নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুমিল্লায় শ্বশুর বাড়িতে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় যুবক ইমতিয়াজ হোসেন অপুর (৩০) মৃতদেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে নিহতের পরিবারের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা হলেও পরিবারটির দাবি এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ঘটনাটি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার লক্ষনপুর ইউনিয়নের লক্ষনপুর (বাজার) গ্রামের।
মামমলার অভিযোগ ও পরিবার সুত্রে জানা যায়, নিহত ইমতিয়াজ হোসেন অপু বিগত কয়েক বছর ধরে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বাখরাবাদ এলাকায় চার নম্বর গেটে স্টেশনারী ব্যবসায় করতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার কেরোয়া গ্রামে। তার বাবার নাম সামছুল হক। বোনের বাড়ি সুবাদে তিনি কুমিল্লায় ব্যবসায় করতেন ও থাকতেন। বিগত দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার লক্ষনপুর ইউনিয়নের লক্ষনপুর গ্রামের আবুল হোসেনের মেয়ে আছমা আক্তারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দাম্পত্য জীবনে তাফছির ইবনে ইমতিয়াজ নামের একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে। ইমতিয়াজ হোসেন অপু পেশায় ছিলেন ব্যবসায়ী। বিয়ের কিছুদিন পরই স্ত্রী আছমা আক্তারের সাথে পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হতে থাকে। এক পর্যায়ে স্ত্রীর কথায় গত ছয় মাস আগে কুমিল্লা থেকে ব্যবসা বিক্রি করে শ্বশুর বাড়িতে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছেন।
এরই মধ্যে স্ত্রী ও স্ত্রীর পরিবারের সাথে অর্থনৈতিক সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অপুর ঝামেলা বাড়তে থাকে। স্ত্রী, শ্বশুর বাড়ির লোকজনের দেয়া মানুষিক অত্যাচারের বিষয়টি স্বজনদের একাধিকবার জানান অপু। গত ১২ জানুয়ারি বেলা ৩টায় ইমতিয়াজ হোসেন অপুর বড় ভাই ইমন হোসেন পাভেল জানতে পারেন অপু গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। খবর পেয়ে মনোহরগঞ্জ ছুটে যান নিহত ইমতিয়াজ হোসেন অপুর বড় ভাই সহ অন্যান্যরা। তারা গিয়ে লাশ পুলিশের হেফাজতে দেখতে পান। ঘটনার পরদিন ১৩ জানুয়ারি মনোহরগঞ্জ থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে আছমা আক্তার, তার বাবা আবুল হোসেন (শ্বশুর) ও মা জেসমিন আক্তারকে(শাশুরি) আসামী করে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের হওয়ার পর এখনো কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
নিহতের ছোট বোন আমেনা আক্তার কুমিল্লায় বসবাস করেন, তিনি জানান ইমতিয়াজ হোসেন অপুর ব্যবসায় বিক্রির টাকা ও পরবর্তীতে তাঁর স্বামীর কাছ থেকে ব্যবসার কথা বলে নিহত অপু ও তাঁর স্ত্রী আছমা স্টাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে ২০ লাখ টাকা হাওলাত নেন। ২০ লাখ টাকা ও ব্যবসায় বিক্রির টাকা সব আছমার পরিবারের কাছে রক্ষিত ছিল। টাকা পয়সা থেকে মূলত অশান্তির সূত্রপাত হয়। নিহত অপুর ছোট বোনে আমেনা আক্তারের দাবি টাকা আত্মসাত করার জন্য অপুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে পরিবারটি। তিনি আরো বলেন, অপুর লাশ দরজা ভেঙ্গে বের করা হয়েছে বললেও দরজা ভাঙ্গার কোন আলামত আমরা দেখিনাই। লাশটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে আমাদের জানানো হয়েছিল। কোন ভিডিও বা আলামত আমরা পাইনি। আমাদের দাবি যাতে দ্রুত আসামীদের গ্রেফতার করে প্রকৃত বিষয়টি পুুলিশ উন্মোচন করেন।
নিহত ইমতিয়াজ আহমেদ অপুর ছোট বোন জামাই কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার বাখরাবাদ এলাকার ব্যবসায়ী মঈনুল ইসলাম মামুন। তিনি জানান, বিষয়টি খুবই দু:খজনক। আমরা শুরুতে থানায় মামলা করতে চাইনি। পরে হত্যা মামলা করতে চাইলেও বিভিন্ন চাপে ও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারনে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করতে হয়েছে। আমরা মর্মাহত। এখন পর্যন্ত কোন আসামিও গ্রেফতার হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মনোহরগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মিজানুর রহমান জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি। রিপোর্ট পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে হত্যা না আত্মহত্যা। মামলার আসামিরা পলাতক আছে। তাদের মোবাইল নাম্বারও বন্ধ রয়েছে। আমরা গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছি।