আগরতলা প্রতিনিধি- মোসাহিদ আলি: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য ভারতবর্ষের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সবধরনের সহযোগিতা করেছিলেন। এরফল সরূপ ভারতের মাটিতে বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশের পক্ষে থাকা সামরিক বাহিনী ও মুক্তিযুদ্ধাদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্প। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় তাদের দেওয়া হতো উন্নত ট্রেনিং আর তারপর ভারতের মাটি থেকে ট্রেনিং নিয়ে বাংলাদেশে গিয়ে পাকিস্তান সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে করতো এই সকল মুক্তিযুদ্ধা। সেই সময় অনেক মুক্তিযুদ্ধাদের মৃতদেহ বাংলাদেশে নিয়ে যেতে না পারার কারণে ভারতের মাটিতে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে সেনাবাহিনীতে কর্মরত বীর সেনানীদের সমাধিস্থল আজও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভারতে সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। তাদের মধ্যে অনেকেরই খোঁজখবর যেমন পাচ্ছেন না পরিবারের সদস্যরা তেমনি পাচ্ছেন না বাংলাদেশের সরকার। এবার ভারতবর্ষের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর ত্রিপুরা জেলার ধর্মনগর মহকুমার কদমতলা ব্লক এলাকার চল্লিশ দ্রোণ গ্রাম পঞ্চায়েত এর ২ নং ওয়ার্ডের স্থানীয় একজন বিশিষ্ট শিক্ষক আব্দুল ছবুর মহাশয়ের তৎপরতায় সন্ধান পাওয়া গেল ৫জন বীর শহীদের সমাধিস্থলের সন্ধান। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই ৫ জন মুক্তিযুদ্ধাকে প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা চলিয়ে গেছেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থার কাছে চিঠি দিয়েছেন তিনি কিন্তু কোন লাভ হয় নি, ২০১২ সালে বাংলাদেশের এক মহিলা সুনাগরিক সুপর্ণা নাসরিন ভারতবর্ষের ত্রিপুরা রাজ্যের স্থানীয় একটি সংবাদ মাধ্যমে আবেদন জানান ভারতবর্ষে মুক্তিযুদ্ধাদের সমাধিস্থল থাকলে নিম্ন ঠিকানায় যোগাযোগ করার জন্য, সেই মোতাবেক শিক্ষক আব্দুল ছবুর সেই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য লিখে পাঠান, কিন্তু এরপরও অগ্যাত কারণে অপার থেকে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় নি। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার বহুবছর পেরিয়ে গেলেও, প্রায় ৫০ বছরে বাংলাদেশ থেকে বহু উচ্চ আধিকারিক ভারতে আসেন কিন্তু এই মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর সেনানীদের সমাধিস্থলের খোঁজ কেউ নেয় নি। ১৯৭১ সালের ১৭ই অক্টোবর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুলির আঘাতে বাংলাদেশ ফুলতলা শিলুরা চা বাগান এলাকায় প্রাণ ত্যাগ করেন দুই মুক্তিযুদ্ধা তারা ৮ নম্বর বেঙ্গল রেজিমেন্টের কর্মী ছিলেন, সেই খবর যায় ৮ নম্বর বেঙ্গল রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমদাদুল হকের কাছে, দুই মুক্তিযুদ্ধার দেহ তিনি নিয়ে আসার জন্য সেখানে যান, এক মুক্তিযুদ্ধাকে ড্রেনের পাশ থেকে তুলে আনার সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সৈনিকরা তাকে গুলি করে আর সেখানেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমদাদুল হক। ১৯৭১ এর ১২ই অক্টোবর ২জন ও ১৭ই অক্টোবর ৩ মিলিয়ে মোট ৫ জন মুক্তিযুদ্ধা প্রাণ ত্যাগ করেন। ৫ বীর শহীদ মুক্তিযুদ্ধাদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছিল ভারতের মাটিতে ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর ত্রিপুরা জেলার ধর্মনগর মহকুমার কদমতলা ব্লক এলাকার চল্লিশ দ্রোণ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার দুই কবরখানায়, এর মধ্যে বড় কবরখানায় হয় সমাধিস্থ করা হয় ৪জন ও ছোট কবরখানায় সমাধিস্থ করা হয় ১ জন কে। তাদের সকলের স্মৃতিগুলি আজও ছড়িয়ে রয়েছে সেখানে গ্রামের মানুষের মধ্যে। সেই সময় কালের সাক্ষী অনেক মানুষই আজ জীবিত নেই, বেছে থাকা গ্রামের প্রবীণ মানুষেরা চাইছেন তারা জীবিত থাকতে দেখে যেতে চান এই মুক্তিযুদ্ধারা প্রাপ্য সম্মান পেয়েছেন, তাই গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দারা বাংলাদেশ সরকারের কাছে সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে আবেদন জানিয়েছেন, এই সংবাদটি দেখে যদি বাংলাদেশ সরকার কিংবা শহীদদের আত্মীয় পরিজনেরা কেউ বেঁচে থাকেন তাহলে ওনারা ভারত সরকারের সহযোগিতায় বীর শহীদ জাওয়ানদের আত্ম বলিদানের সঠিক মর্যাদা ও সম্মান দেওয়া সম্ভব হবে।
সিপাহী মোকমেদ আলী ,রেজিঃ নং 3940088.তিনি শহীদ হয়েছিলেন ১২,১০,১৯৭১ ইং তারিখে, তিনি বাংলাদেশ ৮ নং রেজিমেন্ট সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন ।জিলা কুমিল্লা, ডাকঘর গোয়ালপাড়া, গ্রাম কিসমত নোয়াপাড়ার বাসিন্দা। দ্বিতীয় শহীদ জওয়ান হলেন মোঃ জামাল উদ্দিন রেজিঃ নং 3950017. ৮ নং বেঙ্গল রেজিমেন্ট বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী ।তিনি শহীদ হয়েছিলেন ১৭,১০,১৯৭১ ইং তারিখে। উনার বাংলাদেশের ঠিকানা জেলা কুমিল্লা, থানা মোহনা, ডাকঘর বিজয়নগর, গ্রাম পারার বন এলাকায় । এবং তৃতীয় শহীদ জওয়ান হলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমদাদুল হক ৮ নং বেঙ্গল রেজিমেন্ট বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী। তিনি শহীদ হয়েছিলেন ১৭,১০,১৯৭১ ইং তারিখে। এছাড়াও আরো দুজন শহীদের সমাধি, কবরস্থানে রয়েছে উল্লেখিত এলাকায় তাদের নাম জানেন না কেউই। এই তথ্য প্রদানকারী শিক্ষক আব্দুল ছবুর জানান দীর্ঘ ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও এই শহীদ জাওয়ানদের প্রতি আজও কোন শ্রদ্ধা সম্মান জানানো হচ্ছে না বাংলাদেশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিংবা তাদের আত্মীয় পরিজনদের পক্ষ থেকে। হয়তোবা কেউ জানেনই না যে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর জেলায় এই বীর শহীদ জাওয়ানদের সমাধিস্থল রয়েছে। তাই এক বুক আসা নিয়ে গ্রামের মানুষ পথ চেয়ে বসে আছেন ৫ বীর শহীদ মুক্তিযুদ্ধাদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার আসায়।