হৃদয়ের মনিকোঠায় অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক

অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক (বাচ্চু মিয়া সাহেব নামেও পরিচিত) (জন্ম: ১ আগস্ট ১৯২৫- মৃত্যু: ২৮ অক্টোবর ২০০২) ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ। সিরাজুল হক বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট সংগঠক ও আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন।

সিরাজুল হক বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ সহচর। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য ও বাংলাদেশের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে এমএনএ, ১৯৭৩ সালের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ও ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কসবা-বুড়িচং নিয়ে গঠিত তৎকালীন কুমিল্লা-৪ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:
অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক (বাচ্চু মিয়া) ১ আগস্ট ১৯২৫ সালে ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) তৎকালীন কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার পানিয়ারূপ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। সিরাজুল হক কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহপাঠী ছিলেন।

রাজনৈতিক ও কর্মজীবন:
অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক (বাচ্চু মিয়া) ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান, ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। ১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলা, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম প্রধান কৌঁশলী ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার প্রধান কৌঁশলীর দায়িত্ব পালন করেন তাঁরই ছেলে অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।

অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক ১৯৭০ সালে কসবা-বুড়িচং নির্বাচনী এলাকা থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য, কসবা, আখাউড়া ও দেবীদ্বার নিয়ে গঠিত সাবেক কুমিল্লা-৪ (বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ কসবা-আখাউড়া) আসনে ১৯৭৩ সালের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১১ এপ্রিল ১৯৭২ সালে ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে গঠিত সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন।

১৯৭৯ সালে দেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের প্রতিদ্বন্দ্বী জেনারেল এমএজি ওসমানীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে তিনি সক্রিয় ছিলেন। নির্বাচনে জেনারেল ওসমানী হেরে গেলে তিনি দীর্ঘদিন নীরব ছিলেন এবং নিজের আইন ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। একটি টার্ম তিনি সুপ্রিম কোর্ট বারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবন
ব্যক্তিগত জীবনে সিরাজুল হক জাহানারা হককে বিয়ে করেন। তিনি ছিলেন দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক। বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী সরকারের আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক তাঁর সন্তান। সিরাজুল হক একজন সমাজ সেবক ও শিক্ষানুরাগী ছিলেন।

সিরাজুল হক ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহপাঠী। একই সঙ্গে পড়েছেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কও ছিল মধুর, সিরাজুল হকের ডাক নাম বাচ্চু। বঙ্গবন্ধুর ডাক নাম খোকা। দুজনের মধ্য সম্বোধন ছিল ডাক নামেই। সিরাজুল হক হাজী মুহাম্মদ মহসিন বৃত্তি পেয়েছিলেন। তা দিয়েই তিনি লেখাপড়া করেছেন।

মৃত্যু:
২৮ অক্টোবর ২০০২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। বনানীর মসজিদে জানাজা শেষে তাকে বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

অতল শ্রদ্ধা…….

Post Under