বাঁশ শিল্পের আয় দিয়ে চলছে বরুড়ার বেগারতাপুর গ্রামের ৭০ টি পরিবার
এমদাদুল হক সোহাগ
বাঁশ শিল্প বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম একটি ধারক। একসময় বাঙালির ঘরে ঘরে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহৃত হতো। কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেসব বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র স্থলে বিভিন্ন প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহৃত হওয়ার ফলে কমতে শুরু করেছে বাঁশ দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র। আগেকার দিনে কাঁচামাল হিসেবে বাঁশের সহজলভ্যতা ছিল। বর্তমানে নগরায়নের ফলে সে সহজলভ্যতা আর নেই। বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের বাতাইছড়ি নতুন বাজার সংলগ্ন বেগারতাপুর গ্রামের নমঃশূদ্র পাড়ার ৭০ টি পরিবারের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন বাঁশের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র। পূর্বপুরুষেরা এ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে এসেছেন, এখনো চলছে বাঁশ শিল্পের কাজ। বিশেষ করে মহিলারা এই কাজ বেশি করছেন। লালমাই পাহাড় থেকে আশা বাঁশ পাইকারদের কাছ থেকে কিনে সেই বাঁশ থেকে টুকরি, হাঁস মুরগির খাঁচা, পোলো, কুলা, ধারী, চাটাই ইত্যাদি বানানো হয়। সকাল হলেই পাড়ায় পাড়ায় মহিলারা ঘরের উঠোনে একত্রে বসে বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র বানানো শুরু করেন।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে গল্প আর সুখস্মৃতি একে অন্যের সাথে ভাগাভাগি করা। রান্নাবান্নার কাজ শেষে আবারো শুরু হয় সেই কাজ। এমন করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকে কাজ। কাজ শেষ হলে স্থানীয় পাইকারেরা বিভিন্ন দামে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যান। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বর্তমানে হাঁস মুরগির খাঁচার চাহিদা অনেক বেশি। সেজন্য হাঁস মুরগির খাঁচা বেশি বানানো হচ্ছে। একটি হাঁস মুরগির খাঁচা পাইকারদের কাছে ৩৫ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি করা হয়। জানা যায় বর্তমানে এটিকে বাঁশ এর মূল্য ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বাঁশ বিক্রেতাদের কাছ থেকে কিনতে হয়। নমঃশূদ্র পাড়ায় যারা থাকেন তাদের অধিকাংশ পরিবারের ই নিজস্ব কোন জায়গা বা ঘর নেই। অন্যের বাড়িতে ভাড়া থেকে বাঁশ দিয়ে এসব জিনিসপত্র বানিয়ে বিক্রি করে কোন রকমে সংসার চালাচ্ছেন তারা। অভাব অনটনের কারণে সন্তানদের স্কুলে দিতে পারছেন না আবার স্কুলে পাঠালেও বেশি দূর পড়াতে পারছেন না।
নমঃশূদ্র পাড়ার ৭৫ বছর বয়সী নারী তুলসী বালা বলেন, আগেকার সময়ে বাঁশের তৈরি এসব জিনিসপত্রের অনেক চাহিদা ছিল। তাছাড়া বাঁশের দাম কম ছিল, ছিল সহজলভ্যতা। এখন বাঁশ দাম অনেক বেশি। এ পেশায় সংসার চালাতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাছাড়া দ্রব্যমূল্যের দাম যে হারে বাড়ছে সে হারে আমাদের তৈরি এসব পণ্য সামগ্রীর দাম বাড়েনি। যার কারণে বর্তমান সময়ে টিকে থাকা মুশকিল।
শেফালী রানী নামের আরেকজন বলেন, জন্মের পর থেকেই এ কাজ করছি। এসব কাজ ছাড়া আমাদের আর কিছু জানা নেই যার কারণে বাধ্য হয়েই এসব কাজ করতে হচ্ছে। আমরা এই শিল্পকে আঁকড়ে ধরে রেখেছি কিন্তু সরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতা, ঋণ বা ভর্তুকি পাচ্ছিনা। তিনি বলেন আশা এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকার ঋণ নিয়েছেন। প্রতি সপ্তাহে ৫০০ টাকার কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। ২০ হাজার টাকার কিস্তি নিলে ৪৬ সপ্তাহ ৫০০ টাকা করে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হয়। কিস্তির টাকা, সংসার সব মিলিয়ে সন্তানের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না।
মঞ্জ রানী দাস বলেন, সব কাজ করে তিন বেলা খেতেই অনেক কষ্ট হয়। সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারছিনা। আমাদের অধিকাংশ মানুষের নিজস্ব জায়গা ঘর নেই। অন্যের বাড়িতে ভাড়া থেকে কাজ করে না মরে বেঁচে আছি।
পাড়ার বয়োবৃদ্ধ রঞ্জিত চন্দ্র দাস বলেন, গ্রামের মুসলমান পরিবার গুলোর চেয়ে হিন্দু পরিবারগুলো তুলনামূলক কম সহযোগিতা পেয়ে থাকে।
মলিন চন্দ্র দাস বলেন, গত শীতে আমাদের পাড়ার চার থেকে পাঁচ জন শীতের কম্বল পেয়েছে। স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বারের কাছ থেকে এ কম্বলগুলো আমরা পেয়েছি। অসহায় গরিব মানুষের প্রয়োজনের তুলনায় যা খুবই সামান্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা বরুড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আনিসুল ইসলাম বলেন, ওই এলাকার বাঁশ শিল্পের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে তাদের সমস্যা গুলো জানার চেষ্টা করব। শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এবং তাদের সহযো