হাসপাতালের বিল না দিয়ে পালালেন বাবা-মা, শিশুর দায়িত্ব নিলেন এসপি

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম আবারো মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন। কুমিল্লায় পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করার পর অসংখ্য মানবিক কাজ করে প্রশংসিত হয়েছেন বহুবার। টাকার অভাবে বিল দিতে না পেরে সন্তান রেখে পালানো নিম্নআয়ের বাবা মার সন্তানের দায়িত্ব নিয়ে বিল পরিশোধ করে বাবা-মায়ের কাছে তাঁর সন্তান ফিরিয়ে দিয়ে রেখেছেন আবারো মানবিকতার উজ্জল দৃষ্টান্ত।

জানা যায়, গত ৫ জুলাই দুপুরে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জেলার আদর্শ সদর উপজেলার আড়াইওরা গ্রামের হতদরিদ্র মিজানুর রহমান ও শিরীন আক্তার দম্পতির ঘরে জমজ দুটি শিশুর জন্ম হয়। জন্মের পর একটি শিশু মারা যায় এবং অপর মেয়ে শিশুটির জীবন সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসক ওই শিশুটিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এদিকে শিশুর মা কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। স্ত্রীর আকুতিতে মিজানুর রহমান তাঁর নবজাতক সন্তানকে ভর্তি করেন নগরীর ঝাউতলা এলাকার মা ও শিশু স্পেশালাইজড হাসপাতালে। তবে, হাসপাতালের বিলের ভয়ে, পালিয়ে যান মিজানুর রহমান ।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের খোঁজে না পেয়ে কিচিৎসা চালিয়ে যান। পরবর্তীতে শিশুটির মার সাথে কথা বলে নবজাতকের শারীরিক অবস্থার কথা জানান। মিজানুর রহমানের স্ত্রী জানান, অর্থের জোগাড় না হওয়ায় হাসপাতালে আর আসেননি তারা।

খবর পেয়ে হাসপাতালে শিশুটিকে দেখতে যান পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর সালেহীন ইমন সাথে ছিলেন।

এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে এগিয়ে আসেন পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম। বহন করেন শিশুর চিকিৎসা ব্যয় প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

কুমিল্লা মা ও শিশু স্পেশালাইজড্ হাসপাতালের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদিউল আলম চৌধুরী বলেন, ‘শিশুর বাবা মিজানুর রহমান ৫ জুলাই রাতে শিশুটিকে এই হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন। এরপর থেকে তিনি উধাও হয়ে যান। হাসপাতালে ভর্তির সময় একটি মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়ে ছিল। কিন্তু ওই নম্বরটি কখনো বন্ধ থাকে, আবার কখনো খোলা থাকলেও কেউ রিসিভ করে না। পরে শিশুর বাবাকে খুঁজে না পেলেও মায়ের সন্ধান পাই এবং শিশুর শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানাই। পরে ৮ জুলাই শিশুর মা হাসপাতালে আসেন। কিন্তু শিশুটিকে নেওয়ার মতো আর্থিক অবস্থা নেই বলে তিনি বিভিন্ন স্থানে সহযোগিতা পাওয়ার আসায় বেড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামের নজরে আসার পর তিনি চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহনের দায়িত্ব নেন।’

এদিকে খরচ বহনের খবর পেয়ে শিশুর বাবা-মা ও স্বজনরা রবিবার (১২ জুলাই) দুপুরে প্রিয় সন্তানের কাছে হাসপাতালে ছুটে আসেন।

নবজাতকের বাবা মিজানুর রহমান জানান, ‘আমি গরীব মানুষ। তাই টাকা না থাকায় শিশুটিকে নেওয়ার জন্য হাসপাতালে আসিনি, লজ্জায় পালিয়ে ছিলাম। এসপি স্যার খরচের দায়িত্ব নেওয়ায় আমরা আনন্দিত। আল্লাহর নিকট আমরা স্যারের জন্য দোয়া করি।’

কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত উদার হয়ে শিশুর চিকিৎসা দিয়েছে। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি। আমি একজন মানুষ হিসেবে মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে শিশুটির দায়িত্ব নিয়েছি।

Post Under