করোনা পজিটিভ সাংবাদিক সোলেমান খানের আবেগঘন স্ট্যাটাস
ডেক্স রিপোর্ট:
মহামারী করোনা ভাইরাস প্রেক্ষাপটে ফেইসবুেক দেয়া সাংবাদিক সোলেমান খানের স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো:
স্থবির হয়ে যাচ্ছে আমাদের যাপিত জীবন।করোনার ফলে কর্মহীন মানুষ প্রতিদিন শহর ছাড়ছে।ছোট ছোট ব্যবসায়ী,প্রাইভেট চাকুরে,পোশাক কারখানার শ্রমিক,বেসরকারী স্কুল,কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক,প্রাইভেট টিউটর র সবাই দিশেহারা।দীর্ঘবছর রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে বাস করা মানুষগুলো বাধ্য হয়ে গ্রামে ফিরছে। বাসা ভাড়া দিয়ে সংসার চালানো দু:সাধ্য ।তাদের চোখে মুখে হতাশার হাতছানি,অনিশ্চিয়তা।
শহরে লেখাপড়া করা ছেলেমেয়েরা চোখের জলে গ্রামে ফিরছে দীর্ঘদিনের সহপাঠীদের রেখে।অচেনা অজানা পরিবেশে বাকী দিনগুলো কাটাতে হবে।আর কী যাওয়া হবে শহরে?এর চেয়ে বেঁচে থাকা জরুরী।করোনা কখন কবে দূর হবে কেউ জানে না।
গ্রামের অবস্থাও ভালো নয়।ইতোমধ্যে সারা দেশ করোনায় ছড়িয়ে গেছে।আমার কখনো কখনো মনে হয় একাত্তরের দু:সহ দিনগুলোতে ফিরে যাচ্ছি।আমরা কে কখন এই করোনায় হারিয়ে যাই কে জানে?এরপরও মানুষ সংগ্রাম করছে বেঁচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে।মানুষ চিরকালই সংগ্রামী।পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকে মানুষ সংগ্রাম করে টিকে থেকে পৃথিবীকে সাজিয়েছে আপন মহিমায়।সারা পৃথিবী এখন অস্থির।এরই মধ্যে ৩টি পরাশক্তি চীন,ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তে উত্তেজনা।জীবনের এই প্রান্তে
এসে নিজের চেয়ে আমাদের ভবিষ্যত বংশধরদের কথাই ভাবনায় ঘুরপাক খায়।অথচ একশ্রেণির অহংকারী মানুষ করোনা আক্রান্তদের নিয়ে ফেসবুকে ট্রল করছে। তবে হাজার হাজার মানুষ ভালোবাসা দেখিয়েছে।দল মত ,ধর্ম ,বর্ণ নির্বিশেষে পুরো এলাকায়,দেশে বিদেশে মসজিদে মন্দিরে ,গির্জায়,প্যাগোডায় প্রার্থনা করেছেন।হাজার হাজার স্বজন,শুভাকাঙ্খী,শুভানুধ্যায়ী ,সাধারন মানুষ খোঁজ নিয়েছেন ,কান্নাকাটি করেছেন।কত মানুষ কত কিছু পাঠিয়ে কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন।মানব জীবনের এখানেই স্বার্থকতা।আবার কেউ উ্চ্চ স্বরে হাইড্রোলীক হর্ন এর মাইক দিয়ে পাড়ার মানুষদের মধ্যে পেনিক সৃষ্টি করেছেন।নিজের অস্তিত্ব জাহির করেছেন।
তাদের মনে রাখা দরকার এদেশের কমপক্ষে ৮০% মানুষ করোনায় আক্রান্ত হবে।গর্ব করার কিছু নেই। আমরা যারা মাঠে মানবতার জন্য কাজ করেছি আক্রান্তও হয়েছি।করোনায় মানুষকে মানবিক হওয়ার দরকার ছিলো কিন্তু পর্যবেক্ষন করলাম মানবতা নেই ,আছে ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা।আমি ধন্য আমার স্ত্রী,ছেলেমেয়েরা আমাকে তাদের ভালবাসা দিয়ে ,সেবা দিয়ে আগলে রেখেছে।হাসপাতালে যেতে দেয়নি।আমার সেবা করতে গিয়ে হয়তো বড় মেয়ে পজিটিভ হয়।আমাদের নিয়ে যারা ট্রল করছেন,মজা করেছেন,আমার পরিবারের সদস্যদের মানসিক যাতনা দিয়েছেন,
মন্তব্য করছেন এতে দু:খ নেই।আপনারা আপনাদের ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা ও পারিবারিক ঐতিহ্যের পরিচয় দিয়েছেন।তবে আমি দোয়া করছি
আমার প্রতি যাদের শত্রুতা বা বিদ্বেষ আছে তাদেরও যাতে করোনা পজিটিভ না হয়।সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন,সুরক্ষিত থাকবেন।বিজ্ঞান আপনাকে সর্বদা সহায়তা করবে।
পরিশেষে হে প্রভূ দয়াময়, তোমার সৃজিত সবকিছু তুমিই রক্ষা করো।
সোলেমান খান
একজন করোনা পজিটিভ