কুমিল্লা ডিবি পুলিশের অভিযানে দুর্ধর্ষ চার ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের বাড়ি কুমিল্লা জেলার বাইরে। ব্যাংক বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ব্যক্তির টাকা ওঠানোর দৃশ্য আড়াল থেকে লক্ষ্য করত ওরা। তারপর গতিবিধি অনুসরণ করে এক পর্যায়ে ওরা ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে মারধর করে সব টাকা লুটে নিত।
ঢাকা, সাভার ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গত মঙ্গলবার আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ওই চার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল বুধবার সকালে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
গ্রেফতার ডাকাতরা হল শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার ধাতুয়া গ্রামের মৃত সাইদুর রহমানের ছেলে মো. সুমন মিয়া (৪৫), ভোলার তজুমুদ্দিন উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের শাহজাহানে ছেলে মো. ইউসুফ (৫২), জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার মানিকপাড়া গ্রামের মৃত আনারুলের ছেলে মো. আপেল (৩৩) এবং যশোর কোতোয়ালী থানাধীন জমজমপুর গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে মো. মনির (৪৫)।
জানা যায়, গত ১২ আগস্ট মুরাদনগরে ইসলামী ব্যাংক কোম্পানীগঞ্জ শাখা থেকে মো. হানিফ শামীম নামে এক ব্যক্তি ১২ লাখ টাকা উঠিয়ে পাশের উপজেলা দেবিদ্বার ইসলামী ব্যাংক শাখায় জমা দিতে সিএনজি অটোরিকশাযোগে রওনা হন। পরে হানিফ শামীম কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের দেবিদ্বার পৌরসভা এলাকায় মহিলা কলেজের সামনে পৌঁছলে মেরুন রঙের একটি প্রাইভেটকার এসে অটোরিকশার গতিরোধ করে। হাতে লাঠি ও হ্যান্ডকাফ এবং কোমরে পিস্তল গোঁজা তিন ব্যক্তি প্রাইভেটকার থেকে নেমে এসে ডিবি পুলিশের সদস্য পরিচয় দিয়ে শামীমকে জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়। প্রাইভেটকারে ওরা গামছা দিয়ে শামীমের হাত-পা, চোখ-মুখ বেঁধে ফেলে কিল, ঘুষি ও লাঠি দিয়ে মারধর করে। একসময় মোবাইল ফোনের সিমকার্ড খুলে নিয়ে হানিফ শামীমকে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নাজিরাবাজার এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে যায়।
টাকা তোলা অনুসরণ করে ডিবি পরিচয়ে ছিনতাইএই ঘটনার পর ভুক্তভোগী হানিফ শামীম দেবিদ্বার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, ওই মামলার সূত্র ধরে ভুয়া ডিবি পুলিশচক্রটিকে গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা শাখাকে নির্দেশ দেয়া হয়। মঙ্গলবার ঢাকা, সাভার ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই ঘটনার সাথে জড়িত চার ডাকাত সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে নগদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, কভারসহ খেলনা পিস্তল, হ্যান্ডকাফ, ওয়াকিটকি, ডিবি পুলিশেরর কোট, লাঠি ও মেরুন রঙের প্রাইভেটকারটি জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা স্বীকার করে, কোম্পানিগঞ্জে ব্যাংক থেকে হানিফ শামীমের টাকা তোলার বিষয়টি আড়াল থেকে লক্ষ্য করে তাদেরই এক সদস্য। তারপর তাকে অনুসরণ করে টাকা ছিনিয়ে নেয়া হয়।
ওই চার ডাকাত আরো স্বীকার করে যে, ওই ঘটনার পর গত ২১ সেপ্টেম্বর তারা কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর থেকে একই কায়দায় একজন বিকাশ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ২১ জুলাই কুমিল্লার সদর দক্ষিণ পদুয়ার বাজার এলাকা থেকে তৈয়ব হোসেন নামে আরেক ব্যক্তির কাছ থেকে ৫ লাখ ৮ হাজার টাকা ছিনতাই করে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আজিম উল আহসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) শাহরিয়ার মোহাম্মদ মিয়াজি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমন প্রমুখ।