অধ্যাপক ডা. তৃপ্তীশের ‘রোটারি ইন্টারন্যাশনাল – ব্যক্তি থেকে বিশ্ব’ বাংলা ভাষায় রোটারি সম্পর্কে প্রথম বই,
বাংলাকে রোটারি ইন্টারন্যাশনালের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা দাবি
এমদাদুল হক সোহাগ
রোটারি ইন্টারন্যাশনাল সম্পর্কে প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা বই হিসেবে ‘রোটারি ইন্টারন্যাশনাল – ব্যক্তি থেকে বিশ্ব’ প্রকাশ করলেন কুমিল্লার প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ রোটারিয়ান পিপি অধ্যাপক ডা. তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ। তার লেখা ৯৬ পৃষ্ঠার বইটিতে রোটারির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, দর্শন, সংগঠন, কর্মসূচি তুলে ধরা হয়েছে। সেই সাথে বইটির মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে রোটারি ইন্টারন্যাশনালের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
এদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ রোটারি ইন্টারন্যাশনালের সাথে জড়িত থেকে মানব সেবা করে যাচ্ছেন। বাংলায় কোন বই না থাকায় রোটারিয়ানদের একটি বড় অংশ রোটারিকে পুরোপুরি আত্মস্থ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। সেই বিষয়টি অনুভব করে রোটারিয়ান পিপি অধ্যাপক ডাক্তার তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ ব্যক্তি থেকে বিশ্ব বইটি লিখেছেন। বইটি তিনি রোটারি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা পল পি হ্যারিস কে উৎসর্গ করেছেন। বইটি প্রকাশ হওয়ার পর রোটারি অঙ্গণে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। চার রং -এ সাদা ভারী অফসেট কাগজে ৯৬ পৃষ্ঠার বইটিতে ভূমিকা, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল -এর জন্ম ইতিহাস, প্রথম রোটারির ঘটনাবলি, রোটারি কি?, রোটারির সংজ্ঞা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য হতে শুরু করে ৭৬টি বিষয় পাঠকদের জন্য সহজ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যা এর আগে কখনো কেউ চিন্তা করেনি।
পৃথিবীর প্রথম সেবামূলক সংগঠন হচ্ছে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন পেশাজীবীদের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্বের চেতনাকে উজ্জীবিত করে নিজেদের পেশাগত এবং সামাজিক কর্মকান্ড আরো সুচারুরূপে পালন করার মাধ্যমে মানবসেবা করা। কালের আবর্তে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল শুধু রোটারিয়ানদের পেশাগত ও সামাজিক স্বার্থ রক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে ঠিক করে নেয় মূল উদ্দেশ্য তা হলো সেবা। সেই সাথে নির্ধারণ করে মূল নীতিবাক্য ‘স্বার্থের উর্ধ্বে সেবা’। ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে মানব সেবার মূল মন্ত্রে দীক্ষিত হন রোটারিয়ানরা। আন্তর্জাতিক সংগঠন হিসেবে রোটারির দাপ্তরিক ভাষা হচ্ছে ইংরেজী। যার কারনে রোটারির সকল প্রকাশনা ইংরেজিতে হয়ে আসছিলো। ব্যক্তি থেকে বিশ্ব বইটি রোটারিয়ান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ এর করা সুন্দর প্রচ্ছদে রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডির য়ারোয়া বুক কর্ণার থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
বইটির লেখক অধ্যাপক ডাক্তার তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ টাংগাইল জেলার নাগরপুরে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতক এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি সরকারি স্কলারশীপে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের তাসখন্দ থেকে ১৯৯২ সালে কার্ডিওলোজিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ২০০৫ সালে আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলোজি এবং ২০০৭ সালে রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অব এডিনবার্গ থেকে ফেলোশিপ ডিগ্রি অর্জন করেন।
এ ছাড়াও হৃদরোগ চিকিৎসা ও গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলোজি ২০০৬ সালে তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করেন।
ডা. তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ একজন কার্ডিওলোজির অধ্যাপক এবং কুমিল্লার ময়নামতি মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ। বর্তমানে তিনি কুমিল্লা সিডি প্যাথ এন্ড হসপিটালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। তার বহু বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রবন্ধ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এ পর্যন্ত তার লেখা দুটি কাব্যগ্রন্থসহ আটটি বই প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি হৃদরোগ প্রতিরোধ, চিকিৎসা, পুণর্বাসন ও গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান হার্ট কেয়ার ফাউন্ডেশন, কুমিল্লা, বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। যার মাধ্যমে তিনি হৃদরোগ বিষয়ে জনসচেতনতার পাশাপাশি কয়েক হাজার দুস্থ: জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। তিনি পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক সেবামূলক সংগঠন রোটারি ইন্টারন্যাশনাল এর হয়ে দীর্ঘদিন যাবত সেবামূলক কাজের সাথে জড়িত। তিনি ২০০৭-০৮ রোটাবর্ষে রোটারি কাব অব কুমিল্লার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি একজন মাল্টিপলপল হ্যারিস ফেলো ও বেনিফ্যাক্টর এবং মেমোরিয়াল কন্ট্রিবিউটর।
বইয়ের ভূমিকায় অধ্যাপক ডাক্তার তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ লিখেছেন, ” প্রায় দুই দশকের অভিজ্ঞতায় আমার কাছে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে তা হলো প্রথমত: রোটারি শুধুই একটি ক্লাব নয়, রোটারি হচ্ছে একটি জীবন দর্শন। সুতরাং একজন রোটারিয়ানকে অবশ্যই এই দর্শনকে জানতে হবে, ভালোভাবে বুঝতে হবে এবং ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক-পেশাগত জীবনে তার চর্চা করতে হবে।
দ্বিতীয়ত: একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন হিসেবে রোটারির দাপ্তরিক ভাষা হচ্ছে ইংলিশ। যদিও পরবর্তিতে মোট আটটি ভাষা রোটারির দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা পেয়েছে তথাপি পৃথিবীর সপ্তম সর্বাধিক মানুষের ভাষা হিসেবে বাংলা এখনো রোটারির দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা পায়নি। যে কারনে অনেক ভাংলা ভাষাভাষি মানুষের কাছে রোটারি পৌছাতে পারেনি। আর যারা রোটারির সদস্য হয়েছেন ঠিকই তাদের একটা বড় অংশ কিন্তু রোটারিকে পুরোপুরি আত্মস্থ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ফলে আদর্শিক জায়গায় রোটারি বারবার হোচট খাচ্ছে। সেই বাস্তবতায় রোটারির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, দর্শন, সংগঠন, কর্মসূচি এই বিষয়গুলোকে বাংলায় রোটারির সদস্য, সম্ভাব্য সদস্য এবং সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।”
বইটিতে লেখক তার দুটি চাওয়া প্রকাশ করেছেন। প্রথমটি রোটারিয়ানদের কাছে তা হলো, রোটারিয়ানরা যাতে বইটি ভালো করে পড়েন এবং জেনে বুঝে রোটারি করেন।
দ্বিতীয়টি রোটারি ইন্টারন্যাশনালের কাছে তা হলো প্রায় তিনশ মিলিয়ন মানুষের মুখের ভাষা বাংলাকে রোটারির দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবি। একজন বাঙ্গালী হিসাবে এই দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করছি।
লেখক প্রতিবেদককে বলেন, আমার বিশ্বাস বইটি সকল রোটারিয়ানসহ সাধারণ পাঠকদেরও রোটারি সম্পর্কে জানার ক্ষুধা মেটাবে। তিনি আরো বলেন, বইটির মূল্য ২০০টাকা এবং বই বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ পীড়িতদের জন্য ব্যয় করা হবে। বইটি সংগ্রহের জন্য কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাও আজিজুল হক রোটারী সেন্টারের অফিস কক্ষে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করেন।