এবারের অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যখাতসহ কিছু পণ্যের ওপর থেকে যেমন শুল্ক ও করের হার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, কিছু পণ্যের শুল্ক ও কর মওকুফ করা হয়েছে। তেমনি ফিচার ফোনসহ বেশকিছু পণ্যে নতুন শুল্ক ও করভার আরোপ বা বাড়ানো হয়েছে।
জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের উত্থাপিত নতুন অর্থবছরের বাজেটে এসব প্রস্তাব পাস হলে কিছু পণ্যের দাম কমবে এবং বাড়বে।
যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে
মোবাইল ফোন : দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে আমদানি করা মোবাইলের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ করা হয়েছে। তাই যেসব ফোন দেশে উৎপাদন হয় না, সে সবের দাম বাড়তে পারে। এ তালিকায় আইফোন ও স্যামসাংয়ের প্রিমিয়াম ফোন রয়েছে।
মদ-বিয়ার : এ জাতীয় পণ্য আমদানিতে বাজেটে ২০ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হয়েছে। তাই আগামীতে মদ বিয়ারের দাম বাড়তে পারে।
সুগন্ধি : বিদেশি সুগন্ধি আমদানিতে অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হয়েছে। তাই সুগন্ধির দাম বাড়তে পারে।
সিগারেট : সম্পূরক শুল্ক না বাড়ালেও বাজেটে সিগারেটের মূল্যস্তর বাড়ানো হয়। উচ্চ ও অতিউচ্চ (গোল্ডলিফ, বেনসন ও মালবোরো) মানের সিগারেটের প্যাকেট কেনার খরচ বাড়বে। তবে অপরিবর্তিত থাকছে নিম্ন ও মধ্য মানের সিগারেট, বিড়ি, জর্দা ও গুলের দাম।
থিম পার্কের রাইড : এমিউজমেন্ট পার্ক স্থাপনের রাইডসামগ্রীর ওপর ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তাই শিশুদের বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনে খরচ বাড়তে পারে।
বিদেশি সবজি : দেশি চাষীদের সুরক্ষা দিতে মাশরুম, বিদেশি গাজর, শালগম জাতীয় সবজি আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট বসানো হয়েছে। এছাড়া গাজর, মাশরুম, কাঁচামরিচ, টমেটো, কমলা, ক্যাপসিকামের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
প্রক্রিয়াজাত মাংস : তাজা, শুকনা বা হিমায়িত অবস্থায় আমদানি করা মাংসে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।
গাড়ির সুরক্ষা কাচ : গাড়ি ও বিমানের সব ধরনের সুরক্ষা কাচের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। তাই গাড়ি মালিকদের ভবিষ্যতে বেশি খরচ হতে পারে।
টয়লেটের কমোড : সিরামিকের তৈরি বেসিন, প্যাডেস্টাল বেসিন, কমোড বা অন্য যে কোনো ধরনের বাথরুম ফিটিংস আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। তাই এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। অবশ্য লং প্যানকে এ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া আরও যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে সেগুলো হলো শিল্পের লবণ, যানবাহন নিরাপদ রাখার তালাজাতীয় পণ্য, পুনর্ব্যবহারযোগ্য লুব বেস অয়েল, পুনর্ব্যবহারযোগ্য লুব্রিকেন্ট অয়েল, নাট-স্ক্রু (তারকাঁটা জাতীয় পণ্য), প্যারাফিন, মিনারেল অয়েল, সোডিয়াম সালফেট, আমদানি করা রড ও অ্যাঙ্গেল, ধান ও গম ভাঙ্গানোর মেশিন।
যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে
মুড়ি : উৎপাদন পর্যায়ে মুড়ির ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাই প্যাকেটজাত মুড়ির দাম কমতে পারে।
তাজা ফল : ব্যবসায়ী পর্যায়ে ফলের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাই ফলের দাম কমতে পারে।
কৃষি যন্ত্রপাতি : কৃষি যন্ত্রপাতি যেমন থ্রেসার মেশিন, পাওয়ার রিপার, পাওয়ার টিলার, অপারেটেড সিডার, কম্বাইন্ড হারভেস্টর, রোটারি টিলার, উইডার (নিড়ানি) ও উইনোয়ার (ঝাড়াইকল) আমদানিতে আগাম কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাই এসব পণ্যের দাম কমতে পারে।
মাইক্রোবাস : নসিমন ও লেগুনার মতো দুর্ঘটনাপ্রবণ যানবাহন ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে সিসিভেদে মাইক্রোবাস আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে। তাই মাইক্রোবাসের দাম কমতে পারে।
হাইব্রিড গাড়ি : নিম্ন সিসির হাইব্রিড গাড়ির সম্পূরক কমানো হয়েছে। তাই জ্বালানিবান্ধব গাড়ির দাম কমতে পারে।
রড : রড তৈরির প্রধান উপকরণ স্ক্র্যাপ আমদানিতে আগাম কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাছাড়া উৎপাদনকারীদের কর ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। এতে স্থাপনা নির্মাণের প্রধান উপকরণ রডের দাম কিছুটা হলেও কমতে পারে।
সিমেন্ট : রডের মতো সিমেন্ট তৈরির প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকারের অগ্রিম আয়কর ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। তাই সিমেন্টের দামে এর প্রভাব পড়তে পারে।
টাইলস : টাইলস কিউব আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাই টাইলসের দাম কমবে।
মোটরসাইকেল : চার স্ট্রোক বিশিষ্ট বিযুক্ত সিকেডি মপড মোটরসাইকেলের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। তাছাড়া দেশে উৎপাদিত মোটরসাইকেলের কাঁচামালের শুল্ক কমানো হয়েছে। তাই মোটরসাইকেলের দাম কমতে পারে। অবশ্য আমদানি করা (সিবিইউ) মোটরসাইকেল কিনতে আগের মতো অর্থ খরচ করতে হবে।
হোম অ্যাপ্লায়েন্স : দেশে হোম অ্যাপ্লায়েন্সসামগ্রী যেমন ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেন, ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, রাইস কুকার, মাল্টি কুকার ও প্রেসার কুকার উৎপাদনে উপকরণ-যন্ত্রাংশ আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাই আগামীতে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে।
পোলট্রি মুরগি : পোলট্রি মুরগির খাদ্য তৈরির উপকরণ ও ওষুধ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তাই মুরগির খাবার ও ওষুধের দাম কমতে পারে। এর প্রভাবে আগামীতে পোলট্রি মুরগির দামও কমতে পারে।
খেলনা সামগ্রী : দেশে খেলনা উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে ৭ ধরনের যন্ত্রাংশ ও উপকরণে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। তাই দেশে তৈরি খেলনার দাম কমতে পারে।
এছাড়া আরও যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে সেগুলো হচ্ছে- স্টেইনলেস স্টিল, ডাম্পার ট্রাক, শিল্পে ব্যবহৃত অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রপাতি, এলইডি লাইট, শিরীষ কাগজ, শঙ্খ, পেপার কাপ।