এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতার চেক পাস করাতে দাবীকৃত ঘুষ গ্রহণকাণে নিজ অফিসেই জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার জালে ফেঁসে জেলহাজতে যাওয়া অডিটর হলেন বরখাস্ত। এর পাশাপাশি ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় অপর দুই কর্মকর্তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে করা হয়েছে বদলী। এদিকে এ সংক্রান্তে গঠিত তদন্ত কমিটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলেছেন।
পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা একাউন্টস এণ্ড ফিন্যান্স অফিসের সুপার আবু ইউসুফ নূরুল্লাহ এবং জেলা একাউন্টস এণ্ড ফিন্যান্স অফিসার মোহাম্মদ আলীকে ঢাকায় বদলী করা হয়েছে। রোববার (২৮ জুন) উপ-হিসাব মহানিয়ন্ত্রক (প্রশাসন-১) খায়রুল বাশার মো. আশফাকুর রহমান তাদের বদলীর আদেশে স্বাক্ষর করেন। আবু ইউসুফ নূরুল্লাহকে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ে এবং মোহাম্মদ আলীকে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে বদলী করা হয়। গত ২৫ জুন অডিটর কুতুব উদ্দিন ঘুষের টাকাসহ উদ্দিন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা’র (এনএসআই) জালে ধরা পড়েন। পরে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। অডিটর কুতুব উদ্দিনকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের শ্রমিক সংগঠনের নেতা গার্ড আবদুল হাই, কার্য সহকারি নজরুল ইসলাম স্বপন এবং হুমায়ুন কবির ঘুষের এই টাকা নিয়ে যান একাউন্টস অফিসে। সড়ক বিভাগের মাষ্টার রোল কর্মচারীদের চাকরি নিয়মিতকরণ হওয়ার পর তাদের পূর্বের বকেয়া বেতন-ভাতা পাশ করাতে ওই কর্মকর্তার হাতে ঘুষের এই টাকা তুলে দেন তারা। তাদের মধ্যে নজরুল ইসলাম স্বপন বিল পাস করাতে কুতুব উদ্দিন তাদের কাছে ঘুষ দাবী করেছে বলে থানায় অভিযোগ দাখিল করেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কুতুব উদ্দিনকে ৫৪ ধারায় জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ।
এদিকে ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনার তদন্তও শুরু হয়েছে। মহা-হিসাব নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের ডেপুটি কন্ট্রোলার অব একাউন্টস এ.কে.এম ওয়াহিদুজ্জামান এক সদস্য বিশিষ্ট এই তদন্ত কমিটির প্রধান। তিনি রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তদন্ত করতে আসেন। তিনি জেলা প্রশাসক, সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও একাউন্টস অফিসের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেন। এছাড়া তিনি জেলা কারাগারে গিয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা এবং এনএসআই’র কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেন। আগামী দুই কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, সড়ক ও জনপথ বিভাগের মাষ্টার রোলে কর্মরত ৬৩ জন কর্মীর চাকরি স্থায়ীকরণ হলে বর্ধিত বেতনে এক কোটি সাত লাখ টাকার বিল বকেয়া আসে। ওই টাকা পেতে অডিট অফিসের সাথে পাঁচ লাখ টাকায় চুক্তি করেন সওজ’র কর্মীরা। চুক্তি মোতাবেক প্রথম দফায় ৬৪ লাখ টাকা তারা উত্তোলন করে নিয়ে যান। ২৫ জুন বৃহস্পতিবার অবশিষ্ট ৪৩ লাখ টাকার বিল প্রস্তুত করে অডিট অফিস। সে মোতাবেকই সওজ’র কর্মীরা তাদের প্রাপ্য বিল নিতে অডিট অফিসে যান। বিল নিতে যাওয়ার পাশাপাশি সওজ কর্মচারীরা চুক্তি অনুযায়ী অডিটর কুতুব উদ্দিনকে প্রদানের জন্য নিয়ে যান নগদ পাঁচ লাখ টাকা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই খবর পেয়ে যথা সময়ে এনএসঅই’র একটি টিম অডিট অফিসে হানা দেয়। চুক্তি মোতাবেক পাঁচ লাখ টাকা লেনদেনকালে টাকাসমেত তাদের আটক করেন এনএসআই সদস্যরা। পরে আটককৃত চারজনকে টাকাসহ সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ২ নং ফাঁড়ির ইনচার্জ সোহাগ রানা বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ‘সওজ কর্মচারি নজরুল ইসলাম স্বপন বাদী হয়ে দাখিলকৃত অভিযোগটি আমরা ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠিয়ে দিয়েছি।