কুমিল্লা (বুড়িচং) প্রতিনিধি:
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশীমুল ইউনিয়নের মোর্শেদা বেগম বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম, অর্থ বানিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতা ও প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান লিটনের বিরুদ্ধে। তিনি ওই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। এরই প্রেক্ষিতে গত ১৭ অক্টোবর লিখিত ও ভাইবা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় মোট চারজন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন।
পরীক্ষার শুরুর আগেই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান লিটন বিদ্যালয়ে এসে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিকে কে নিয়োগের প্রশ্ন না করার জন্য চাপ ও হুমকী দেন। লিটনের খারাপ ব্যবহার ও হুমকীতে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকেন।
পরবর্তীতে বুড়িচং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মান্নান ও বুড়িচং আনন্দ পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়রে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলামকে দিয়ে প্রশ্ন করান লিটন।
ওই প্রশ্নের পরীক্ষায় বিল্লাল হোসেন নামের একজন প্রার্থী প্রথম স্থান অর্জন করেন। কিন্তু তাতেও খান্ত হননি মিজানুর রহমান লিটন। তার পছন্দের প্রার্থী ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উত্তম কুমার সূত্রধরকে পরীক্ষায় প্রথম দেখিয়ে নিয়োগ দেয়ার অপচেষ্টা করেন। জানা গেছে, উত্তম কুমার সূত্রধর পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছেন। উত্তম কুমারকে নিয়োগে না দেয়ার মিজানুর রহমান লিটন বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন মাস্টারকে অপদস্ত ও গালাগাল করেন এবং প্রধান শিক্ষকের পাঞ্জাবী ছিড়ে নাজেহাল করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রার্থী জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও বুড়িচং পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও দুই প্রার্থীর কাছ থেকে নিয়োগ পাইয়ে দেয়ার নামে টাকা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বুড়িচং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল মান্নান বলেন, পরীক্ষায় বিল্লাল হোসেন নামের একজন প্রার্থী প্রথম হয়েছেন। আমরা তাকে নিয়োগের সুপারিশ করে এসেছি। নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন এগুলো মিথ্যা কথা। আমি কারো কাছ থেকে টাকা নেইনি।
বুড়িচং আনন্দ পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান লিটন তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার জন্য আমাদের উপর চাপ প্রয়োগ করেন। তাছাড়া, প্রধান শিক্ষক তৌহিদুর রহমান ও সভাপতি ফরিদ উদ্দিন মাস্টারকে সকলের সামনেই অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও নাজেহাল করেন। কোন প্রার্থীর কাছ থেকে নিয়োগ পাইয়ে দেয়ার নামে অর্থ নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন মাস্টার বলেন, নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে একটি অর্থ বানিজ্য হয়েছে। যারা প্রশ্ন করেছেন তারা আগেই প্রার্থীকে প্রশ্ন সরবরাহ করে দিয়েছেন বলে জেনেছি। তারপরেও পরীক্ষায় যে প্রথম হয়েছে তাকে নিয়োগের জন্য আমি অভিমত দিয়েছি। প্রধান শিক্ষক সহ আমরা সকলেই চেষ্টা করেছি যিনি প্রথম হয়েছে তাকে নিয়োগ দেয়ার জন্য কিন্তু মিজানুর রহমান লিটনের কারনে তা পারিনি। লিটন তার ক্ষমতার দাপটে তাঁর নিজের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁর কথা না শোনার কারনে আমাকে অপমান, অপদস্থ করে। শুধু তাই নয়, প্রধান শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেন।
বুড়িচং উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, উত্ত বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।