১৬ উপদেষ্টার দুজনই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার

মাসুক হৃদয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুজন উপদেষ্টার বাড়িই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়।

জানা গেছে, ১৬ জন উপদেষ্টার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং সমাজ কল্যাণমূলক অধিকার ভিত্তিক সংগঠন— ব্রতী’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদের পৈতৃক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে। তারা দুজনই জেলার নবীনগর উপজেলার বাসিন্দা।

নবীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নবম গভর্ণর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের বাড়ি নবীনগর উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের দড়িশ্রীরামপুর গ্রামে। অন্তর্বর্তী সরকারের আরেকজন উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদের বাড়ি একই উপজেলার শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের নাসিরাবাদ গ্রামে। তার বাবা প্রয়াত খান সারওয়ার মুরশিদ ছিলেন বাংলাদেশের একজন বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদ।

এর আগে, ২০০৬ সালে অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বে গঠিত সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান এবং ২০০৭ সালে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) গোলাম কাদের ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা। ড. আকবর আলী খানের বাড়ি নবীনগর উপজেলার রসুল্লাবাদ গ্রামে এবং গোলাম কাদেরের বাড়ি কসবা উপজেলার পদুয়া গ্রামে।

উইকিপিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, সালেহউদ্দিন আহমেদ ১৯৬৩ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি এবং ১৯৬৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাশের পর ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। পরের বছর একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় প্রশাসনে সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি) ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন। এরপর ১৯৭৮ সালে কানাডার হ্যামিলটন শহরে অবস্থিত ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

তিনি ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড)-এর মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ১৯৯৬ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তিনি ১৯৯৮ সালে ব্র্যাকে ডেপুটি নির্বাহী পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। এছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক ছিলেন। তিনি ২০০৫ সালের ১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন এবং ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
গভর্ণরের পদ থেকে অবসরের পর ২০০৯ সাল থেকে তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ২০১৪ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ট্রাস্টি।

আরেক উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদের বিষয়ে উইকিপিডিয়া বলছে, তিনি সমাজ কল্যাণমূলক অধিকার ভিত্তিক সংস্থা– ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। সংস্থাটি ২০০১ সাল থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি বিশেষ করে আদিবাসী জনগণের অধিকার আদায়ে কাজ করে আসছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।

শারমিন মুরশিদ শেখ হাসিনা সরকারের সময় নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার ও নানা অনিয়ম নিয়ে কথা বলেছেন। দেশি বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার মতামত ও পরামর্শ গুরুত্ব সহকারে প্রচার হয়। সবশেষ ৭ জানুয়ারি ২০২৪ এর নির্বাচন বিষয়ে আমেরিকার একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে শারমিন মুরশিদ বলেছিলেন, ‘আমি এই নির্বাচনকে নির্বাচন বলি না।’ এরপর বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হয়।

তার বাবা প্রয়াত খান সারওয়ার মুরশিদ বাংলাদেশের একজন বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ এবং রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনসহ বাংলাদেশের সকল গণ-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের নেপথ্য রূপকারদের তিনি একজন। আজীবন তাঁর পেশা ছিল শিক্ষকতা। ১৯৪৭-এ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কিছু পর ইংরেজি ত্রৈমাসিক পত্রিকা নিউ ভ্যালুজ প্রকাশ করে তিনি দেশের বিদ্বান সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলন।

জীবদ্দশায় তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) এবং পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন।

শারমিন মুরশিদের মা নূরজাহান বেগম স্বাধীনতা পরবর্তীকালে আওয়ামী সরকারের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

Post Under