কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, শিক্ষার্থীসহ ৬ জন গুলিবিদ্ধ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ব ঘোষিত গণমিছিল কর্মসূচিতে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জন গুলিবিদ্ধ বলে দাবি করা হচ্ছে। কয়েকজনকে চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়েছে। আহতদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রের অবস্থা আশঙ্কাজনক। হামলার সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ ছিল না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।
শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে কুমিল্লা নগরীর পুলিশ লাইনস এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টার দিকে কুমিল্লা জিলা স্কুলের সামনে গণমিছিল কর্মসূচিতে জড়ো হতে থাকেন। মহানগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা নিউমার্কেট সড়কে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ফৌজদারি হয়ে পুলিশ লাইনসের এগোতে থাকলে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলির করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া কয়েকজনকে চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়েছে। এতে ছয়জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জনের মতো শিক্ষার্থী আহত হয়। গুলিবিদ্ধদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর আহতদের পাঠানো হয়েছে কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতালে।

আহতদের মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী সোহান ও কুমিল্লা সরকারি কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। সৌরভের চোখে গুলি লাগে। সোহানকে কোপানো হয় চাপাতি দিয়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, নেতাকর্মীদের হামলায় প্রাণ বাঁচাতে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে অনেক নারী শিক্ষার্থী দৌড়ে গিয়ে পুলিশ লাইনসের ভেতর আশ্রয় নেন। পরে তাদের পুলিশ ভ্যানে করে ওই এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।

শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, হামলাকারীরা এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের অনুসারী। হামলাকারীদের মধ্যে মহানগর যুবলীগ সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও যুবলীগ নেতা জহিরুল হক রিন্টুসহ বিভিন্ন নেতাদের দেখা গেছে। তাদের হামলার সময় সেখানে কোনো পুলিশ ছিল না। ঘটনাস্থলে পরে পুলিশ আসে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, এর আগে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে চলে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। পেছন থেকে হামলা করেন বাহারের অনুসারীরা। তারা শটগান, রিভলভার, চাপাতি নিয়ে কুমিল্লার কান্দিরপাড়, রানির দীঘি, লিবার্টি চত্বর, ফৌজদারি, পুলিশ লাইন ও বাগিচাগাঁওয়ে অবস্থান নেন। কয়েকটি ছবিতেও আগ্নেয়াস্ত্র হাতে তিনজনকে দেখা গেছে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক রুবেল হুসাইন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এখানে যারা হামলা করেছে সবাই আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের লোক। কোনো পুলিশ ছিল না। আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, ১০-১৫ জন আহত হয়েছে। চারজন গুরুতর আহত হয়েছে।

জানতে চাইলে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিকুল্লাহ খোকন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা কারও ওপর হামলা করিনি। ছাত্রদের সঙ্গে শিবির ও বিএনপির লোকেরা একাকার হয়ে দেশকে নাশকতার দিকে নিতে চায়। আমরা তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি।’

এসব বিষয়ে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তারা কেউই ধরেননি।

এদিকে চান্দিনায় এক এসিল্যান্ডের গাড়িতে আন্দোলনকারীদের আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তারা কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করেছে।

Post Under