নিজস্ব প্রতিবেদক
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন মেয়র পদে উপ নির্বাচনে হাতী প্রতীকের প্রার্থী নূর উর রহমান তানিম এর বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন কুমিল্লার সাবেক কয়েকজন ছাত্রনেতা। তানিমকে প্রতারক নেতা উল্লেখ করে এই নির্বাচনে ভোট না দিতে ও অর্থ সহয়তা না করতে কুমিল্লা নগরবাসীর প্রতি আহবানও জানান তারা। বুধবার (৬ মে) দুপুর দেড়টায় কুমিল্লা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ অভিযোগ ও আহবান করেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ।
সাংবাদিক সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাবেক ছাত্রনেতা আনোয়ার হোসেন মিঠু।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন,“ আমরা দীর্ঘদিন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ এবং মহানগর ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলাম। আমাদের রাজনীতির বিরাট একটা সময় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি নুর উর রহমান মাহমুদ তানিমের সাথে কাটিয়েছিলাম। এ রাজনীতির পথচলায় তাকে বাবা-মা’র পরে অন্ধের মত বিশ^াস করতাম। এ বিশ^াসের সুযোগে বিভিন্ন সময় চলচাতরী করে আমাদের অনেক কর্মীর কাছ থেকে ধার করার নামে নামে প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করেন। কখনও মুন্সেফ বাড়িতে বাড়ি ক্রয় করবেন, কখনও ব্যবসার অংশিদারিত্ব দিবেন অথবা ব্যক্তি গত প্রয়োজন দেখিয়ে অন্তত পক্ষে ৫০ জনের কাছ থেকে ১ কোটিরও বেশি টাকা গ্রহণ করেন যা আজ পর্যন্ত পরিশোধ করেননি। ‘ডিডিএল’ নামের একটা প্রতিষ্ঠান খুলে শতাধিক কর্মীর কাছ থেকে দুই লাখ টাকা করে নিয়ে আর ফেরত দেননি অনেক কর্মী জমি বিক্রি করে, স্ত্রী এবং মায়ের গহনা বন্দক দিয়ে তাকে লাখ লাখ টাকা প্রদান করে। আমরা বিভিন্ন সময়ে তার সাথে এবং তার মরহুম পিতার সাথে যোগাযোগ করে কোন টাকা এবং
গহনা উদ্বার করতে পারিনি। আমরা বিভিন্ন সময়ে পত্রিকার পাতায় ডেসটনি, ইউনিপে টু, যুবকের মত অনেক এলএলএম কম্পানীকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা শুনেছি কিন্তু এভাবে কুমিল্লার রাজনৈতিক ইতিহাসে কোন নেতা তার শতশত কর্মীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ইতিহাস আছে বলে আমাদেও জানা নেই।”
আনোয়ার হোসেন মিঠু আরও বলেন,“ আসন্ন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়ে তানিম যখন সততার বুলি আওরাচ্ছেন আর অন্যের বিরুদ্বে বিষেদগার করছেন তখন শতশতকর্মীর অর্থ আতœসাত এবং কর্মীদের সাথে প্রতারনার ভয়ংকর চিত্র কুমিল্লাবাসীর সামনে উপস্থাপন করছি। কুমিল্লার ছাত্রলীগের রাজনীতির ইতিহাসে অভ্যন্তরীন কোন্দলের রক্তক্ষয়ী অনেক ঘটনার মূল খলনায়ক এই নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম। ব্যক্তিগত রাজনৈতিক উচ্চ বিলাসী আকাংঙ্খা চরিতার্থ করার জন্য নিজের কর্মীদেরকে দিয়ে অন্যেও কর্মীদেও হত্যার এক নগ্নউৎসব সে চালু করেছিল। যার ফলে অনেক মেধাবি-সম্ভাবনাময়ী ছাত্রলীগের নেতা আমরা হারিয়েছি, অনেক মায়ের কোল খালি হয়েছে, অনেক কর্মী আহত হয়েছে এবং এই প্রতিহিংসার রাজনীতির জন্য আমাদেও মত অনেক কর্মী এবং তার পরিবার ধ্বংস হয়েছে। অনেক কর্মী তার হঠকারি রাজনৈতি ককর্মকান্ডের জন্য অসংখ্য মামলার আসামী হয়ে জেলখাটলে ও তাদের বাঁচানোর চেষ্টা না করে বরং তাদেও নামে বিভিন্ন ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক নেতাদেও কাছ থেকে চাঁদাবাজি করেন। কুমিল্লার রাজনীতিতে অনেক ভাঙ্গা গড়ার ইতিহাস আছে। একটু খেয়াল করে দেখেন, নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম যখন তার রাজনৈতিক নেতাকে ত্যগ কওে আলাদা রাজনৈতিক বলয় তৈরি করেন তার সাথে রাজনীতি করা একজন কর্মীও আজ তার সাথে সক্রিয় নাই। