গ্রেটার কুমিল্লা: দুই হাজার কোটি টাকার মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার ওরফে লেবিকে (৬১) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার বেলা পৌনে একটার দিকে শহরের চরকমলাপুর এলাকায় নিজের কার্যালয় থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানার পুলিশ।
ফরিদপুরের সন্ত্রাসী দুই ভাই সাজ্জাদ হোসেন বরকত (৪৭) ও ইমতিয়াজ হাসান ওরফে রুবেলের দেওয়া জবানবন্দিতে নাজমুলের নাম একাধিকবার এসেছে। তাঁরা দুই ভাই সাবেক মন্ত্রী ও সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ঘনিষ্ঠ। এই ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে তাঁরা চাঁদাবাজি, জমি দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। দুই ভাই তাঁদের জবানবন্দিতে নাজমুল ও অন্যদের সঙ্গে মিলে তাঁরা কীভাবে ফরিদপুরে অপকর্ম করতেন, তার বিবরণ দিয়েছেন। পুলিশ ইতিমধ্যে বরকতদের একাধিক সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষককে গ্রেপ্তার করেছে। এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন হলেন ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার ওরফে লেবি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ নাজমুল ইসলামকে তাঁর কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে হাতকড়া পরিয়ে তাঁকে চেম্বার থেকে বের করে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। নাজমুল ইসলাম খন্দকর শহরের চরকমলাপুর মহল্লার বাসিন্দা মৃত খন্দকার আমিনুর রহমান ওরফে মজনু খন্দকারের ছেলে। পুলিশ জানায়, মানি লন্ডারিং মামলায় সিআইডির চাহিদা অনুযায়ী নাজমুল হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তাঁর ভাই ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের বিরুদ্ধে দুই হাজার কোটি টাকার মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ গত ২৬ জুন ঢাকার কাফরুল থানায় মামলাটি করেন। ১৯ জুলাই ভোরে সিআইডি দুই ভাইকে ফরিদপুর জেলখানা থেকে তাদের জিম্মায় নেয়। তাঁদের সরাসরি ঢাকার মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে নেওয়া হয়। দুই দিন রিমান্ড শেষে সিআইডি ২১ জুলাই পুনরায় ১০ দিন করে রিমান্ড চাইলে আদালত ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে রুবেল ও বরকত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে বরকত বলেন, ২০১২ সাল থেকে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। ২০১৫ সালের দিকে তিনি, তাঁর ভাই রুবেল, মোশাররফ হোসেনের এপিএস যুবলীগের নেতা এ এইচ এম ফুয়াদ, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হাসান খন্দকার ওরফে লেবি এবং ফরিদপুর শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মিলে গোপন বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের সব কাজ তাঁরা ভাগাভাগি করে নেবেন। এর মধ্যে এলজিইডির টেন্ডারের দায়িত্ব আসে তাঁদের ভাগে। তিনি স্বীকার করেন, এলজিইডির সব উন্নয়নকাজে ১৫ শতাংশ কমিশনের বিনিময়ে তাঁরা কাজ পাইয়ে দেন। তাঁদের সম্মতি ছাড়া কেউ কাজ করতে পারতেন না।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বরকত আরও বলেন, ফরিদপুরের পাসপোর্ট অফিস, পৌরসভা, বিআরটিএ এবং ফুটপাত নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হাসান খন্দকার লেবি। তাঁর পক্ষ নিয়ে চাঁদা তুলতেন শহর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম নাসিম।
বর্তমানে সিআইডির মামলাটি তদন্ত করছেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, রুবেল ও বরকত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ‘যাঁদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন’, তাঁদের সবার নাম উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, গত শুক্রবার রাতে জবানবন্দি গ্রহণের পর আদালতের নির্দেশে ওই দুই ভাইকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, নাজমুল হাসানকে মানি লন্ডারিং মামলায় সিআইডির চাহিদা অনুযায়ী গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর নাজমুল ইসলামকে আদালতের মাধ্যমে ফরিদপুর জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিআইডি এ মামলায় নাজমুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরবর্তী সময়ে জেলা কারাগার থেকে তাদের জিম্মায় নেবে।
গত ১৬ মে রাতে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে দুই দফা হামলার ঘটনা ঘটে। সুবল সাহার বাড়ি শহরের গোয়ালচামট মহল্লার মোল্লাবাড়ি সড়কে। এ ঘটনায় গত ১৮ মে সুবল সাহা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন। গত ৭ জুন রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলার মামলার আসামি হিসেবে শহরের বদরপুরসহ বিভিন্ন মহল্লায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ সাজ্জাদ, ইমতিয়াজসহ মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে।