কুমিল্লা প্রতিনিধি
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে সাহাবুদ্দিন নামে এক যুবক ও তার পরিবারের সদস্যদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাহাবুদ্দিন উপজেলার বাইশগাঁও ইউনিয়নের শাকতলা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে। অভিযোগ রয়েছে, তাদের এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলায় একই গ্রামের সাইদুল হক ওরফে সাদু নামে এক ব্যক্তির পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে। এছাড়া শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে স্থানীয় বাজারের দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট এবং এলাকার মানুষকে মারধরের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে চালানো এমন একটি হামলার ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এদিকে, এসব ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার (১০ আগস্ট) দুপুরে শাকতলা গ্রামে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই গ্রামের মৃত ওসমান আলীর ছেলে ভুক্তভোগী সাইদুল হক সাদু।
সংবাদ সম্মেলনে সাইদুল হক অভিযোগ করেন, পিতার প্রশ্রয়ে শাহাবুদ্দিন ও তার ভাইয়েরা মিলে এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তারা বিভিন্ন সময় আমাদের কাছে চাঁদাও দাবি করেছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করায় গত ৩ জুলাই সকালে শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে ১০/১২ জন সন্ত্রাসী পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমার ঘরে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা আমার স্ত্রীকে বেধড়ক মারধর করে আমার ঘরে থাকা স্বর্ণালঙ্কারসহ নগদ টাকা লুট করে। ওই সময় আমাদের বাঁচাতে আসলে সন্ত্রাসীরা আমার ভাবি চাঁন বানুর (৬০) মাথায় এবং আমার নাতি সাকিবের কপালে-নাকে কোপ দেয়। এছাড়া আমার প্রতিবেশী হাবিবুর রহমানের হাতে-বুকে কোপ দেয় এবং তার ছেলে শাকিলের পায়ের রগ কেটে ফেলে তারা। এরপর ওই সন্ত্রাসীরা শাকতলা বাজারে গিয়ে ৫/৬ টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এজন্য বাজারের এক ব্যবসায়ীও তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন। এছাড়া সেদিন পথিমধ্যে কয়েকজন গ্রামবাসীকেও এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে তারা।
সাইদুল হক আরও বলেন, বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে মনোহরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় শাহাবুদ্দিন, তার ভাই সালেহ আহমদ, মোহন, তার পিতা আবুল কাশেম, কাশেমের ভাতিজা রাকিব, আলমগীর হোসেন, শাহাবুদ্দিনের সহযোগী সন্ত্রাসী আরিফ ও মনিরকে আসামি করা হয়েছে। তবে পুলিশ এসব সন্ত্রাসীদের এখনো গ্রেফতার করেনি। যার কারনে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
তিনি আরও বলেন, এইসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ও মামলা থেকে নিজেদের বাঁচাতে শাহাবুদ্দিনের হাতের আঙুল তারা নিজেরা কেটে ফেলে আমার পরিবারের সদস্যসহ মোট ৯ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ তাদের গ্রেফতার না করে উল্টো আমাদের নিরীহ লোকজনকে গ্রেফতার করাসহ হয়রানি করছে। আর আমাদেরকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য সন্ত্রাসীরা হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আবুল কাশেম গতকাল রোববারও কুমিল্লার আদালতে প্রকাশ্যে আমাকে হুমকি দিয়ে মামলা প্রত্যাহার করতে বলেছে। তাদের এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি দ্রুত এসব সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক।
এদিকে, এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে অভিযুক্ত শাহাবুদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে তার পিতা মো.আবুল কাশেম এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কাশেম দাবি করেন, তিনি এবং তাঁর ছেলেদের বিরুদ্ধে করা এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তারাই (অভিযোগকারীরা) আমার ছেলেকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে। সে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মনোহরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হালিম বলেন, এসব ঘটনায় দুই পক্ষই থানায় মামলা করেছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছে। আবার অনেক আসামী জামিনে এসেছে। মামলাগুলোর তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।