আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আধুনিক দুর্নীতি প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন কাঠামোর মূল দুর্বলতা এবং ফাঁক-ফোকরগুলো অবশ্যই চিহ্নিত করতে হবে। পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধে নতুন ও উদ্ভাবনী পন্থা অবলম্বন করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাতিসংঘ সিস্টেমের মধ্যে একটি বিস্তৃত সমন্বিত পদ্ধতির প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) রাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে দুর্নীতি বিরোধী সাধারণ আলোচনায় সম্প্রচারিত প্রি-রেকর্ডেড ভিডিও বক্তব্যে এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। জাতিসংঘের সদরদপ্তর নিউইয়র্কে তিনদিনব্যাপী (২-৪ জুন) দুর্নীতি বিরোধী এ আলোচনা চলছে।
মন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সালের এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং আমাদের টেকসই ভবিষ্যতের জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য নারী ও যুবক-যুবতীসহ সকল স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে পুরো সমাজে একটি সমন্বিত পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, অবৈধ আর্থিক প্রবাহসমূহ রোধ এবং বাজেয়াপ্ত সম্পদগুলো পুনরুদ্ধার ও ফিরিয়ে আনা গেলে তা কার্যকর সম্পদ সংস্থান এবং এসডিজি বাস্তবায়নে অবদান রাখতে পারে। কিন্তু অতীতে হতাশার সাথে পর্যবেক্ষণ করা গেছে যে, জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের (ইউএনসিএসি) সুস্পষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও সম্পদ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াগুলোতে বাড়তি কিছু বাধা রয়েছে। এসব বাধা দূর হওয়া উচিত। প্রয়োজনে এই কনভেনশনের অধীনে সম্পদ পুনরুদ্ধার বিষয়ক একটি অতিরিক্ত প্রোটোকলের সম্ভাবনা পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে।
ইউএনসিএসি’র কার্যকর বাস্তবায়নের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে আনিসুল হক বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ, ফৌজদারি আইন, দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য অধিকার, হুইসেল ব্লোয়ার সুরক্ষা, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধ, ফৌজদারি বিষয়গুলোতে পারস্পরিক আইনি সহায়তা, বহিঃসমর্পন, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট ও ট্রান্সন্যাশনাল অপরাধ প্রতিরোধ সহ প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সরকার জাতীয়ভাবে আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছে।
এছাড়া বাংলাদেশ দুর্নীতি প্রতিরোধে সুশাসন ও জনসচেতনতার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও সম্প্রদায় ভিত্তিক বিভিন্ন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছি, যার মধ্যে রয়েছে আন্তঃসংস্থা সমন্বয় বর্ধিতকরণ, ব্যাংকিং ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উন্নততর নিয়ন্ত্রণমূলক ও তদারকি কাঠামো, বিভিন্ন স্তরে জাতীয় দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সততা ও স্বচ্ছতা ইউনিট, স্কুলে সততা স্টোর, সরকারি কর্মকর্তাদের গণশুনানির ব্যবস্থা ইত্যাদি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মচারী এবং ব্যবসায়ী নেতাদেরকে দুর্নীতি সম্পর্কিত তদন্ত এবং বিচারের মুখোমুখি করে সমাজে দুর্নীতি দমনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিভিন্ন স্তরে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে আলোকপাত করতে সরকার সুশীল সমাজ ও মিডিয়াকে অংশীদার হিসাবে বিবেচনা করছে।