কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় জেলা পরিষদ মিলনায়তন থেকে নির্বাচনের কাজে ব্যবহৃত ইভিএম মেশিনের মনিটরসহ চুরি যাওয়া বিভিন্ন মালামাল জব্দ করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে কসবা পৌর শহরের বগাবাড়ি এলাকার মাহফুজুর রহমানের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ৩০টি মনিটরসহ বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের এক অফিস সহকারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন কসবা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী মোহাম্মদ আলী (৪৩), কসবা পৌর শহরের বগাবাড়ি গ্রামের মৃত আলী আজ্জম এর ছেলে মো. মাহফুজুর রহমান (৩৪), কসবা সরকারি কোয়াটারের ৩ নং গোমতী হাউজের ফুল মিয়ার ছেলে মো. মাসুদ (২৩) এবং কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ধজনগর গ্রামের মো. মোখলেছুর রহমানের ছেলে গিয়াস উদ্দিন শিমুল (১৪)। গ্রেপ্তারকৃতদের গতকাল বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
উপজেলা নির্বাচন অফিস, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কসবা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার নির্বাচন শেষে নির্বাচনের কাজে ব্যবহৃত ইভিএম মেশিন, মনিটর. ব্যাটারীসহ বিভিন্ন মামলামাল কসবায় জেলা পরিষদ মিলনায়তনে রাখা হয়েছিল। গত ২৩ জুলাই রাতের কোন এক সময় ওই জেলা পরিষদ মিলনায়তন থেকে মালামাল চুরি হয়। পরদিন ২৪ জুলাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাসিদুল ইসলামসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীগন জেলা পরিষদের বিভিন্ন বক্স তল্লাসী করে জানতে পারেন ইভিএম মেশিনের ৩৯টি মনিটর, ১০টি মনিটর কন্ট্রোল ব্যাটারী, ১০টি ইভিএম মেশিনের ব্যাটারী চুরি হয়েছে।
ওই দিনই থানায় সাধারণ ডাইরী করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নির্বাচনী মালমাল চুরি যাওয়ার ঘটনায় উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাসিদুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামী করে ওই দিনই কসবা থানায় একটি চুরির মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কসবা থানার উপ-পরিদর্শক (এস.আই) মো. এমরান হোসেন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার বিকালে কসবা পৌরশহরের ইমামপাড়ায় অবস্থিত মো. মাহফজুর রহমানের মালিকানাধীন এফ.এম কম্পিউটার প্রশিক্ষন কেন্দ্র থেকে ১৭টি ইভিএমের মনিটর, দুইটি কন্ট্রোল ব্যাটারী ও দুটি ইভিএম মেশিনের ব্যাটারী উদ্ধার করে। এ সময় মাহফুজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রাতে পুলিশ মাহফুজুর রহমানের স্বীকারোক্তিতে মাহফুজুর রহমানের গ্রামের বাড়ি থেকে আরো ১৩টি ইভিএমের মনিটর এবং দুটি কন্ট্রোল ব্যাটারী উদ্ধার করেন।
মাহফজুর রহমানের স্বীকারোক্তিতে মনিটর সরবরাহকারী মো. মাসুদ ও গিয়াস উদ্দিন শিমুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই দিন রাতেই তাদের স্বীকারোক্তিতে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কসবা থানার উপপরিদর্শক (এস.আই) মো. ইমরান হোসেন বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া মো. মাহফুজুর রহমান, মো. মাসুদ ও গিয়াস উদ্দিন শিমুল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট্র তিন এর আদালতের বিচারক রাকিবুল হাসান রকি এর আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, নির্বাচনের কাজে ব্যবহৃত মালামাল চুরির ঘটনায় থানায় মামলা হওয়ার পর থেকে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাহফুজুরের এফ.এম কম্পিউটার প্রশিক্ষন কেন্দ্র থেকে ১৭টি এবং বাড়ি থকে ১৩টি মনিটর এবং ছয়টি ব্যাটারী উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
কসবা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাসিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের কাজে যাবতীয় মালামাল জেলা পরিষদ মিলনায়তনে রাখা হয়েছিল। গত ২৩ জুলাই রাতের আধারে ইভিএম মেশিনের ৩৯টি মনিটর, ১০টি মনিটর কন্ট্রোল ব্যাটারী, ১০টি ইভিএম মেশিনের ব্যাটারী চুরি হয়। পরদিন উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশে অজ্ঞাত আসামী করে কসবা থানায় একটি চুরির মামলা দায়ের করি।