এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
মধ্যপ্রাচ্যের লেবাননে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। এর উত্তাপ যেনো লেগেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মোর্শেদ মিয়ার বুকে। কেননা, এ ঘটনায় তিনি হারিয়েছেন ছেলে রাসেল মিয়া (২২) এবং ভাগ্নে রেজাউলকে। বড় ছেলে সাদেক মিয়া আহত অবস্থায় সেখানকারই একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এছাড়াও লেবাননের রাজধানী শহর বৈরুতে থাকা মেয়ের জামাই গোলাম রসুল, ভাই জসীম উদ্দিনসহ আরো কতেক স্বজনও আহত হয়েছেন ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায়। রেজাউলের বাড়ি পার্শ্ববর্তী কুমিল্লায়।
জেলার কসবা উপজেলার কাইমপুর ইউনিয়ন এলাকার জাজিসার গ্রামটিই যেনো এখেন শোকের চাদরে মোড়ানো। এই জাজিসার গ্রামেরই সন্তান নিহত রাসেল এবং আহত সাদেক মিয়া। তাদের ফুফাতো ভাই রেজাউলও নিহত হয়েছেন ওই বিস্ফোরণের ঘটনায়। বুধবার রাসেলের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হবার পর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন স্বজনরা। ছেলের জন্য বিলাপ করে কিছুক্ষণ পরপরই সংজ্ঞা হারাতে থাকেন মা পারুল বেগম। পুত্রশোকে একরকম স্তব্দ বাবা মোর্শেদ মিয়া। তাদেরকে শান্তনা দিতে এসে গ্রামের মানুষেরাও শোকে বিহ্বল। গ্রামটির বাতাসও যেনো হয়ে ওঠেছে ভারি।
জানা যায়, চার বছর আগে জীবিকার তাগিদে মধ্যপ্রাচ্যের লেবাননে যান মোর্শেদ মিয়ার তৃতীয় পুুুুত্র রাসেল। দেশটির রাজধানী শহর বৈরুত’র বিস্ফোরনস্থল থেকে আধা কিলোমিটার দুরের একটি পেট্রোল পাম্পে কাজ করতেন রাসেল ও তার বড় ভাই সাদেক মিয়া।
মঙ্গলবার বিকেলে বিস্ফোরণের সময় সেখানেই কর্মরত ছিলেন তারা। ঘটনার পর থেকেই পরিবারের লোকজন একাধিকবার ফোন করে তাদের খোঁজখবর জানার চেষ্টা করেন। কিন্তু কেউই ফোন রিসিভ না করায় বাড়িতে কান্নাকাটি শুরু হয়ে যায়। রাসেল ছাড়াও বৈরুতে থাকা তার বড় ভাই সাদেক, এক ফুফাত ভাইসহ আরো কয়েকজন স্বজনের খোঁজ মিলছিলো না। হাসপাতালে প্রায় ৭/৮ ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরে পায় রাসেলের বড় ভাই সাদেক মিয়া। সে তখনই ফোন রিসিভ করে রাসেলের খোঁজ পাচ্ছেনা এবং ঘটনার বিস্তারিত জানায়। খবর পেয়ে লেবাননের অন্য এলাকা থেকে ছুটে আসেন রাসেলের চাচা মো.জসিম উদ্দিন। চাচা-ভাতিজা মিলে বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে খুঁজতে থাকেন রাসেলসহ অন্য স্বজনদের। অবশেষ ৫ আগষ্ট বিকেলে একটি হাসপাতালের মর্গে খুঁজে পান রাসেলের মরদেহ। ওই শহরেরই আরেকটি হাসপাতাল মর্গে মিলে নিহত হওয়া রাসেলের আপন ফুফাত ভাই কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মাধবপুর গ্রামের রেজাউলের মরদেহ। এছাড়াও চিকিৎসাধীন অবস্থায় খোঁজ মিলে রাসেলের ভগ্নিপতি গোলাম রসুলের।
তিন ভাই, দুই বোনের মধ্যে রাসেল সবার ছোট।একই ঘটনায় ছেলে এবং ভাগ্নের মৃতুতে বাড়িতে চলছে মাতম। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। রাসেলের মা পারুল বেগম কান্নাজড়িত গলায় বলেন, ‘সরকার যেন আমার মৃত সন্তানের লাশ এবং আহত সন্তানকে দ্রুত দেশে আনার ব্যবস্থা করে আমার বুকে ফিরিয়ে দেন, আমি এই দাবী জানাই।’ এদিকে বৃহস্পতিবার রাসেলের মা-বাবাকে সমবেদনা জানাতে জাজিসার গ্রামে তাদের বাড়িতে ছুটে যান কসবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল কাওসার ভূইয়া জীবন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ উল আলম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন, স্থানীয় কাইমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইয়াকুব মিয়াসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।
কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউেনও) মাসুদ উল আলম বলেন,’বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক আর বেদনাদায়ক। খবর পেয়ে তাদের বাড়িতে গিয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমবেদনা জানিয়েছি। নিহতের পরিবারের লোকজনকে সান্তনা দেয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই। নিহত ও আহতদের দেশে আনার ব্যাপারে সব ধরণের সহযোগিতা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হবে।’
এদিকে লেবাননের বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের ভাদেশ্বরা গ্রামের তাজুল ইসলামের পুত্র মেহেদী হাসান রনি(২৫)।এ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লেবাননের রাজধানী বৈরুত নগরীতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ওই ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুইজনের মৃত্যুর সত্যতা মিলেছে। এছাড়াও এ ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন