কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের(কুবি) বিজ্ঞান অনুষদের অধীনস্থ গণিত বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ সেমিস্টার পরীক্ষার একটি কোর্সের উত্তরপত্র উধাও হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে ফলাফল আটকে আছে ওই সেশনের শিক্ষার্থীদের।
সংশ্লিষ্ট কোর্সশিক্ষক উত্তরপত্র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে জমা দিয়েছেন দাবি করলেও, দপ্তর বলছে তারা উত্তরপত্র পায়নি। উত্তরপত্র উধাও এর ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিভাগটিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ‘এমটিএইচ-২২১: রিয়েল এনালিসিস-২’ নামের কোর্সটির পরীক্ষা শেষ হয় গত বছরের ১ মার্চ। কোর্সটির শিক্ষক ছিলেন গণিত বিভাগের প্রভাষক মো. আতিকুর রহমান। অভিযোগ উঠেছে, উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে ফলাফল পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে জমা দিলেও বহিঃপরীক্ষকের নিকট প্রেরণের জন্য উত্তরপত্রগুলো পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে জমা দেননি তিনি। ফলে দ্বিতীয় মূল্যায়ন না হওয়ায় এখনও পর্যন্ত আটকে আছে ওই সেশনের শিক্ষার্থীদের চতুর্থ সেমিস্টারের ফলাফল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষককে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে তা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে জমা দিতে হয়। যেগুলো পরবর্তীতে বহিঃপরীক্ষকের নিকট দ্বিতীয় মূল্যায়নের জন্য দপ্তরের মাধ্যমে যায়। যা রেকর্ড থাকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের রেজিস্টার বইতে। কিন্তু অভিযোগ উঠা কোর্সের উত্তরপত্র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে জমার কোনো রের্কড সেখানে নেই বলে জানিয়েছে দপ্তর।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শিক্ষক মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমি আমাদের বিভাগের এক অফিস সহকারীর মাধ্যমে ফলাফল এবং উত্তরপত্র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে পাঠিয়েছি। ফলাফল আমাদের বিভাগে পরীক্ষা কমিটির কাছেও জমা দিয়েছি। এমন হতে পারে যে অফিস সহকারী ভুলে তা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের রেজিস্টার বইতে ওঠাতে ভুলে গেছে।’
তবে বিভাগটির অফিস সহকারী এবং কম্পিউটার অপারেটর দুজনই এমন কোনো উত্তরপত্র জমা দিতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে নিয়ে যাননি বলে জানিয়েছেন।
উত্তরপত্র জমাদানের ব্যাপারে জানতে চাইলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ নুরুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘কোর্সের উত্তরপত্র আমাদের কার্যালয়ে জমা হওয়ার কোন রের্কড আমাদের কাছে নেই। সংশ্লিষ্ট কোর্সের শিক্ষক উত্তরপত্র একজন অফিস সয়াহকের মাধ্যমে পাঠানোর যে দাবিটি করছেন তা সত্য নয়।’
এদিকে উত্তরপত্র উধাওয়ের ঘটনায় একাডেমিক কাউন্সিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামানকে আহ্বায়ক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ নুরুল করিম চৌধুরীকে সদস্য সচিব, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী এবং গণিত বিভাগের প্রধান খলিফা মোহাম্মদ হেলালকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি সংশ্লিষ্ট কোর্সের পরীক্ষকের নাম্বার পেয়েছি। বহিঃপরীক্ষরের পাইনি। উত্তরপত্রের বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় বলতে পারবে।’
গণিত বিভাগের প্রধান খলিফা মোহাম্মদ হেলাল বলেন, ‘একাডেমিক কাউন্সিলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে একটি কমিটি করা হয়েছে, কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নেইয়া হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্তে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন আসলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’