কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের চারটি পয়েন্ট দিয়ে নিয়মিত ঢুকছে মাদক। নিরাপত্তায় জড়িতদের ‘ম্যানেজ’ করেই অসাধু বন্দিদের সিন্ডিকেট কারাগারের ভেতরে মাদক আনছে। ফলে এ বন্দিশালায় হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক।
সূত্র জানায়, দুই স্তরের নিরাপত্তা ভেদ করে এসব মাদক কারাগারে প্রবেশ করছে। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বিষয়টি বারবার আলোচনায় উঠে এলেও কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মিলছে না সদুত্তর। ৫ আগস্টের পর প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় কুমিল্লা কারাগারে মাদকের সাপ্লাই বেড়ে গেছে। বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মাদক প্রবেশের বিষয়টি খোদ কারা কর্তৃপক্ষই স্বীকার করেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’-কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে এ স্লোগান শুধুই কাগজে-কলমে। সরকার কারাগারকে মূলত সংশোধনাগারে রূপান্তরের চেষ্টা করলেও কারা অভ্যন্তরের অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে তা আলোর মুখ দেখছে না। কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক সিন্ডিকেট। ৫ আগস্টের পর প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তায় সক্রিয় হয়েছে কারা অভ্যন্তরের মাদক কারবারিরা। দুই স্তরের নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের ম্যানেজ করে ৪টি পয়েন্ট দিয়ে কারা অভ্যন্তরে মাদক আনা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রতিদিন বিকালে দেওয়ালের উত্তর পাশ থেকে পোঁটলা করে গাঁজা, ইয়াবা ও টেপেন্টান্ডল ভেতরে ছুড়ে ফেলা হয়। এ সময় নিয়োজিত কয়েদি (সাজাপ্রাপ্ত আসামি) ও কারারক্ষীরা তা গ্রহণ করে পয়েন্টে পয়েন্টে বিক্রেতা সিন্ডিকেটের হাতে পৌঁছে দেয়। এক্ষেত্রে সিসি ক্যামেরার আড়ালের স্পটগুলোকে বেছে নেওয়া হয়। তাছাড়া কোনো কোনো সময় সন্ধ্যার পরও এ পথে মাদক ঢুকানো হয়। এটি কারাগারে মাদক সাপ্লাইয়ের বড় একটি রুট।
সূত্রের দাবি, জেল সুপার আব্দুল জলিল এবং জেলার আব্দুল্লাহিল আল আমিন কারাগারে তাদের বিশ্বস্ত কারারক্ষী এবং কয়েদিদের নিয়ে অদৃশ্য সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। অনৈতিক সুবিধা পেয়ে মাদক প্রবেশের পয়েন্টগুলোয় সিন্ডিকেটে জড়িত কয়েদি ও কারারক্ষীদের ডিউটি দিয়ে থাকেন। কারা অভ্যন্তরের এ দুই নীতিনির্ধারক সবকিছু জেনেও না জানার ভান করেন। এছাড়া এসব কিছুই কারা অভ্যন্তরের সুবেদারদের নখদর্পণে রয়েছে। সুবেদাররাও ভাগ পেয়ে চুপচাপ থাকছেন। সব মিলে কুমিল্লা কারাগারে সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই চলছে সব অনিয়ম ও মাদকের কারবার। কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে লাখ লাখ টাকার মাদকের কারবার থেকে ভাগ পান কর্তাব্যক্তিরা।
সদ্য কারামুক্ত মুরাদনগর উপজেলার আনিসুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যার আগে দেওয়ালের ওপার থেকে মাদক ছুড়ে ভেতরে ফেলা হয়। ভিআইপি সাক্ষাৎ কক্ষ দিয়ে অনেক বেশি মাদক প্রবেশ করে। সাধারণ সাক্ষাৎ কক্ষ এবং খাবারের সঙ্গে মাদক ঢুকে। জেল সুপার, জেলার, সুবেদার ও কারারক্ষীরা সবকিছু জানেন। তাদের অদৃশ্য শেলটারে কয়েদি ও বিভিন্ন আসামি সিন্ডিকেট এসব মাদক ব্যবসা করে।
চান্দিনা এলাকার কারামুক্ত সুলতান আহমেদ বলেন, ভেতরে পানির মতো মাদক বেচাকেনা হয়। বাইরে মাদক পেতে কষ্ট হলেও ভেতরে খুব সহজে পাওয়া যায়। এসব নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তার সিটের নিচে ইয়াবা রেখে দিয়ে তাকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হয়। কারাগারে মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যরা খুব ক্ষমতাধর। তাদের সঙ্গে ভয়ে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত কথা বলে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারারক্ষী বলেন, যা শুনেছেন তা ঠিক। কিন্তু আমরা মুখ খুলতে পারব না। ছোট চাকরি করি, চোখ থাকতে অন্ধ, আর মুখ থাকতে বোবা। আপনার সঙ্গে কথা বলতে দেখলেও আমার বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে। আপনি চলে যান ভাই।
এ বিষয়ে জেলার আব্দুল্লাহিল আল আমিন বলেন, কারাগারের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকে, তা সত্য। ইতঃপূর্বে আমরা মাদক আটক এবং উদ্ধার করেছি। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে মাদকের বিষয়টি জোরালো আলোচনায় এসেছে। আমরা মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। মাদক সিন্ডিকেট থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করেন এ কর্মকর্তা।
জেল সুপার আব্দুল জলিল বলেন, মাদকের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ত্রৈমাসিক মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা মাদক প্রবেশের পয়েন্টগুলোয় টহল জোরদার করেছি। তাই মাদক আগের চেয়ে অনেক কমেছে। মাদক সিন্ডিকেটের কাছ থেকে সুবিধা গ্রহণের বিষয়টি সঠিক নয়।