কারাবন্দিদের করোনামুক্ত রাখতে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
নতুন কোনো আসামি কারাগারে প্রবেশের পরই তাকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। কারও জ্বর, সর্দি, কাশি থাকলে প্রথমেই তার করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। আলাদা সেলে রেখে ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
প্রতিটি কারাগারে তৈরি করা হয়েছে মেডিকেল টিম ও আইসোলেশন ওয়ার্ড। ঢাকা কেন্দ্রীয়সহ দেশের সব কারাগারে বন্দিদের করোনামুক্ত রাখতে এ ধরনের বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
কারা প্রশাসন প্রত্যেক বন্দির জন্য তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি মাস্ক, স্যানিটাইজার, হ্যান্ডগ্লাভস, স্প্রে মেশিন, থার্মোমিটার ও হ্যান্ডওয়াশ সরবরাহ করছে।
সতর্কতার কারণে কারাবন্দিদের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে না বলে জানায় কারা কর্তৃপক্ষ।
করোনার সংক্রমণ শুরুর পর আদালতের নির্দেশে এ পর্যন্ত প্রায় ১৯ হাজার নতুন আসামি দেশের বিভিন্ন কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন আসামি রয়েছেন ৭২ হাজারের মতো। ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে ৩৫ হাজার বন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়।
কেন্দ্রীয় কারা অধিদফতরের মহাপরিদর্শক (আইজি-প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মোস্তফা পাশা যুগান্তরকে বলেন, আমি এক কঠোর অনুশাসনের মধ্যে কারাগারে বন্দিদের রেখেছি। একজনের কাছ থেকে আরেকজন যেন আক্রান্ত না হয় সেজন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। যে কারণে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের প্রায় সব ক’টি কারাগারে কোনো সংক্রমণ নেই। জামিন না পাওয়া নতুন তিনজন বন্দি আক্রান্ত হন ঢাকার বাইরের কারাগারে। তবে তারাও সুস্থ। তবে তাদের সংস্পর্শে আসার কারণে কারাগারের বেশ কিছু প্রহরী করোনা আক্রান্ত হন বলে জানান তিনি।
ব্রিগেডিয়ার পাশা বলেন, আমি কারাগারে ঢোকার পথে ‘ফুটবাথ’ চালু করেছি, যাতে করে নতুন আসা আসামিরা পা ভিজিয়ে ভেতরে ঢুকতে পারে। করোনা মহামারী দেখা দিলে ২৪ মার্চ থেকে আসামিদের আদালতে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে বন্দিদের স্বজনরা দেখা করতে পারছেন না। এ কারণে বন্দিরা পাঁচ মিনিট করে কাছের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন।
তিনি জানান, কক্সবাজার ছাড়া সব কারাগারেই করোনা উপসর্গ দেখা দিলে যে কোনো বন্দিকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা আছে। দেশে বর্তমানে ৬৮টি কারাগার রয়েছে। গত তিন মাসে ১২৮ জন কারারক্ষী করোনায় আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৭৮ জন।
কারা মহাপরিদর্শক আরও জানান, ২৫ এপ্রিল পেরুর একটি কারাগারে দাঙ্গায় ৯ জন বন্দি নিহত হয় এবং এ ঘটনায় ৬৭ জন কারারক্ষী আহত হয়। ভারতের কলকাতার দমদম কেন্দ্রীয় কারাগারে করোনা নিয়ে উদ্বিগ্ন বন্দিদের সঙ্গে কারা কর্মচারীদের সংঘর্ষে এক কয়েদির মৃত্যু হয়। ৩০ মার্চ থাইল্যান্ডের একটি কারাগারে করোনাভাইরাস আতঙ্কে বড় ধরনের দাঙ্গা হয়।
২৩ মার্চ কলম্বিয়ার বোগোটার একটি কারাগারে করোনাভাইরাস আতঙ্কে সৃষ্ট দাঙ্গায় অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছিল।
কিন্তু বাংলাদেশের ৬৮টি কারাগারে করোনার কারণে এখন পর্যন্ত বন্দিদের মধ্যে কোনো উত্তেজনা, আতঙ্ক বা দাঙ্গার ঘটনা ঘটেনি এটা একমাত্র সম্ভব হয়েছে প্রথম থেকে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়ার কারণে। বন্দিদের করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ সাময়িকভাবে বন্ধ।
তবে বন্দিরা যাতে মানসিকভাবে বিচলিত ও হতাশাগ্রস্ত না হয় তার জন্য পরিবারের সঙ্গে কথা বলার জন্য স্থাপন করা হয়েছে টেলিফোন বুথ। স্থানীয় কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বন্দিদের কাউন্সেলিংও করা হচ্ছে, যাতে তারা বিপদগ্রস্ত না হয়।