কসবা ( ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
বাংলাদেশে আইনের শাসন চলবে এবং সেইজন্যই আইনের পথ ধরে সব সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আন্দোলনের কিন্তু কোন ইস্যু নাই। আপনারা শুধু শুধু রাস্তায় থাইকেন না। আপনাদের যে কাজ সেটা হচ্ছে লেখাপড়া করা। আপনাদের যে কাজ সেটা হচ্ছে আপনাদের কোন বক্তব্য থাকলে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সর্Ÿোচ্চ আদালত আপীল বিভাগ ৭ আগস্ট সময় দিয়েছেন সেখানে আপনারা বক্তব্য রাখবেন।
আমি আশা করি আপনারা স্ব স্ব বুদ্ধিতে ক্লাশে ফিরে যাবেন। শুক্রবার (১২ জুলাই)
দুপুরে কসবা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষন
কর্মসূচী-৩ (জঊজগচ-৩) প্রকল্পের আওতায় নিয়োগপ্রাপ্ত রক্ষণাবেক্ষন কর্মীদের
মাঝে সঞ্চয়ের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এসব কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন দেশে কোটা বিরোধী আন্দোলন ছাত্ররা করছে। ২০১৮ সালে এই আন্দোলন একবার হয়েছিল। তখন জননেত্রী শেখ হাসিনা এই কোটা বাতিল করে দিয়েছিলেন। সেই কোটা বাতিল করার পরে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোট বিভাগে একটা মামলা করেন।
এই মামলায় যারা আজকে আন্দোলন করছে তারা কিন্তু পক্ষভুক্ত হন নাই। হাইকোটের
সামনে তারা নিজেরা কিংবা তাদের কোন আইনজীবি বক্তব্য প্রদান করেন নাই।
হাইকোট একটা রায় দিল যে কোটা যেটা বাতিল হয়েছে সেটা বে-আইনী।
তখন সরকার আবার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এর আপীল বিভাগ যেটা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সেখানে আপীল করল। আপীল করার পর সেখানেও কিন্তু যারা আজকে কোটা বিরোধী আন্দোলন করছে, রাস্তায় নেমেছে তারা পক্ষভুক্ত হয়নি। আপনারা জানেন যে কিছুদিন আগে আমি বক্তব্যে বলেছিলাম যে তারা যদি আদালতে পক্ষভুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন তাহলে আদালত নিশ্চয়ই তাদের বক্তব্য শুনবেন। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই যে তারা আমার বক্তব্যের জন্যেই হউক বা নিজেরা চিন্তা করেই হউক আদালতে পক্ষভুক্ত হয়েছে।
মাননীয় প্রধান বিচারপতি তাদের পক্ষভুক্ত হওয়ার দরখাস্ত গ্রহণ করেছে এবং গ্রহণ করার পর হাইকোর্ট বিভাগের যে রায় সেটা স্থগিত করেছেন এবং তিনি কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনা হল ছাত্রদের তিনি অনুরোধ করেছেন লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করার জন্য, শিক্ষকদের তিনি অনুরোধ করেছেন যে ছাত্রদের সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করে শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যাওয়ার
জন্য। তয় তিনি বলেছেন আন্দোলনকারী ছাত্ররা যদি আদালতে এসে তাদের বক্তব্য পেশ করতে চায় তাহলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোটের্র আপীল বিভাগ তাদের বক্তব্য শুনবেন এবং তাদের সকল বক্তব্য বিবেচনায় নিবেন। এরপরে কোন আন্দোলন থাকে না, কোন কথা থাকে না।
মন্ত্রী আরো বলেন, আখাউড়া এবং কসবা ১৯৭১ সনে সারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যে রণাঙ্গন ছিল সেই রণাঙ্গনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত।
আখাউড়া এবং কসবায় বহু বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য। তাদেরকে আমাদের সঠিকভাবে শ্রদ্ধা করতে হবে। আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আমাদের জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সঠিকভাবে শ্রদ্ধা করতে না পারি তাহলে আমার মনে হয় আমরা এই বাংলাদেশকে অপমান করব। আজকে আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমাদের যে আইনী কাঠামোই তৈরী করা হউক না কেন তাদেরকে, তাদের ব্যাপারে আমাদেরকে একটা ছাড় দিতে হবে। তাদেরকে আমাদের সঠিকভাবে শ্রদ্ধা করতে হবে। এটা কিন্তু আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে। আজকে যে স্বাধীন হাওয়া বাতাস যেটা আমরা নিশ^াস নিচ্ছি এটা তাদের আত্মত্যাগের
কারনে। আজকে আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মন্ত্রী হয়েছি, আজকে আমরা যে চাকুরি পাই সেটাও তাদের আত্মত্যাগের কারনে। পাকিস্তান যদি থাকত তাহলে পরে আপনি যদি মেট্রিকে ফাস্টও হতেন তাহলে কেরানী হওয়ার যোগ্যতা আপনার থাকত না। এই বীর মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল ১৯৭১ সালে। এই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের কারনেই আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। এই বীর মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র তুলে নিয়েছিল বলেই আমরা পাক হানাদার বাহিনীকে হারাতে পেরেছি। আমরা বিজয়ী হয়েছি। আমাদের সেইসব কথা সেইসব ইতিহাস মনে রাখতে হবে। যৌক্তিক পরিবর্তন আসতেই পারে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫২ বছর
হয়েছে। অনেক কিছুর যৌক্তিক সংস্কার হতেই পারে। আমি এর চেয়ে বেশি কিছু
বলতে পারব না। যখন আদালতে মামলা চলে, আদালতের বিবেচ্য বিষয় থাকে তখন আমি
সে বিষয়ে কোন কথা বলি না। মনে রাখতে হবে কোন বাঙ্গালীই কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা না করলে সেটা মানবে না।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে সেই কাল রাত্রে বর্বোরোচিত এবং নির্মম হত্যাকান্ডের পরে আপনারা দেখেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর যারা রাজাকার, আলবদর তাদেরকে জিয়াউর রহমান মন্ত্রী মিনিস্টার বানাইছে। স্বাধীনতার আদর্শ নষ্ট করেছিল। এরশাদ খুনিদেরকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে দিয়েছিল। আমাদের আইনের শাসন নষ্ট করেছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনা সেই আইনের শাসন, যুদ্ধ অপরাধী, বঙ্গবন্ধু ও জেল হত্যার বিচার করেছেন। সেই সাথে দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে গেছেন।
কসবা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ শাহারিয়ার মুক্তার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, কসবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছাইদুর রহমান স্বপন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল মান্নান, কসবা পৌরসভার মেয়র মো. গোলাম হাক্কানী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আবদুল আজিজ, কসবা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদা সুলতানা সুপ্রিয়া। অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতা-কর্মীরা
উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষনাবেক্ষন কর্মসূচি-৩ এর আওতায় একশ জন উপকারভোগীর প্রত্যেককে ১ লক্ষ ২০ হাজার ৫০০টাকা করে সঞ্চয়ের এক কোটি ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকার চেক বিতরণ করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। মন্ত্রী এর আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর বাস্তবায়নে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৬৫ হাজার ২৩২ টাকা ব্যয়ে কসবা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নবনির্মিত বাসভবন ও ১ কোটি ৩২ লাখ ২০ হাজার ২৮৮টাকা ব্যয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নবনির্মিত বাসভবন উদ্বোধন করেন।