এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বন্যার প্রাদুভার্ব দেখা দিয়েছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির কারণে পরিস্থিতি অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল, কয়েক স্থানে তলিয়েছে বেড়িবাঁধ। মেঘনা নদীর আশুগঞ্জ পয়েন্টে ও তিতাস নদীর চারটি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার নবীনগর, নাসিরনগর ও সরাইল উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে।
মেঘনার পানি বৃদ্ধিতে হুমকিতে আশুগঞ্জ শহর। সতর্কাবস্থায় উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। তিতাসের পানি বৃদ্ধিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর রক্ষা বাঁধ তলিয়ে গেছে। জেলা সরাইল উপজেলা এলাকার সরাইল-অরুয়াইল সড়ক পানির নিচে।তাছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকার তলিয়ে গেছে রাস্তা ঘাট, আউশ ধান, ফসলী জমি, বসতভিটা। পানিবন্দি হয়ে বহু পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে উচু স্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রতি মুহূর্তেই তলাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রঞ্জন কুমার দাস জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীর চারটি পয়েন্টে বিপদ সীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে তিতাস নদীর নবীনগর পয়েন্টে বিপদ সীমার ৭৭ সেন্টিমিটার, সরাইলের আজবপুর পয়েন্টে ৫৪ সেন্টিমিটার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের কুরুলিয়া পয়েন্টে ৪৭সেন্টিমিটার এবং গোকর্ণঘাট পয়েন্টে বিপদ সীমার ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে মেঘনা নদীর পানি এখনো বিপদ সীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচে আছে। প্রতিদিনই মেঘনায় অন্তত ৭-১০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেঘনা, তিতাসের পানি বৃদ্ধিতে জেলার নবীনগর উপজেলার নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। অন্যদিকে হাওড়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও আখাউড়া পয়েন্টে বিপদ সীমার ২৯ সেন্টিমিটার নিচে ও গঙ্গাসাগর পয়েন্টে বিপদ সীমার ৭৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে পানি বৃদ্ধির বিষয়টি নজরদারি করা হচ্ছে।
জেলার নাসিরনগর উপজেলার ধলেশ্বরী এবং লঙ্গন নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নিম্নাঞ্চলের অনেক বাড়িঘর, পুকুর, রাস্তা-ঘাট, ফসলী জমি, সবজি বাগান তলিয়ে গেছে। সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, মৌলভীবাজারের মনু এবং হবিগঞ্জের খোয়াই নদীর পানি বৃদ্ধির চাপ পড়েছে নাসিরনগর উপজেলার ওই দু’টি নদীতে। নিচু এলাকার অনেকেই বসতভিটা ছেড়ে চলে গেছেন নিরাপদ আশ্রয়ে। উপজেলাার গোকর্ণ ইউনিয়নের প্রায় ৭০টি পরিবার বসভিটা ছেড়েছে। বুড়িশ্বর ইউনিয়নের আশুরাইল গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি, দু’টি রাস্তা পানিতে ডুবে যাওয়ায় চলাচল ব্যাহত হচ্ছে চলাচল। তাছাড়াও উপজেলার চাতলপাড়, ভলাকুট, গোয়ালনগর ইউনিয়নের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ ২৭৫ হেক্টর আউশ, ৭৫ হেক্টর বোনা আমনের তালিকা করেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা আশরাফী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কিছু এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থ ১৩টি পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেন। নাসিরনগর আসনের সংসদ সদস্য বি.এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা নির্ধারণ করতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে কোনো দুর্যোগে আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে আছি।’ দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থরা মনোবল না হারিয়ে ধৈর্য্যরে সাথে দুর্যোগ মোকাবেলা করতে জনগণের প্রতি আহবান জানান।
এদিকে চলমান অতিবর্ষনে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার রামরাইল ইউনিয়নের সেন্দ ভূমি অফিস হুমকির মুখে পতিত। ভবনে দেখা দিয়েছে ফাটল। শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ বড়ুয়া সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন বলেন, ‘তিতাস নদীর পানি বেড়ে সরাইল ও নাসিরনগর উপজেলার কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে নগদ টাকা এবং চালসহ পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুদ আছে।