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে, সে শুদ্ধ ভাষায় সুন্দর সুন্দর কথা বলে -কর্মীদের কে মুগ্ধ করে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিতেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাসে কোন ভিপি অথবা জিএস এভাবে ভর্তি বানিজ্য কওে ছাত্রদেও কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন বলে আমাদেও জানা নেই। অবৈধ ভর্তিতে সম্মতি না দিলে বিভিন্ন সময়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অনেক শিক্ষকতার অপমানের শিকার হন। তারমধ্যে সাবেক অধ্যক্ষ আহম্মেদ ফজলুল কবির এবং ড. জয়নাল আবেদীন স্যার উল্লেখযোগ্য। নিজেকে তিনি একজন মেধাবি ছাত্র নেতা হিসেবে আপনাদের সামনে জাহির করলেও তিনি কুমিল্লা চৌয়ারা কলেজ থেকে নকল করে বিএ পাস করেন।”
সাবেক ছাত্রনেতারা আরও বলেন, “কুমিল্লার আপামর জনসাধারনের কাছে আমাদেও আকুল আবেদন এমন এক প্রতারক রাজনৈতিক নেতাকে ভোট দেয়াতো দুরের কথা তার সাথে সামাজিক সর্ম্পক রাখাও নিরাপদ নয়। ভর্তি বানিজ্য,মামলা বানিজ্যের মত নির্বাচনও তার একটা বানিজ্য। জনশ্রুতি আছে একজন সাবেক মেয়রকে সুবিধা দিতে টাকার বিনিময়ে নির্বাচনের মাঠে মিথ্যা এবং কুৎসা রটাচ্ছেন তিনি। ২০১২ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ কওে মরহুম জননেতা আফজল খানের বিরুদ্বে নিশ্চিত পরাজয় জেনেও নির্বাচন কওে ছিলেন শুধুমাত্র নির্বাচনের নামে তহবিল সংগ্রহ করার জন্য, তার জলন্ত সাক্ষি আজকের সাংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আমরা।সেই নির্বাচনে তিনি জামানত হারিয়েছিলেন। নির্বাচনের আগের ২দিন কর্মীদের থেকে নিজেকে আড়াল করে নিয়েছিলেন যেন কোন কেন্দ্র খরচ এবং এজেন্টের খরচ দিতেনা হয়। তার এই প্রতারনার জন্য সেই নির্বাচনের একজনকর্মীও আজ তার আশেপাশে নেই। তারপরেও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের বাইরের কিছু অচেনামুখ সাথে নিয়ে নির্বাচনের মাঠে আছেন শুধুমাত্র বিভিন্ন ব্যবসায়ী এবং প্রবাসীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির জন্য। আমরা আপনাদেও মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি যেন তদন্ত কওে তার বিরুদ্বে যথাপোযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহনকরা হয়। পাশাপাশি কুমিল্লা মানুষের প্রতি আমাদেও আহবান এই নির্বাচনেতাকে যেন কেউ অর্থ সহয়তা না করেন কারন তিনি বিজয়ী হওয়ার জন্য নির্বাচন করছেন না, বরং ২০১২ সালের মত আবারো বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজীর করে মোটা ংকের টাকা সংগ্রহের জন্য নির্বাচন করছেন। ”
সাংবাদিক সম্মেলনে সাবেক ছাত্রনেতা রোকনউদ্দির রোকন, হান্নানুর রহমান বেলাল ,জহিরুল ইসলাম, শাহীন কবির, শেখ রনি, ইকবাল হোসেন সহ অন্তত: ৩০ জন ভোক্তভোগী উপস্থিত ছিলেন।