এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে আমন ধানের চাষ ও উৎপাদন। জেলায় সংশ্লিষ্ট বিভাগ নির্ধারিত ৫০.৩১০ হেক্টরের স্থলে চাষ হয়েছে ৫০.৯০০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৪২ হাজার ৮৭৬ মেট্টিক টন ধান। তবে বাম্পার ফলন হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছেন।এদিকে বর্তমানে চলছে আমন ধান কাটার ধুম। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা ভেজায় খুুুশি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে প্রকাশ, চলতি অর্থ বছরে (২০২০-২০২১) জেলায় আমন ধান চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। চলতি রোপা আমন মৌসুমে জেলায় কৃষকরা বিআর-২২,২৩, ব্রিধান-৪৯, ব্রিধান-৮৭, বিনা-৭, হাইব্রিড ধান, কালোজিরা ও স্থানীয় পাজামসহ বিভিন্ন ধরণের ধান চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে খুবই ভালো। ইতিমধ্যেই শতকরা তিন ভাগ জমিতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ পরে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। চলতি অর্থ বছরে জেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিল ৫০.৩১০ হেক্টর। সেস্থলে চাষ হয়েছে ৫০.৯০০ হেক্টর জমিতে। জেলায় আমন ধানের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৪২ হাজার ৮৭৬ মেট্টিক টন।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্যমতে চলতি অর্থ বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৯.৯৩৫ হেক্টর জমিতে। চাষ হয়েছে ৯.৯১০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়ে ২৭ হাজার ৫১৩ মেট্টিক টন।জেলার সরাইল উপজেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৬.৬৪০ হেক্টর জমি, চাষ করা হয়েছে ৬.৭২০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার ৮১৮ মেট্টিক টন। জেলার কসবা উপজেলায় ১২.১০ হেক্টর জমির স্থলে চাষ হয়েছে ১১.৯৯০হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার ১৬৭ মেট্টিক টন। জেলার আখাউড়া উপজেলায় ৩.৫০০ হেক্টরের সথলে আমন ধান চাষ হয়েছে ৩. ৫৬৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ২০০ মেট্টিক টন। জেলার বিজয়নগর উপজেলায় ৪.২৯০ হেক্টরের স্থলে চাষ করা হয়েছে ৪.৪৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৩০৬ মেট্টিক টন। জেলার নাসিরনগর উপজেলায় ৪.৬০০ হেক্টরের স্থলে চাষ করা হয়েছে ৪.৪৮০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৮৮৫ মেট্টিক টন। জেলার নবীনগর উপজেলায় আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৬.০৪০ হেক্টর জমির স্থলে আমন চাষ হয়েছে ৬.০৩৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৪৯৭ মোট্টিক টন।জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ৩৮৫ হেক্টর জমির স্থলে চাষ হয়েছে ৩৪০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৪৩ মেট্টিক টন। জেলার আশুগঞ্জ উপজেলায় ২.৯১০ হেক্টর জমির স্থলে চাষ করা হয়েছে ৩.৪১০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাত হাজার ৪৪৭ মেট্টিক টন।
সরজমিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার রামরাইল ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর, উলচাপাড়া, সুলতানপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর,নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের কালীসিমা,নাটাই উত্তর ইউনিয়নের বেহাইর, রাজঘর, ভাটপাড়া, তালশহর পূর্ব ইউনিয়নের অষ্টগ্রাম, পুথাই, সুহিলপুর ইউনিয়নের তেলিপাড়া, সুতার মুড়া, সুহিলপুর, মজলিশপুর ইউনিয়নের বাকাইল, বুধল ইউনিয়নের সুতিয়ারা গ্রামে ঘুরে দেখা যায় ফসলি জমি থেকে কৃষকরা ধান কাটছে। কেউ আবার জমির মধ্যেই করছে ধান মাড়াই। কোথাও কোথাও দেখা যায় কৃষকরা বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন সোনালী ধান।
সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের বেহাইর গ্রামের আলী আকবর বলেন,’তিন কানি জমিতে (৩০ শতাংশে কানি) পাইজাম ও কালোজিরা ধান করেছি। ফলনও হয়েছে ভালো। আবহাওয়া ভালো থাকায় ও পোকা-মাকড়ের আক্রমন না থাকায় এবছর অন্যান্য বছরের তুলনায় ধান বেশী হয়েছে। তবে ধান কাটার শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় লাভবান হতে পারবোনা।’ সদর উপজেলার তালশহর পূর্ব ইউনিয়নের অষ্টগ্রাম নোয়াপাড়ার কৃষক লাল মিয়া বলেন, এবছর দুই বিঘা জমিতে ব্রিধান-৪৯ জাতের ধান চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। বর্তমানে বাজারে ধানের দামও ভালো। প্রতিমন ধান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৬শ’ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।’ একই এলাকার কৃষক রায়হান হোসেন বলেন, ‘ধান কাটা এখনও পুরোপুরি শুরু হয়নি। আরো সপ্তাহখানেক পরে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। চার বিঘা জমিতে ব্রিধান-৮৭ জাতের ধান করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে ১৪/১৫ মন ধান পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যেই এক বিঘা জমির ধান কেটে ৭০০ টাকা মন দরে বিক্রি করে দিয়েছি।’ সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামের কৃষক কবির মিয়া জানান, ‘এবার দুই কানি জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। জমির ধান এখনও পাকেনি। তবে এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় ফলন ভালো হয়েছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপ-পরিচালক মো. রবিউল হক মজুমদার বলেন, ‘অনুকূল আবহাওয়া, পোকা মাকড়ের আক্রমণ না থাকায় আমনের ফলন হয়েছে ভালো। চলতি বছর জেলায় চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিলো ৫০.৩১০ হেক্টর। চাষ হয়েছে ৫০.৯০০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৪২ হাজার ৮৭৬ মেট্টিক টন ধান। এবছর জেলায় বাম্পার ফলন হওয়ায় ধানের উৎপাদনও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আমরা আশাবাদী।