এমদাদুল হক সোহাগ:
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি বার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধন করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন, ১৫ আগষ্টের মাষ্টার মাইন্ড ছিলেন সেনাপতি জিয়াউর রহমান, ২১ আগষ্টের ছিলেন তারেক রহমান। এখন বাংলাদেশের মহাদুর্যোগের নাম বিএনপি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল আরো বলেন মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে জনগনের মন ভুলানো যাবে না, জনগন বুঝে গেছে আপনারা বিছানা-বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়েছেন, আর দাঁড়াতে পারবেন না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ নিশ্ব নেতা, বাংলাদেশকে তিনি বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাড় করিয়েছেন, অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়েছেন, উন্নয়নশীল দেশে পরিনত করেছেন, এখন তারা ষড়যন্ত্র করে পরিবেশ নষ্ট করতে চায়।
শনিবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে কুমিল্লার টাউনহল মাঠে মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষক সম্মেলনে উদ্বোধকের বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। খেলা হবে, রাজপথে খেলা হবে। অপশক্তির বিরুদ্ধে খেলা হবে। বাংলাদেশের মহাদুর্যোগের নাম বিএনপি। এই দুর্যোগের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।
(প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি) শেখ হাসিনা কোনো দিন হারেননি, যদি শেখ হাসিনা হেরে যান, তাহলে আপনারা হেরে যাবেন।’
লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যে এদেশ থেকে মুচলেকা দিয়ে চলে গেছে তাকে এখন হিরো সাজানোর চেষ্টা চলছে। কোনো লাভ নেই।’ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান (ক্ষমতায় থাকাকালে) বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মাফ করেছেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, তিনি কেন এমনটি করলেন এই প্রশ্নের উত্তর বিএনপি দিতে পারবে না।
‘শেখ হাসিনার ওপর হামলা হয়েছে। তিনি সবার দোয়ায় আল্লাহর রহমতে বেঁচে আছেন। এই বিএনপিকে আমরা কখনোই ক্ষমা করবো না।’
আওয়ামী লীগের পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজ কুমিল্লার সুশৃঙ্খল সম্মেলন প্রমাণ করেছে আওয়ামী লীগের গণজোয়ার শুরু হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সকল অতিথিদের নিয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, বিশেষ বক্তা ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, বক্তব্য রাখেন,
দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর, কুমিল্লা ৭ আসনের সংসদ সদস্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত, জেলা ও মহানগরের নেতারা। সমেলনে প্রায় ৫ হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেট উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনকে ঘিরে এক পর্যায়ে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী টাউন হল মাঠের বাইরের সড়কে অবস্থান নেয়।
এদিকে ওবায়দুল কাদের এমপির বক্তব্য চলা কালে মহানগর আওয়ামীলীগের সম্মেলনে প্রবেশ করতে চান সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও আরো কয়েকজন নেতাকর্মী। কিন্তু টাউনহল মাঠের বাইরে থাকা নেতাকর্মীদের বাঁধার কারনে তারা তারা ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। পরে তারা ফিলে গিয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে পুনরায় পূবালী চত্বরের দিকে অগ্রসর এবং হামলা চালানোর চেষ্টা করেন। এতে এমপি বাহার সমর্থিত নেতাকর্মীদের তীব্র প্রতিরোধের কারনে পিছু হটতে বাধ্য হয় সীমা গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এসময় অসংখ্য ককটেল বিস্ফোরণ হয়। তবে এ ঘটনায় গুরতর আহত বা কোন প্রাণহানি হয়নি। সম্মেলন মাঠের বাইরের এই বিচ্ছিন্ন ঘটনার কোন প্রভাবই সম্মেলনকে প্রভাবিত করতে পারেনি।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি সভাপতিত্ব করেন। এসময় কাউন্সিলরদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে ও উপস্থিত সকল নেতাকর্মীর সমর্থনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি কে সভাপতি এবং কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরফানুল হক রিফাতকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন। কিছু দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা।