এমদাদুল হক সোহাগ, কুমিল্লা:
সম্প্রতি কুমিল্লা নগরী যেন যানজটের নগরীতে পরিনত হয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থেমে লাগছে তীব্র যানজট। এতে করে চরম ভোগান্তীতে পড়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। তীব্র রোদ আর গরম, খানাখন্দে ভরা সড়কে ভোগান্তির মাত্রা বাড়িয়েছে বহুগুণ। মূল সড়ক পেড়িয়ে অলিগলিতেও তৈরি হচ্ছে যানজট। পাঁচ মিনিটের পথ চলতে লাগছে এক ঘন্টারও বেশী। এ যেন এক অচেনা নগরীতে পরিনত হয়েছে। যানজটের কারনে অসহায় জীবন যাপন করছেন মানুষ। বিশেষ করে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, অফিস-আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস টাইম মেনটেইন করতে বেগ পেতে হচ্ছে। মূল্যবান কর্মঘন্টা নষ্ট হচ্ছে তাদের। তাছাড়া নারী কর্মকর্তারা-কর্মচারীরাও অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন এই যানজটের কারনে।
সরজমিনে দেখা গেছে, কুমিল্লা নগরীর প্রবেশ পথ আলেখারচর থেকে শহরে আসার পথে বিএনসিসি কার্যালয়ের সামনে, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কার্যালয় এলাকায় সড়কে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দ। এই স্থানে প্রতিদিনই থেমে থেমে যানজট লাগে। যানজটের কারনে পুরো এলাকায় স্থবির হয়ে থাকে যানবাহন। দ্বিতীয়ত শাসনগাছা রেল ওভারপাস থেকে নামতেই রেইসকোর্স এলাকায় তৈরি হয় তীব্র যানজট। নিশা টাওয়ারের সামনে সড়ক ভাঙ্গা থাকায় পুলিশ লাইন ঝাউতলা পর্যন্ত যানজট তৈরি হয়। ঝাউতলা এলাকার মুন হাসপাতালকে কেন্দ্র করে সারা বছরই সেখানে যানজট লেগে থাকে। বাদুরতলা এলাকার ফয়জুন্নেছা স্কুলের মোড় এবং ওয়াইডব্লিউসিএ স্কুলের সামনেও তৈরি হয় ভয়াবহ যানজট। বিশেষ করে স্কুল শুরু ও ছুটির সময়। কান্দিরপাড় পূবালী চত্বর, লিবার্টি চত্বর, হোটেল সালাউদ্দিন মোড়, টমছমব্রিজ, মেডিকেল কলেজ রোড, মোগলটুলী, রাজগঞ্জ, চকবাজার, মেডিকেল কলেজ রোড, ফৌজদারী থেকে নগর ভবনের সামনের সড়ক, নজরুল এভিনিউ, রাণীর বাজার রোড, ধর্মপুর, শাসনগাছা পুরো শহরই যেন মনে হয় জটলা বেঁধে আছে যানবাহনে।
নগরবাসী ও পুলিশ বিভাগের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকার পতনের পর ট্রাফিক বিভাগের লোকবল সংকট দেখা দিয়েছে। পর্যাপ্ত পুলিশ না থাকায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খল করা সম্ভব হচ্ছেনা।
অপরদিকে, নগরবাসীর অভিযোগ পুরো নগরী ছেঁয়ে গেছে অবৈধ যানবাহনে। অদক্ষ্য ব্যাটারী চালিত রিক্সা চালক, আগে যাওয়ার প্রবনতা, নিয়ম না মানা, অতিরিক্ত যানবাহন, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস, মিনিবাসের কারনে যানজট তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া সড়ো সড়ক, অবৈধ পার্কিং, ভ্যানগাড়িতে সবজি-তরকারি, কাপড়-তৈজসপত্র বিভিন্ন ভ্রাম্যমান দোকান, ফুটপাত দখল যানজট তৈরির অন্যতম কারন।
কুমিল্লার সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার অধ্যাপক মো: জামাল নাছের বুধবার সকালে প্রতিবেদক কে জানান, নগরীর হোটেল সালাউদ্দিন মোড় এলাকায় একই যায়গায় মাইক্রোবাসে আধাঘন্টা ধরে যানজটে পড়েছিলেন। সামনে বা পিছনে যাওয়ার সুযোগ ছিলোনা। বহুকষ্টে ঠাকুরপাড়া এলাকার গলি রোড ধরে তিনি টমছমব্রিজ এলাকার জ্যামকে এড়িয়ে দৌলতপুর হয়ে কর্যকর্মস্থলে যেতে সক্ষম হয়েছেন। তাছাড়া দুপুর আড়াইটায় রেইসকোর্স এলাকায় ওভারপাসের ওপর থেকে জ্যামে পড়েছেন। বাসায় ফিরতে ঝাউতলা, বাদুরতলা, কান্দিরপাড়, লিবার্টি মোড়ে যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
মো: রফিকুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী জানান, তিনি রাজগঞ্জ ছাতিপট্টি থেকে রেইসকোর্স ইস্টার্ন ইয়াকুব প্লাজা পর্যন্ত আসতে কয়েকটি স্থানেই যানজটে পড়েছেন। পুরো কুমিল্লা শহরেই যানজট লেগে আছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ নাজমুল হাসান বলেন, ট্রাফিক পুলিশের জনবল সংকট রয়েছে। তাছাড়া অতিরিক্ত বৃষ্টিতে নগরীর অনেক সড়কই খানাখন্দ ভরে গেছে। আশাকরছি কিছু দিনের মধ্যেই যানজটের সমস্যা কমে যাবে।