এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সেবা কার্যক্রম কন্ধ। টানা এক সপ্তাহ ধরে হচ্ছেনা ময়লা-আবর্জনা অপসারণ। এর অন্যতম কারণ সেবা প্রদানের মালামাল লুটপাট করাসহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া। সবই হয়েছে হেফাজত ইসলাম আহুত হরতাল চলাকালে সৃষ্ট তাণ্ডবে। হেফাজত ইসলামের কর্মী সমর্থকদের হামলা-অগ্নিসংযোগে ঘটনায় প্রায় ৭২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পৌরমেয়র মিসেস নায়ার কবির সাংবাদিক সম্মেলন করে পৌরসভার ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ তুলে ধরে বলেন, আবারো নাগরিক সেবা বিশেষ করে ময়লা আবর্জনা অপসারণে উদ্যোগ নিচ্ছেন।
শনিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে পৌরমেয়র মিসেস নায়ার কবিরের পাইকপাড়ার বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ২৮ মার্চ হেফাজতের হরতাল চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা কার্যালয় ও আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তনে হামলা হয়। আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় সবকিছু। পৌর ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলা আগুনে পুড়ানো হয়েছে। নিচের গ্যারেজেও আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে মালামাল। পুরো পৌরসভা ভবনজুড়ে পোড়া গন্ধ। গ্যারেজে রাখা গাড়ি পুড়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে পৌরসভায় রক্ষিত বিভিন্ন নথি। পৌরবাসীর দেড়শ’ বছরের রেকর্ডপত্র পুড়ে হয়েছে ভস্মীভূত। পৌরসভার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হেফাজত কর্মী-সমর্থদের ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগে পৌরসভা কার্যালয়ের ২০টি স্টিলের আলমিরা, ২৫টি কাঠের আলমিরা, ১৮টি কম্পিউটার, পাঁঁচটি ল্যাপটপ, চারটি ফটোকপিয়ার মেশিন, ৩৪টি টেবিল, সাতটি সেক্রেটারিয়েট টেবিল, ১১৫টি চেয়ার, পাঁচটি এসি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এছাড়াও স্বাস্থ্য শাখার ১২টি ডিপ ফ্রিজ, চারটি সাধারণ ফ্রিজ, ভ্যাকসিন, সিলিং ফ্যান, স্টোরে রক্ষিত ১০ হাজার এলইডি বাতি, তিন হাজার বাতি সেড, ৫০ কয়েল বৈদ্যুতিক তার, ১৬টি গাড়ি, তিনটি রোড রোলার, একটি মশক নিধন গাড়িসহ আরও অনেক জিনিসপত্র ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট করা হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ
পৌরসভার সংরক্ষণ শাখার মালামাল, স্টেশনারি মালামাল, বাড়ির প্ল্যান অনুমোদনের পে-অর্ডারসহ নথি, চেক রেজিস্টার, ইস্যু রেজিস্টার, ক্যাশ বই, অ্যাসেট রেজিস্টার, সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত নথি ও সার্ভিস বই, সকল রেজিস্টার, ঠিকাদারদের বিল-জামানতের নথিসহ বিভিন্ন মালামাল পুড়ে গেছে। পৌরসভার মালিকানাধীন ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তনটিও আগুনে পুড়িয়ে দেয় হেফাজতের কর্মী-সমর্থকরা। এতে মিলনায়তনের পাঁচশ’ চেয়ার, ২০ সেট সোফা, ২০টি ৫ টনের এসি, ১০টি ২টনের এসি এবং ১৫০টি সিলিং ফ্যান আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। হামলাকারীরা পৌরসভার ট্রাকে ময়লা অপসারণের মেশিনটিও ধ্বংস করে ফেলায় ময়লা অপসারণ করা যাচ্ছে না, এতে শহরের বিভিন্ন সড়কের মোড়ে ময়লা আবর্জনার স্তুপ জমা হয়েছে। গত কয়েকদিনে এসব বর্জ্য সরাতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। ফলে পৌরবাসী মারাত্মক দুর্গন্ধে চরম দুর্ভোগে পড়েছে।পৌরসভার সকল কার্যক্রম রয়েছে বন্ধ। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
পৌরবাসীর দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে এহেন প্রতিকুল অবস্থায় শনিবার দুপুরে পৌরমেয়র মিসেস নায়ার কবিরের পাইকপাড়ার বাস ভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। মেয়রের এই বাসভবনও হেফাজতের হামলার শিকার হয়। পৌরমেয়র তার লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, গানপাউডার ও পেট্রোল দিয়ে পৌরসভা কার্যালয় ও পৌর মিলনায়তনের সবকিছু জ্বালিয়ে দিয়েছে। হেফাজত ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের সাথে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা এবং বিগত পৌরসভা নির্বাচনে পরাজিত দুই প্রার্থীর সমর্থকেরা পৌরসভা ভবন, পৌর মিলানায়তনে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে। এসময় ভীতসন্ত্রস্ত পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাশ্ববর্তী সুইপার কলোনিতে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন। এ ঘটনায় পৌরসভার সচিব বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা হামলাকারীদের আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। হামলাকারীরা আমার বাসায়ও ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ -লুটপাট চালায়। তারা আমার বাসার নিচের একটি দোকানের মালামাল লুটপাট করেছে। সংবাদ সম্মেলনে পৌরসভার কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।