কুমিল্লার শাসনগাছায় হামলা-সংঘর্ষ, গুলিতে কলেজ ছাত্র নিহত

এমদাদুল হক সোহাগ

কুমিল্লার শাসনগাছা মাইক্রো স্ট্যান্ডে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অতর্কিত গুলিবর্ষণ ও দুই পাড়ার মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ জামিল হাসান অর্নব (২৫) নামের এক কলেজ ছাত্র নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে আরও ৭জন। নিহত অর্নব কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও শহরতলীর (আদর্শ সদর উপজেলা) শাসনগাছা এলাকার ড্রাইভার আজহার উদ্দিনের ছেলে। পড়াশুনার পাশাপাশি অর্ণব শাসনগাছা বাস স্ট্যান্ড সততা -একতা পরিবহনে খন্ডকালীন চাকুরী করত বলে জানা গেছে। তাছাড়া অর্ণব জেলা ছাত্রদলের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল।

 

শুক্রবার জুম্মা নামাজের পর ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, বেলা দেড়টার দিকে শাসনগাছা মাইক্রো স্ট্যান্ডে লেগুনা চালক জামাল হোসেনের সাথে এক মহিলা যাত্রীর মধ্য বাকবিতন্ডা হয়। ওই মহিলা শাসনগাছা মোল্লা বাড়ির শ্রমিক নেতা খলিল মিয়ার আত্মীয়। মাইক্রোস্ট্যান্ডে বাক বিতন্ডার বিষয়টি ওই মহিলা খলিল মিয়ার পুত্র রাব্বিকে জানায়। পরে রাব্বি বাড়ির লোকজনকে ডেকে অস্ত্র সশ্র নিয়ে ড্রাইভার জামাল মিয়ার বাড়ি শাসনগাছা মধ্যমপাড়া দফারদার বাড়িতে ওরফে কাজী বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় কাজী বাড়ির পাঁচ থেকে ছয়টি বাড়ি ভাংচুর চালানো হয়। এলোপাথারি গুলিবর্ষণের শব্দ শোনে বাসা থেকে বেড়িয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় অর্ণব। তাছাড়া পথচারী নারী সহ সাত আটজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় নাজমুল সহ আরো একজনকে ঢাকায় নেয়া হয়েছে।

জানা যায়, কাজী বাড়ি ওরফে দফারদার বাড়ির আবুল কাশেমের সঙ্গে শ্রমিক নেতা খলিল মিয়ার পরিবহন ব্যবসা নিয়ে পূর্ব বিরোধ ছিল। ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রচুর গুলির খোসা, ইটপাটকেল, তাজা গুলিও পাওয়া যায়। মোল্লা বাড়ির রাব্বি, অনিক হৃদয় অস্ত্র হাতে হামলার নেতৃত্ব দেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ফিরোজ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কামরান হোসেন ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। পরে পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান, র্যাব -১১ এর অধিনায়ক মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। শ্রমিক নেতা খলিল মিয়া কে পুলিশ আটক করেছে।

নিহত অর্ণব এর বাবা আজহারউদ্দীন বলেন, আমার ছেলে নামাজ পড়ে ঘরে আসে। বাড়ির সামনে খলিল মিয়ার ছেলে রাব্বির নেতৃত্বে তার উপর গুলি চালিয়ে হত্যা করে। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। ওই বাড়ির চারপাঁচজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই গুলি আর গুলি শুরু হয়। বাড়ি ঘর ভেঙ্গে ফেলে। আমাদে;র লোকজন নামাজ পড়ে আসতেও পারেনি। তারা হামলা চালিয়ে বসে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাসনগাছা মিরপুর রোডের সাথে পূর্বপাশে অর্থাৎ বালুর মাঠের উত্তর পাশে কাজী বাড়ি। কাজী বাড়ির ঠিক পশ্চিমপাশে মোল্লা বাড়ি। দুই বাড়ির মাঝখানে মিরপুর সড়ক।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ফিরোজ হোসেন জানান, শাসনগাছা লেগুনা স্ট্যান্ডের বিরোধ নিয়ে দুইটি গ্রুপ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এসময় গুলিবিদ্ধ জামিউল হাসান অর্নব নামে আহত একজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়। আহত অপর ৩ জনের মধ্যে নাজমুল ও অনিককে ঢাকায় নেয়া হচ্ছে এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে নিশু নামে একজন। তিনি আরো জানান, এটা কোনো রাজনৈতিক বিরোধের ঘটনা নয়, লেগুনা-সিএনজি স্ট্যান্ডের আধিপত্য নিয়ে দুইপক্ষে সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার টিম ঘটনাস্থলে রয়েছে।

Post Under