এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার দায় হেফাজতের। তাদেরকেই চিহ্নিত করতে হবে কারা এর সঙ্গে জড়িত। এদেরকে আইনের কাছে সোপর্দ না করা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিকরা তাদের সকল সংবাদ বর্জন করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিও অবিলম্বে প্রেস ক্লাব-সাংবাদিকদের ওপর হামলায় জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানানো হয়। হেফাজতের হরতাল-আন্দোলনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে হামলা-ভাঙচুর, প্রেস ক্লাব সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামিকে হত্যাচেষ্টাসহ সাংবাদিকদের মারধর, ক্যামেরা-মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলোত্তর সভায় এই ঘোষণা দেয়া হয়।
মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব আয়োজিত কর্মসূচির শুরুতে সাংবাদিকদের একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গন থেকে শুরু করে টি.এ রোড ফ্লাইওভার পর্যন্ত মিছিল প্রদক্ষিণ শেষে প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গনে প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়। এতে গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত হেফাজতের হরতাল-আন্দোলনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে হামলা-ভাঙচুর, প্রেস ক্লাব সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামিকে হত্যাচেষ্টাসহ সাংবাদিকদের মারধর, ক্যামেরা-মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলোত্তর সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য হেফাজত ইসলামের সংবাদ বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়। এর পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংগঠিত ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তও দাবী করেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
আরো পড়ুনঃ
প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি পীযুষ কান্তি আচার্যের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিম বিজন, সাবেক সভাপতি খ. আ. ম. রশিদুল ইসলাম, সৈয়দ মিজানুর রেজা ও মোহাম্মদ আরজু, টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনজুরুল আলম, প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি ইব্রাহীম খান সাদাত, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম. কাউসার এমরান ও দীপক চৌধুরী বাপ্পি, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবদুন নূর, কবি জয়দুল হোসেন, এমদাদুল হক, সৈয়দ মো. আকরাম, নিয়াজ মুহাম্মদ খান বিটু, প্রেস ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম শাহজাদা, তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক মজিবুর রহমান খান, সাবেক সহ-সভাপতি মফিজুর রহমান লিমন, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম মোল্লা, টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির রায়হান, সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক বিশ্বজিৎ পাল, নবীনগর প্রেস ক্লাবের সভাপতি জালাল উদ্দিন মনির, আশুগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, সরাইল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান বাবুল, এশিয়ান টিভির স্টাফ রিপোর্টার হাবিবুর রহমান পারভেজ, কসবা উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি খ. ম. হারুনুর রশীদ ঢালী প্রমুখ। বক্তারা প্রেস ক্লাব ভবন ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, অতীতের কোনো আন্দোলন-সংগ্রামের সময় প্রেস ক্লাবে কখনও হামলার ঘটনা ঘটেনি। প্রেস ক্লাবের সভাপতির ওপর পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালানো হয়। প্রতিবাদ সমাবেশ পরিচালনা করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. মনির হোসেন।
উল্লেখ্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হরতাল-আন্দোলনে হেফাজতের টার্গেটে পরিণত হন সাংবাদিকরা। ভিডিও এবং ছবি ধারণ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন বেশ কয়েকজন। রোববার হরতাল চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। এর আগে প্রেস ক্লাবের সিসি ক্যামেরা খুলে নেয় হামলাকারীরা। ঘটনার খবর পেয়ে প্রেস ক্লাবে ছুটে আসার পথে হামলা চালানো হয় প্রেস ক্লাব সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামির ওপর। ‘তুই প্রেস ক্লাব সভাপতি, তুই আওয়ামীলীগ’ বলে তাকে প্রথমে রাম দা দিয়ে মাথায় কোপ দেয়া হয়। সেটি লক্ষ্যচুৎ হলে আরেকজন লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে। জামিকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। কয়েক দফা প্রেস ক্লাবে হামলা হয়। এসময় ক্লাবে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন জেলার অর্ধশত সাংবাদিক। এর আগে সকালে শহরের পৈরতলায় সাংবাদিক আবুল হাসনাত রাফি হরতালের তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করতে গেলে হামলার শিকার হন। তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়া হয় এবং মারধোর করা হয়। শনিবার বিকেলে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিসছিল কভার করতে গিয়ে মাদ্রাসা ছাত্রদের ছুড়ে মারা ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হন এটিএন নিউজের ক্যামেরাপারসন সুমন রায়। তার সামনের দাত ভেঙ্গে যায়। এরপরপরই টি.এ রোড মাদ্রাসা মোড়ে মান্নান ম্যানশনে থাকা যমুনা, আরটিভি এবং মাইটিভি’র অফিসে চড়াও হয় মাদ্রাসা ছাত্ররা। তাদের ইটপাটকেলে অফিসের কম্পিউটারসহ পেশার নানা যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এদিনই এটিএন বাংলার ইসহাক সুমন,এসএটিভির মনিরুজ্জামান পলাশ সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয় তাদের লক্ষ্য করে। শুক্রবার ভাদুঘরে মাদ্রাসা ছাত্ররা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করার সময় এর ভিডিওচিত্র ধারন করতে গিয়ে এনটিভির ক্যামেরাপারসন সাইফুল ইসলাম ধাওয়ায় পড়েন। এরপর ক্যামেরাটি একজন বিজিবি সদস্যের হাতে দিয়ে সাইফুল রক্ষা পান। ইটিভির ক্যামেরা পারসন রাসেলও ধাওয়ার শিকার হন এখানে। ওইদিনই রেলস্টেশন এলাকায় মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন নিউজ টুয়েন্টি ফোরের সাংবাদিক মাসুক হৃদয়। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে ইটিভি’র সাংবাদিক মীর মো. শাহীন হামলার শিকার হন। একাত্তর টিভির জালাল উদ্দিন রুমি ও আজকালের খবর প্রতিনিধি মোজাম্মেল চৌধুরী কাজ করতে গিয়ে অপদস্থ হন। তাদের মোবাইলে ধারন করা ভিডিও চিত্র কেটে মোবাইল সেট ফেরত দেয়া হয়।