ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। শয়ে শয়ে মানুষ মারা যাচ্ছেন রোজ। কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না মহামারী। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৩৭ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সবমিলিয়ে দেশটিতে সাড়ে ১১ লাখেরও বেশি মানুষ করোনা শনাক্ত হয়েছেন। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এই তথ্য দিয়েছে এনডিটিভি ও আনন্দবাজার।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মঙ্গলবারের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ হাজার ১৪৮ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। যা গত দু-তিন দিনের হিসাবে একটু কম। সোমবার দেশটিতে ৪০ হাজারের বেশি করোনা শনাক্ত হয়েছিলেন।
এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হলেন ১১ লাখ ৫৫ হাজার ১৯১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সংক্রমণের হার ১১ দশমিক ১ শতাংশ।
আক্রান্তের পাশাপাশি দেশটিতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান সামনে রেখে আনন্দবাজারের প্রতিবেদন বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৫৮৭ জনের। এ নিয়ে দেশে মোট ২৮ হাজার ৮৪ জনের প্রাণ কাড়ল করোনাভাইরাস। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মারা গেছেন ১২ হাজার ৩০ জন। মৃত্যুর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা দিল্লিতে প্রাণ গেছে ৩ হাজার ৬৬৩ জনের। ২৫৫১ জনের প্রাণহানি নিয়ে মৃত্যু তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে তামিলনাড়ু। গুজরাটে ২১৬২ জন মারা গেছেন কোভিড-১৯ এ।
আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত হারে বাড়লেও ভারতে করোনা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার পরিসংখ্যানটা কিছুটা স্বস্তিদায়ক। আক্রান্ত হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখের বেশি মানুষ। অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ৬২ শতাংশই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২৪ হাজার ৪৯১ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট ৭ লাখ ২৪ হাজার ৫৭৭ জন করোনা থেকে মুক্ত হলেন।
এদিকে করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে মোদি সরকার যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন আশার আলো দেখালেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তাদের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা মানবদেহে পরীক্ষামূলক ব্যবহারে সফলতা এসেছে। এ টিকা পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু করবে ভারতও।
বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অক্সফোর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। সেরামের প্রধান আদর পুনাওয়ালা বলেন, এই টিকা পরীক্ষার ফল খুবই ইতিবাচক পাওয়া গেছে এবং এর ফলে আমরা খুবই খুশি।
তবে সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে টিকা ভারতীয় বাজারে ছাড়ার ক্ষেত্রে কোনো রকম তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে না বলেও জানান আদর পুনাওয়ালা। তিনি বলেন, ভারতে এই টিকা পরীক্ষার অনুমতি পাওয়ার জন্য আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত সরকারের কাছে আবেদন করব। আর অনুমোদন পেয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ভারতে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু করব। এ ছাড়া আরও বড় পদক্ষেপ হিসেবে আমরা খুব তাড়াতাড়ি ভারতেও এ ভ্যাকসিন উৎপাদনের কাজ শুরু করব।
এদিকে ল্যানসেটের মেডিকেল জার্নালে অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিনের সফলতা নিয়ে যখন পর্যালোচনা হচ্ছে, ঠিক তখন ভারতে তৈরি দেশি করোনা টিকা কোভ্যাকসিনেরও মানবদেহে পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়েছে। এইমস দিল্লির প্রধান ড. রণদীপ গুলেরিয়া বলেন, এই টিকার (কোভ্যাকসিন) পরীক্ষামূলক ব্যবহার কতটা সফল হচ্ছে তা পুরোপুরি জানতে গবেষকদের আরও মাস তিনেক সময় লাগবে।