কুমিল্লায় স্ত্রীকে নির্যাতনের মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুমিল্লায় ১৫ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে আদালতে দায়ের করা মামলায় চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়ন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপককে গ্রেফতার করেছে কুমিল্লা কোতয়ালী থানা পুলিশ। গ্রেফতার ওই শিক্ষকের নাম ইফতেখার আহম্মেদ রানা। তিনি চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়ন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব মাইক্রোবায়োলজি এন্ড ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ ফ্যাকাল্টির সহকারি অধ্যাপক। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা নগরীর রেইসকোর্স খাল পাড়ের খন্দকার হাউজ নামের ভাড়া বাসা থেকে তাকে আটক করে কোতয়ালী থানা পুলিশ। শনিবার দুপুরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। গ্রেফতার ইফতেখার আহম্মেদ রানা কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার পয়াত গ্রামের মো: আবদুস সাত্তারের ছেলে।

আদালতে দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের পহেলা নভেম্বরে পারিবারিকভাবে অত্যন্ত ছোট পরিসরে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার উত্তর দুর্গাপুরের গোমতী হাউজিং এলাকার কামাল হোসেনের অনার্স পড়ুয়া মেয়ে আখি আক্তারের (ছদ্দ নাম) সাথে বিয়ে হয় ইফতেখার আহম্মেদ রানার। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে কুমিল্লা নগরীর রেইসকোর্স এলাকায় পরিবারের ভাড়া বাসায় উঠেন ইফতেখার আহম্মেদ রানা। বিয়ের সময় মেয়ের বাবা ছেলেকে উপহার ও মেয়েকে পাঁচ ভরি স্বর্ণ সহ ছয় লাখ টাকার মালামাল প্রদান করেন। কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট হতে পারেনি রানা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকেন রানা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। যৌতুক না পেয়ে শারিরীক ও মানসিকভাবে অত্যাচার করা হয় আখি আক্তারের (ছদ্দ নাম) ওপর। পরবর্তীতে ফ্ল্যাট কেনার জন্য ১৫ লাখ টাকার যৌতুক দাবি করা হয় মেয়ের বাবার কাছে। টাকা না পেয়ে গত বছরের ৩১ জুলাই রেইসকোর্সের ভাড়া বাসায় নির্যাতন চালানো হয় আখি আক্তারের (ছদ্দ নাম) উপর। ১০০ টাকা দামের তিনটি নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পেও নেয়া হয় স্বাক্ষর। পরবর্তীতে পালিয়ে বাবার বাসায় গিয়ে আশ্রয় নেন আখি আক্তারের (ছদ্দ নাম)।

পরবর্তীতে এবছরের ৩০ জানুয়ারি বিষয়টি পারিবারিকভাবে মিমাংসা করার জন্য বসেন দুই পরিবার-পরিজন। মেয়ের বাবা, ছেলে ও তাঁর পরিবারকে যৌতুকের দাবি থেকে সরে এসে এবং তাঁর মেয়ের কাছ থেকে নেয়া খালি স্ট্যাম্পগুলো ফেরত দিয়ে সংসার করার জন্য অনুরোধ জানান। এতে কোনভাবেই রাজি হননি ওই সহকারী অধ্যাপক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ১৫ লাখ টাকা না দিলে মেয়েকে নিয়ে সংসার না করার কথা বলা হয়। সামাজিকভাবে বিষয়টি মিমাংসা করতে ব্যর্থ হয়ে কোন উপায় না পেয়ে নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী এবছরের ফেব্রুয়ারি মাসের দুই তারিখ কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দ্রমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা মূলে কোতয়ালী মডেল থানার এসআই মহিউদ্দিন শেখ নগরীর রেইসকোর্স এলাকার ভাড়া বাসা থেকে ইফতেখার আহম্মেদ রানাকে গ্রেফতার করেন।

কোতয়ালী মডেল থানার এসআই মহিউদ্দিন শেখ বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দ্রমন ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলায় আদালতের গ্রেফতারি পরোনায় সহকারি অধ্যাপক ইফতেখার আহম্মেদ রানাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাতে থানা হাজতে রাখার পর শনিবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন।

মেয়ের বাবা কামাল হোসেন জানান, আমি শুরুতে বিয়েটা দিতে রাজি ছিলাম না। ছেলেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক জেনে বিয়ের কথাবার্তা শুরু এবং পারিবারিকভাবে দেখাদেখি হয়। আমার মেয়ে ও আমার পরিবারকে পছন্দ করে ছেলে পক্ষ। ছেলের অনুরোধে এবং আমার মেয়েকে সুখে রাখবে বলে অঙ্গীকার করলেই আমি বিয়েতে রাজি হই। তাঁর কথাবর্তায় একটুও বুঝতে পারেনি সে আমার পরিবার ও মেয়ের সাথে এমন করবে। শুরুতে ছোট ও পারিবারিকভাবে বিয়েটা সম্পন্ন করি। পরবর্তীতে দুই পরিবারে বড় অনুষ্ঠানের কথা ছিল। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পরই ছেলে ও তাঁর পরিবার আমার মেয়ের উপর যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার শুরু করে। ফ্ল্যাট কেনার নামে আমাদের কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে। আমি অপারগতা প্রকাশ করার পরই ক্ষিপ্ত হয়ে আমার মেয়ের উপর অত্যাচার নির্যাতন বাড়িয়ে দেয়া হয়। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে মিমাংসা করতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করি আমরা।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়ন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব মাইক্রোবায়োলজি এন্ড ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ ফ্যাকাল্টির প্রধান প্রফেসর আবদুল আহাদ বলেন, ইফতেখার আহম্মেদ রানা সহকারি অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। নারী নির্যাতনের মামলায় পুলিশ ইফতেখার আহম্মেদ রানাকে গ্রেফতার করেছে শোনে তিনি দু:খ প্রকাশ করেন।

Post Under