এমদাদুল হক সোহাগ:
কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছা বাস টার্মিনালের পশ্চিমপ্রান্তের প্রবেশ মুখের সড়কটিতে বড় বড় গর্তের কারনে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। সৃষ্টি হচ্ছে দুর্ভোগ ও যানজট। সামান্য বৃষ্টি হলেই সমস্যার নতুন মাত্রা যোগ হয়ে জলজট সৃষ্টি হচ্ছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা শাসনগাছা রেলওভারপাসের নিচে পশ্চিমপ্রান্তের উত্তরপাশের সড়কটি বেহাল হয়ে পড়ে আছে। বৃষ্টির পানি জমে থাকার কারনে দুর্ভোগ যেন অনেকটাই বেড়ে গেছে। বড় বাসগুলো গর্তে পড়ে আটকে যাচ্ছে, ঘষা লাগছে ওভারপাসে। এতে করে কোটি টাকার যানবাহন মালিক ও চালকেরা যেন অসহায় নির্বাক থাকা ছাড়া আর কোন উপায় দেখছে না। তবে তাদের চোখে মুখে কষ্ট ও তীব্র ক্ষোভ সহজেই প্রকাশ পাচ্ছে।
বড় গর্তগুলোতে গাড়ির চাকা পড়ে বাম্পার, মার্টগেট, বডি নষ্ট হচ্ছে। ওভারপাসে ঘষা লেগে নষ্ট হচ্ছে লুকিং গ্লাস, গাড়ির রঙ, জানালা। অনেক সময় বাসগুলো বিকল হয়েও পরছে। এসময় রেকার এনে টেনে গাড়ি তুলতে হয়। যার ফলে সড়ক বন্ধ হয়ে ওভারপাসের গোড়ায় যানজট তৈরী হয়।
অপরদিকে, যানজট নিরসনে টার্মিনালের গাড়ি যাতে ওভারপাসের পশ্চিমপ্রান্তে পার্কিং ও না দাড়াতে পারে সেজন্য জেলা পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে মূল সড়কে আলাদা সড়ক বিভাজক তৈরী করা হয়েছে। এই সড়ক বিভাজকের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে শাসনগাছা ওভারপাসের পশ্চিম প্রান্তে না কোন জটলা ও যানজট তৈরী না হয়। কিন্তু এই প্রচেষ্টাও ভেস্তে যাচ্ছে বেহাল সড়কটির কারনে।
আদর্শ সদর উপজেলার সাতরা এলাকার বাসিন্দা ও পরিবহন শ্রমিক মো: হেলাল উদ্দিন বলেন, এই সড়কের কোন মা-বাপ নেই। কয়েক বছর ধরে আমাদের সীমাহীন দুর্দশা কেউ দেখছে না। এমন কোন দিন নেই যে সড়কটিতে দুর্ঘটনা হচ্ছেনা। বিশেষ করে ড্রেন দিয়ে বৃষ্টির পানি বের হতে পারেনা। একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে থাকে।
সানি মবিল হাউজের স্বত্বাধিকারী মো: সামসুল হক বলেন, রাস্তার এমন বাজে অবস্থা যেটা দিয়ে গাড়ি চলাচল করা খুবই বিপদজনক ও কষ্টকর। প্রতিদিনই এখানে গাড়ি আটকে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। জনমানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। আমরা যারা এ রোডের ব্যবসায়ী আছি, আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত। আমাদের অনেক কাস্টমার বেহাল সড়কের কারনে আসতে চায়না। আমাদের দাবি দ্রুত সড়কটি যাতে মেরামত করা হয়।
ফারজানা ট্রান্সপোর্টের চালক লিটন মিয়া বলেন, আমাদের কষ্ট কেউ দেখেনা। আপনারা একটু ভালো করে নিউজটা কইরেন। আমাদের নতুন নতুন গাড়িগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিই বিভিন্ন পার্টস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমার গাড়ি গর্তে আটকে গিয়েছে। ক্যান্টনমেন্ট থেকে দেড় হাজার টাকার ক্রেন এনে উঠাতে হয়েছে। সারা দিনে যা ইনকাম তার চেয়ে ক্ষতি হলো বেশী।
পাপিয়া বাস সার্ভিসের চালক গিয়াস উদ্দিন বলেন, বড় গর্তে বাস পড়ে গেলে সেটার নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়না। সরু রাস্তায় একটু হেলে গেলেই ওভারব্রিজে ধাক্কা লেগে বাসের ক্ষতি হচ্ছে। আমরা খুবই অসহায় অবস্থায় আছি।
বাসের কয়েকজন যাত্রী বলেন, এমন দুর্ভোগ প্রতিদিনই পোহাতে হচ্ছে। আমাদের দাবি, কর্তৃপক্ষ যাতে দ্রুত সমস্যাটি সমাধানে এগিয়ে আসে।
কুমিল্লা জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) মো: এমদাদুল হক বলেন, শাসনগাছা বাস টার্মিনালের পশ্চিমপ্রান্তের যানজট নিরসনে জেলা পুলিশ সুপার মহোদয়ের প্রচেষ্টায় ও দুরদর্শিতায় মুল সড়ক থেকে ওভার পাসের গোড়া পর্যন্ত আলাদা লেন তৈরী করা হয়েছে। যাতে করে টার্মিনালের বাসগুলো সুশৃঙ্খলভাবে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু পশ্চিমপ্রান্তে টার্মিনালে প্রবেশের সড়কটি অত্যন্ত নাজুক হওয়াতে আমাদের উদ্যোগটি সফল হচ্ছেনা। বেহাল সড়কে গাড়ি আটকে প্রতিদিনই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। যা নিরসনে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী রেজা ই রাব্বী সাংবাদিকদের বলেন, শাসনগাছা ওভারপাসের নিচে ও পশ্চিমপ্রান্তে টার্মিনালে প্রবেশের সড়কটি আরসিসি ঢালাই সড়ক নির্মান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। অল্প সময়ে প্রকল্পটি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাবে। আগামী বর্ষার আগেই এই সমস্যা লাঘব হবে ইনশাল্লাহ।