কাতিব হাসান মুরাদ, কুবি প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরেও শিক্ষার্থীরা পায়নি কোন প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল অ্যাকাউন্ট। ফলে গবেষণা ক্ষেত্র, শিক্ষাবৃত্তি ও ই-লার্নিং এ নানা ধরণের অসুবিধা ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এদিকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো বলছে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনাই নেই তাদের কাছে।
স্বনামধন্য জার্নাল হতে অনলাইনে গবেষণা প্রবন্ধ পড়া, শিক্ষাবৃত্তির জন্য আবেদন করা, গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশনা, গবেষণা অনুদান প্রাপ্তিসহ বিভিন্ন কাজে প্রয়োজন হয় প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল এর। কিন্তু এখন পর্যন্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই ব্যাপারে কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।
ফলে গবেষণায় একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমছে তেমনি যাদের আগ্রহ আছে তাদেরও পড়তে হচ্ছে নানা জটিলতায়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী এ এম নূর উদ্দিন হোসাইন বর্তমানে ইউএনডিপির অর্থায়েনে একটি গবেষণা প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘গবেষণা সম্পর্কে প্রতিষ্ঠান থেকে পারামর্শ বা প্রাযুক্তিক কোনো সহায়তাই আমি পাইনি। নিজ উদ্যোগেই আমাকে এই ক্ষেত্রটিতে কাজ করে যেতে হচ্ছে। এমনকি শিক্ষকেরাও গবেষণার ব্যাপারে অনেক উদাসীন।’
করোনা মহামারীর সময়ে অন্যান্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রাতিষ্ঠানিক ইমেইল থাকার কারণে বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম হতে ব্যবহারিক ও একাডেমিক অনেক কোর্স করতে পারলেও কুবির শিক্ষার্থীরা করতে পারছে না। এছাড়াও বিভিন্ন লার্নিং এন্ড ডেভেলপিং সফটওয়্যারের ফ্রি এক্সেস, জি স্যুট এডুকেশন বা আনলিমিটেড গুগল ড্রাইভ ব্যবহারসহ বিভিন্ন সুবিধা গ্রহণ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে তারা।
বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন সহ নানামুখী শিক্ষামূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী জহির রায়হান। তিনি বলেন, ‘এ সমস্ত জায়গায় বিচরণ করতে গিয়ে অনেকবার হোঁচট খেতে হয়েছে, পিছিয়ে পড়তে হয়েছে শুধুমাত্র নিজস্ব এডুমেইল না থাকার কারণে। কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি থাকবে যেনো প্রাতিষ্ঠানিক ইমেইল সকল শিক্ষার্থীকে দেয়া হয়।’
এডুমেইলের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরের পরিচালক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক ইমেইল দেয়ার ব্যাপারটি নিয়ে কোনো আলোচনা এখন পর্যন্ত হয় নি। এই ব্যাপারে আইটি সেল ও আইকিউএসি কাজ করে থাকে। যদি গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরকে দায়িত্ব দেয়া হয় তাহলে আমরা এই বিষয়ে কাজ করবো।’
নির্দেশনা নেই ইন্সটিটিউশনাল কোয়ালিটি এস্যুরেন্স সেল (আইকিউএসি) কাছেও। সেলের পরিচালক প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র দেব বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক ইমেইল দেয়ার কাজটা আমাদের না। আইকিউএসি আইসিটি নিয়ে কাজ করে না। আমরা তথ্য বা নির্দেশনা দিলে কুবি আইসিটি সেল কাজ করবে। শীগ্রই বিষয়টি আলোচনায় তুলবো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল বলছে তাদের কাছেও নেই নির্দেশনা। সেলের প্রোগ্রামার মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত সেরকম নির্দেশনা পাই নি। নির্দেশনা পেলে কাজ শুরু করবো।’
শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক মেইল না দেওয়া প্রসঙ্গে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড মোঃ আবু তাহের বলেন, ‘এইটা আমাদের ভাবনায় আছে। মিটিং আছে সামনে সেখানে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কমিটি করে দেয়া হবে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে দ্রুতই প্রাতিষ্ঠানিক ই মেইল প্রদান করার কাজ করা হবে।’
নির্দেশনা না থাকায় কাজ না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘না শুধু যে নির্দেশনা আসলেই কাজ হবে তা নয়। দপ্তরগুলোও এই ব্যাপারে প্রস্তাব দিতে পারে। প্রশাসন তা বিবেচনা করবে।’