৭), আসমত আলীর ছেলে রফিজ আলী (৬৫), আলী আশরাফের স্ত্রী সফরজান বেগম(৬৫), মৃত আবদুল মালেকের স্ত্রী লুৎফা বেগম(৬০), তৈয়ব আলীর ছেলে অটোরিক্সা চালক শাহজাহান (৪০), ফজলু মিয়ার স্ত্রী হোসনেয়ারা (৬০)।

তারা সবাই কালীকাপুর বাজার থেকে বাকশীমুল গ্রামের নিজ বাড়ির দিকে ফিরছিলেন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অটোরিক্সাটি ধুমড়ে-মুচড়ে রেললাইনের পাশে পড়ে আছে। দুর্ঘনাস্থল থেকে কয়েকশ মিটার এলাকাজুরে রক্ত আর নিহতের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় করেছেন। স্বজনরা এসে লাশ সনাক্ত করেছেন, তাদের আর্তনাদে ভাড়ি হয়ে উঠে পুরো কালিকাপুর এলাকা। শোকের ছায়া নেমে আসে বাকশীমুল গ্রামে।

প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই বলেন, লেভেল ক্রসিংটি অনেক পুরনো, ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এ সড়কের লেভেল ক্রসিংটি অতিক্রম করেন। লেভেল ক্রসিংয়ের সামনে বড় বড় তালগাছ সহ অন্যান্য গাছ থাকায় চালকেরা বুঝতে কষ্ট হয় ট্রেন আসছে কিনা। তাছাড়া, নতুন রেললাইন নির্মানের পর ট্রেন চলাচলের সময় আগে যে শব্দ হতো সেই শব্দ আর এখন হয়না। এলাকাবাসীর দাবী, এতো পুরনো লেভেল ক্রসিং অথচ এখানে কোন গেট নেই, সিগন্যাল বাতি নেই। লেভেল ক্রসিংয়ে নতুন গেট ও গেটম্যান সহ সিগন্যাল বাতির দাবি জানান তারা।

কুমিল্লা রেলওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ মো: গোলাম মোস্তফা বলেন, দুর্ঘটনায় চারজন মহিলা এবং তিনজন পুরুষ মারা গেছেন। গুরতর আহত অবস্থায় কুমিল্লার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আরো একজন। নিহতদের মধ্যে শাহিনূর আক্তার গর্ভবতী ছিলেন। তিনি ৮ মাসের গর্ভবতী বলে আমরা জানতে পেরেছি। দুর্গটনায় শাহিনূরের অনাগত সন্তানও রয়েছে। আমরা নিহতের বাড়িতে গিয়ে লাশগুলো দেখে এসেছি। লাকসাম থেকে কুমিল্লা হয়ে আখাউড়া পর্যন্ত কতটি অরক্ষিত ও অবৈধ লেভেল ক্রসিং আছে জানতে চাইলে কুমিল্লা রেলওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ মো: গোলাম মোস্তফা বলেন এ বিষয়ে আমার কোন ধারনা নেই, রেলওয়ের পিডাব্লিউ বিভাগ বলতে পারবেন।

Post Under