এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
পরিকল্পিতভাবে ঠাণ্ডা মাথায় জবাই করে হত্যা করা হয় স্কুল পড়ুয়া ভাই-বোন শিফা ও কামরুলকে। নেপথ্যে অর্থের লেনদেন রয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিমত। তবে পুলিশও পরিকল্পিত লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের কথা নিশ্চিত করেছেন। এদিকে এই বাড়িতে থাকা নিহতদের মামা বাদল ঘটনার পর থেকেই লাপাত্তা হওয়ায় মামাকেই খুঁজছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থানা পুলিশ।
সোমবার (২৪ আগস্ট) রাতে জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের সলিমাবাদ গ্রামে প্রবাসফেরত কামাল উদ্দিনের বাড়ির খাটের নিচ থেকে তারই দুই সন্তানের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার হয়। নিহত শিফা আক্তার (১৪) বাঞ্ছারামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীতে এবং কামরুল হাসান (১০) সলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছিলো। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে সম্পন্ন হয়েছে মরদেহের ময়না তদন্ত।
কেন, কিভাবে দুই ভাই-বোনকে হত্যা করা হয়েছে তা নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারছে না পুলিশ। তবে পুলিশ হত্যার ক্লু বের করার চেষ্টা করছে। স্থানীয় সূত্র গুলো বলছে, দ্বিতীয় তলা বিশিষ্ট বাড়িটিতে প্রবাস ফেরত কামাল উদ্দিন, তার স্ত্রী, দুই কন্যা ও পুত্র ছাড়া কেউই থাকতো না। গত ১০ ফেব্রুয়ারি কামাল দেশে আসেন। বেশ কিছু দিন ধরে কামালের শ্যালক বাদল মিয়া অবস্থান করছিলেন ভগ্নিপতির বাড়িতে। বাদলের বাড়ি কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার খাদেরপুর গ্রামে। সেখানকার একটি মারামারির মামলায় আসামী হওয়ার পর থেকেই বোনের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন বাদল। তাছাড়া বিদেশ যাওয়ার জন্য বোনদের কাছ থেকে ১৪/১৫ লাখ টাকা ধার নেয় বাদল। এরপর কিছুদিন বিদেশে ছিলোও। পুনরায় বিদেশে গিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করবে এমন আশ্বাস দিয়েই বোনদের কাছ থেকে টাকা কর্জ নেয়। সম্প্রতি লকডাউনের কারণে বিদেশ থেকে চলে আসার পর তার বোনেরা জানতে চাইলে সে জানায় আবার বিদেশ চলে যাবে। সেখানে ঝামেলা হয়েছে তাই দেশে এসে পড়েছে। পরবর্তীতে ধার-দেনা মিটিয়ে দেবে। তার নিকট আত্মীয় মো. আসিফ এসব তথ্য জানায়। মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নিহতদের মরদেহ ময়না তদন্ত করতে আসার পর স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের আসিফ জানান, সোমবার ভগ্নিপতি কামাল উদ্দিনকে তিন লাখ টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল বাদলের। এদিন রাতেই ঘটলো কামাল উদ্দিনের দুই শিশু সন্তানকে গলা কেটে হত্যা। সেদিন এই বাড়িতেই অবস্থান করছিলো নিহতদের মামা বাদল। ওই বাড়ির দুটি কক্ষের খাটের নিচেই মিলে শিপা ও কামরুলের মরদেহ। তাদের হাত-পা ছিলো বাঁধা।
সূত্র জানায়, ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করা হয় শিফা ও কামরুলকে। হত্যা নিশ্চিত করতেই এমনটি করা হয়েছে। তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে আঘাতের বেশকিছু চিহ্ন। ঘটনার পর থেকেই বেপাত্তা নিহতদের মামা বাদল মিয়া। শিশু কামরুল হাসানের মরদেহ যে কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সে কক্ষটিতেই অবস্থান করতো তার মামা বাদল। সোমবার সন্ধ্যের পর প্রতিবেশীরা শুনেছে উচ্চস্বরে ডেকসেট বাজানোর শব্দ। জোড়া খুনের ঘটনায় কতজন অংশ নিয়েছে তা পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে পেশাদার খুনীদের সহায়তায় নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘঠিত হতে পারে বলে স্থানীয়রা মনে করছে। পুলিশ জানিয়েছে যেহেতু এই বাড়িতে মামা এবং শিশুদের পরিবারের সদস্যরা থাকতো তারাই জানতে পারে ঘটনার মূল রহস্য। ঘরের লোকজনই এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত।এ পর্যন্ত ৩/৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে হত্যার মোটিভ সমন্ধে ওয়াকেবাহল হয়েছে পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত চাঞ্চল্যকর এই দুই হত্যার ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। থানায় মামলাও হয়নি। জেলা পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা পিবিআইসহ সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থাগুলো ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অনীহা প্রকাশ করছে পুলিশ। নিহতদের পিতা-মাতা এখন থানায় রয়েছে বলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) মো. সালাহ উদ্দিন চৌধুরী জানান, ‘ঘটনার পর থেকে মামা বাদল মিয়া পলাতক। তাকে আটক করা গেলেই হত্যার প্রকৃত রহস্য বেড়িয়ে আসবে। সন্দেহভাজন হত্যাকারীদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে পুলিশের তিনটি টিম অভিযান চালাচ্ছে।’ পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান বলেছেন, ‘এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এর রহস্য উদঘাটন করতে পারবো বলে আমরা আশাবাদী।